ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ১০ টাকার চাল বিতরণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ২২:০১, ১৭ জুন ২০২০

যশোরে ১০ টাকার চাল বিতরণে অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারন ইউনিয়নে হতদরিদ্রের ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় মৃত ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থানরত এবং বেওয়ারিশ নাম দিয়ে ডিলার চাল উঠিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকে কার্ডধারী হয়েও পাচ্ছেন না এই চাল। উপজেলার নাভারন ইউনিয়ের এক নম্বর ওয়ার্ডের (উত্তর দেউলী-কলাগাছি) নাসির উদ্দিনের ডিলার পয়েন্টে এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন কলাগাছি গ্রামের নেদু সরদারের ছেলে ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। এদিকে অনুসন্ধানে করতে গিয়ে অনেক কার্ডধারীর নাম-ঠিকানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অস্তিত্বহীন এসব কার্ডে অন্যের ছবি লাগিয়ে টানা চার বছর ধরে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিকদের ম্যানেজ করে চাল আত্মসাত করেছেন এই ডিলার। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, কয়েকটি কার্ডে মৃত ব্যক্তির অনুকূলে বিভিন্ন সময় ডিলার নিজে ওই চাল উঠিয়ে নিচ্ছেন। সেই চাল মৃতব্যক্তিদের পরিবারের কেউ না পাওয়াটা নীতিমালা পরিপন্থী। ঝিকরগাছা উপজেলার সরকারী ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তালিকায় এই ডিলারের আওতায় ৫৬৩ জনের নাম রয়েছে। সবার নামের পাশে মোবাইল ফোন নম্বর থাকার কথা থাকলেও প্রায় অর্ধেকের বেশি উপকারভোগীর নামের পাশে তা নেই। দেখা গেছে, ৪১১২৩৫৯৯ অসম্পূর্ণ আইডি নম্বর ব্যবহার হয়েছে ৪২ জনের নামের পাশে। আবার ৪১১২৩৫৯৯০ আইডি নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ৯৩ জন উপকারভোগীর নামের পাশে। তালিকায় নাম থাকা ২১৬ নম্বর কার্ডের প্রবাসী মিলন হোসেনের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামীর নামে কার্ড থাকার বিষয়টি তিনি জানেন না। কথা হয় ১৬৪৫ নম্বর কার্ডের মালিক বজলুর রহমান, ১৫৫২ নম্বর কার্ডের দুলাল দাস ও ১৫৩২ নম্বর কার্ডের আব্দুল জব্বারের ছেলে সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তারা জানান, বর্তমানে তারা কেউ চাল পান না। বছর তিনেক আগে দু’বার চাল পেয়েছিলেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সবশেষে ঈদের আগে ১৭ মে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ চালানে অনেকেই চাল পাননি। ডিলার পয়েন্টে চাল না থাকায় একাধিক উপকারভোগী খালি হাতেই ফিরেছেন। এ সময় ডিলার নাসির উদ্দিন বলেছেন, খাদ্যগুদাম থেকে তাকে নয় বস্তা চাল কম দেয়া হয়েছে। তাই চাল শেষ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, এর আগেরবারও ১৪ জন উপকারভোগীকে চাল দেননি ডিলার নাসির। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে প্রতিজনকে তিন শ’ টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেয়া হয়। ১৪ বস্তা চাল সুবিধাভোগীরা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, পাঁচ বস্তা চাল ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে দিয়েছি। পাঁচ বস্তা দিয়েছি হারুণ ভাইকে। বাকি চার বস্তা অন্য নেতাদের দিতে হয়েছে। ডিলার নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ৫৬৩ জনের নামের তালিকা থাকলেও ৫৪৪ কার্ডের চাল আমি পাই। একাধিক জনের পাশে এক আইডির ব্যাপারে তিনি বলেন, ওটা পেনড্রাইভের ভুল। তবে কেউ যদি বলে আমি চাল পাইনি তবে আমার নিজের পকেট থেকে চাল দেব। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী মজুমদার বলেন, বিষয়টি শুনেছি। অনিয়ম থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×