ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে করোনাসহ সার্বিক চিকিৎসা সেবায় অব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২৫ জুন ২০২০

চট্টগ্রামে করোনাসহ সার্বিক চিকিৎসা সেবায় অব্যবস্থাপনা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সরকারী ও বেসরকারী খাতের চিকিৎসাসেবায় চরম অব্যবস্থাপনা ও হয়রানি বিরাজ করছে। এমনিতেই জটিল কোন রোগের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি বর্তমানে নতুন করে ভর করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে সংক্রমিত ও উপসর্গ নিয়ে রোগীদের দৌড়ঝাঁপ এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে অব্যাহত রয়েছে। তেমনিভাবে করোনা ছাড়া অন্য কোন রোগে আক্রান্তরাও চরম হয়রানির শিকার। বিশেষ করে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো রোগী গেলেই করোনামুক্ত সার্টিফিকেট চেয়ে থাকে। সার্টিফিকেট দেখাতে পারলে ভর্তি করা হচ্ছে, নচেত ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে চলছে চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে দেড় শতাধিক। এরমধ্যে অভিজ্ঞ চিকিৎসকও রয়েছেন ৯ জন। এককভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যায় রয়েছেন আইনজীবী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এমন দুঃসময়ে ক্ষমতাসীন সরকারী দলের দুই গ্রুপের নেতা কর্মীদের প্রকাশ্য গ্রুপিং সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারীরা এক গ্রুপে বিভক্ত। আর সিটি মেয়রের পুরনো গ্রুপটি আগের মতোই সক্রিয়। করোনা রোগের চিকিৎসা নিয়ে এ দুই গ্রুপে স্থানীয় শীর্ষ নেতারা দুই ভাগে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে কোন ইতিবাচক ফল বয়ে আসছে না। এ অবস্থায় বিরোধী বিএনপি সমর্থিত ড্যাব (ডক্টর এ্যাসোসিয়েসন অব বাংলাদেশ) পক্ষে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে করোনা রোগীর আইসোলেশন সেন্টার খোলা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান এ নগরীতে করোনা রোগীদের মাঝেও দল বিভক্তির ছোঁয়া লাগতে যাচ্ছে। এদিকে, সরকারী চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নিয়ে যে উন্নতির কথা কর্তৃপক্ষীয় মাধ্যমে প্রচার করা হয়ে থাকে। তা বাস্তবে নামমাত্র। এ দুটি সরকারী হাসপাতাল সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম ভরসার স্থল। প্রতিদিন মহানগরী ও মহানগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে করোনা ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত সাধারণ রোগীরা এই দুটি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। কিন্তু সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, এসব রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় চলছে বেহাল দশা। হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা কেমন জানি বিরক্ত মনোভাব নিয়ে অবস্থান করছেন। তেমনিভাবে রোগীদের স্বজনরাও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা লাভের আশায় তৎপর থাকেন। এ দুইয়ের মাঝে কোন ধরনের সমন্বয় না থাকায় রোগী নিয়ে স্বজনরা এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে, আবার হাসপাতালের এ ফ্লোর থেকে ওই ফ্লোরে দৌড়ঝাঁপ করে বিরক্ত ও ক্লান্ত হচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণও করছেন, যা চরম দুঃখজনক। অপরদিকে, সরকারী-বেসরকারী বারটি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য বাধ্যতামূলক করে দিলেও এসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানার ক্ষেত্রে বড় ধরনের উদাসীনতা ও বিরক্তি মনোভাব প্রদর্শন করে চলেছে। যে কারণে তিন থেকে চারটি ছাড়া বাকি বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে করোনা সংক্রমিত রোগী নেই বললেই চলে। এতে করে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর আইসিইউ বেড খালিই থাকছে। একটি হাসপাতাল তাদের অক্সিজেন ব্যবস্থা নষ্ট বলে গুরুতর কোন রোগী ভর্তি করছে না। আবার আরেকটি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স নেই বলে রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারী দলের স্থানীয় নেতাদের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইলোশেন সেন্টার খোলার ঘোষণা প্রচার হচ্ছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদানের বিষয়টিও দেখা যাচ্ছে। অথচ, করোনা সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অক্সিজেন দেয়ার বিষয়টি। এ অক্সিজেন সরবরাহের বিষয় নিয়ে সরকারী হাসপাতালগুলোতে এ পর্যন্ত কোন উন্নতি ঘটেনি। বেসরকারী পর্যায় থেকে সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারী হাসপাতালে হাইফ্লো অক্সিজেন নেজাল ক্যানোলা দান করা হয়েছে। বেসরকারী একটি শিল্পগ্রুপ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রথম এ ধরনের হাইফ্লো অক্সিজেন নেজাল ক্যানোলা প্রদান করে।
×