ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে চিকিৎসকসহ তিনজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৪৮০

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৩ জুন ২০২০

চট্টগ্রামে চিকিৎসকসহ তিনজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৪৮০

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এক চিকিৎসকসহ আরও তিনজন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা মোট ১৪৪। রবিবার রাত পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হন ১৯২ জন। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৬ হাজার ৪৮০। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ। এদিকে, অত্যধিক রোগীর চাপে হিমশিম অবস্থা হাসপাতালগুলোতে। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অপ্রতুলতায় রোগী নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় স্বজনরা। হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম হাতে নিয়ে রোগীর পরিবারের সদস্যদের ছোটাছুটি এখন নিত্যদিনের চিত্র। সোমবার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, রবিবার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৪৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এটিই একদিনে চট্টগ্রামে সর্বাধিক নমুনা পরীক্ষা। এতে ১৯২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রামে এখন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪৪ জন। তার মধ্যে রবিবার মারা যান ৩ জন। তবে এদিন ৫৯ জনসহ এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৯৯ জন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, রবিবার শনাক্ত ১৯২ জনের মধ্যে ১২১ জন মহানগর এলাকার এবং বাকি ৭১ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ল্যাবে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৭ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ৩০৩ নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জন, ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডিতে (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস) ২৭০ নমুনা পরীক্ষায় ৪৭, সিভাসুতে (চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি) ১০০টি নমুনা পরীক্ষা ৯ জন এবং বেসরকারী ইম্পেরিয়াল হসপিটালে ১৮৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এছাড়া কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের একজনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। মহানগরের বাইরে উপজেলা পর্যায়ে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ জন ফটিকছড়ির, ১১ জন আনোয়ারা, ৮ জন পটিয়ার, ৭ জন রাউজানের, ৭ জন সন্দ্বীপের, ৫ জন হাটহাজারীর, ৫ জন চন্দনাইশের, ৪ জন সীতাকু-ে এবং ২ জন করে সাতকানিয়া ও বাঁশখালীর বাসিন্দা। করোনায় চিকিৎসকের মৃত্যু ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চট্টগ্রামের প্রবীণ চিকিৎসক ডাঃ ললিত কুমার দত্ত। তিনি ছিলেন একজন নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ। রবিবার রাতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৭৭ বছর বয়সী এই চিকিৎসক। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ডাঃ ললিত কুমার দত্ত। অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে আইসিইউতে মারা যান তিনি। জনপ্রিয় এই চিকিৎসকের মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। করোনামুক্ত হলেন সিএমপি কমিশনার ॥ সুস্থ হয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মোঃ মাহাবুবর রহমান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেন তিনি। রবিবার নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ তাকে আরও কিছুদিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। করোনা জয়ী চট্টগ্রামের এই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা এখন প্লাজমা দানে আগ্রহী। সিএমপি কমিশনার মোঃ মাহাবুবর রহমান জানান, শীঘ্রই তিনি পুরোদমে কাজে ফিরতে চান। অসুস্থ থাকলেও এতদিন তিনি বাসায় থেকেই দাফতরিক কাজের খোঁজখবর নেয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। গত ৯ জুন করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর থেকে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সুস্থ হয়েছেন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও পালনের অনুরোধ জানান করোনাজয়ী এই পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে রোগীর চাপ বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছাড়াও অন্যান্য রোগী ও স্বজনরা পড়েছেন দুর্ভোগে। এমনিতেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্র্মী সঙ্কট প্রকট। এর মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে আতঙ্ক। কোন রোগী হাসপাতালে এলে কোভিড না নন-কোভিড তা নিয়েও থাকছে সংশয়। করোনা নিয়ে ব্যস্ততায় জরুরী বিভাগে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কমেছে। ফলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা রোগীর চিকিৎসায় স্বজনদেরই ছুটতে হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ট্রলি নিয়ে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এটা এখন প্রতিদিনকার চিত্র।
×