ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় লক্ষাধিক তাঁতি ও শ্রমিক বেকার

শাহজাদপুরে করোনায় লক্ষাধিক তাঁত বন্ধ

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২২ জুন ২০২০

শাহজাদপুরে করোনায় লক্ষাধিক তাঁত বন্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, শাহজাদপুর ২১ জুন ॥ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের তাঁত শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে লক্ষাধিক হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুম বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা ভাইরাসের ক্রান্তিকালে দীর্ঘ সময় এলাকার তাঁত কারখানায় উৎপাদন বন্ধ, উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটসহ পাশর্^বর্তী সোহাগপুর, এনায়েতপুর, আতাইকুলা হাটে তাঁতবস্ত্রের বেচাকেনা বন্ধ ও বিশেষ করে পরিবহনজনিত কারণে সৃষ্ট তীব্র কাঁচামাল সঙ্কটের ফলে গত প্রায় আড়াই মাসে শাহজাদপুরে প্রায় লক্ষাধিক তাঁত মালিক ও শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে। শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছাসহ তাঁতবস্ত্র দেশে তাঁতবস্ত্রের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ পূরণ করলেও তাঁতশিল্পকে রক্ষায় এখনও পর্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ কুঁটিরশিল্প ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প ভয়াবহ বিপর্যয়ে রয়েছে। ফলে এলাকার লাখ লাখ তাঁত মালিক ও শ্রমিকেরা তাদের জীবন জীবিকার প্রশ্নে চোখেমুখে রীতিমতো সর্ষের ফুল দেখছে। এদিকে তাঁতশিল্পের উন্নয়ন ও প্রান্তিক তাঁতিদের ভাগ্যোন্নয়নে শাহজাদপুরের বিসিক বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় বহু আগে সরকারীভাবে তাঁত বোর্ড স্থাপন করা হলেও এলাকার তাঁতিদের কোনরূপ কল্যাণে না আসায় তা পুরোপুরি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞমহলের মতে, ‘ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের ভয়াবহ বিপর্যয় রোধে ও তাঁতিদের বাঁচাতে অনতিবিলম্বে সরকারীভাবে পুঁজি সঙ্কটে বেকার হয়ে পড়া প্রান্তিক তাঁতিদের মাঝে পাওয়ারলুম প্রতি ১ লাখ ও হ্যান্ডলুম প্রতি ৫০ হাজার টাকা সুদমুক্ত ঋণ প্রদান, তাঁতবোর্ড বিলুপ্ত করে তাঁতি কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সূতার বাজার সিন্ডিকেট মুক্তকরণ, তাঁত গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, তাঁতিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, ভারত থেকে আনা সব কাউন্টের সূতা ও কাঁচামালের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত এবং বিদেশে তাঁতবস্ত্র রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তাঁতশিল্প ফিরে পাবে তার নিজস্ব অতীত গৌরব ও ঐতিহ্য।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নে প্রায় ১ লাখ দেড় লক্ষাধিক তাঁত রয়েছে। তন্মধ্যে প্রায় ১ লক্ষাধিক পাওয়ারলুম ও প্রায় ৫০ হাজার হ্যান্ডলুম রয়েছে। লকডাউন ঘোষিত সময়কালে শাহজাদপুরের সকল তাঁত কারখানা বন্ধ ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে এলাকার তাঁতিরা কোনরূপ তাঁতবস্ত্র উৎপাদন বা উৎপাদিত বস্ত্র হাট বাজারে বিক্রি করতে পারেনি। এ সময় বাধ্য হয়ে তাঁত মালিকরা অনেকেই পুঁজি ভেঙ্গে ফেলেছেন আবার অনেকেই ঋণপানে জর্জরিত হয়েছেন। লকডাউন তুলে নেয়ার পর তাঁত মালিকরা তাদের তাঁত কারখানা চালু করার অনুমতি পেলেও পরবর্তীতে পুঁজি না থাকায় তা চালু করা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ ধারদেনা করে তাঁত কারখানায় বস্ত্র উৎপাদনের চেষ্টা করলেও উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র হাটে বিক্রি করতে না পেরে পুনরায় তাঁত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
×