ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা রুখতে এ্যান্টি প্যারাসাইট ওষুধ ইভারমেকটিন

প্রকাশিত: ০১:১৫, ৭ জুন ২০২০

করোনা রুখতে এ্যান্টি প্যারাসাইট ওষুধ ইভারমেকটিন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের এখনও পর্যন্ত কোন টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই এই রোগের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়া, ইবোলা ও এইডসের মতো রোগের জন্য তৈরি টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন করোনার বিরুদ্ধে অপেক্ষা কম কার্যকর। এছাড়া এর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এমনকি করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কতটা নিরাপদ ও কার্যকর সেটি এখনও প্রমাণিত নয়। খবর ওয়ার্ল্ড হেলথ ডট নেটের। আবার সামনের দিনগুলোর বিশ্বের বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মহামারী বিশেষজ্ঞরা। তাদের একজন হচ্ছেন মার্কিন মহামারী বিশেষজ্ঞ ও হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মার্ক লিপিসিটচ। তিনি বলেছেন, সামনের বছরগুলোতে বিশ্বের প্রায় ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে। এর অর্থ এই নয় যে, সবাই গুরুতর অসুস্থ হবে। অনেকে হয়তো মৃদু আক্রান্ত হবে বা কারও কারও ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ দেখা যাবে না। করোনার ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে যে, এটা বিবর্তন ঘটে, তাই ভ্যাকসিন প্রতিনিয়ত ডেভেলপ করতে হতে পারে। ইয়েল স্কুল অব পাবলিক হেলথের একজন এ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর জেসন শোয়ার্টজ বলেন, যদি আমরা সমাধানের জন্য আমাদের সব আশা একটি ভ্যাকসিনের ওপর রাখি, তাহলে আমরা ঝামেলায় পড়ব। কেননা করোনার বিরুদ্ধে সফল হবে এমন একটি ভ্যাকসিন তৈরিতে দীর্ঘ সময় লাগবে। আবার সেটি নিরাপদ ও কার্যকর হবে কিনা সেটিও নিশ্চিত নয়। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফেকচারার্স এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েশন্স (আইএফপিএমএ)-এর পরিচালক থমাস কুয়েনি বলেছেন, এই ভাইরাসকে রুখতে বিশ্বের জন্য ১৫০০ কোটি ডোজ টিকা লাগবে, যা একটি লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ। তাই যতদিন পর্যন্ত না সফল একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার, পরীক্ষা ও বণ্টন করা হবে, ততদিন পর্যন্ত বিশ্বকে পরোক্ষভাবে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এমনটা করলে করোনার বৈশ্বিক বিস্তার দেরি হবে কিন্তু তা রুখে দেয়া সম্ভব হবে না। তবে এ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ড্রাগ ইভারমেকটিন ব্যবস্থাপনা এবং এটি একটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন হিসেবে ব্যবহার করলে করোনাভাইরাস ফ্লুর মতোই দুর্বল হয়ে পড়বে। এর ফলে ব্যবসা ও সমাজ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারবে। ইভারমেকটিন একটি এ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ড্রাগ, যেটি ভাইরাসহ বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় এজেন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইভারমেকটিন ব্যবহারে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেল কালচারে করোনার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য মাত্রা কমাতে সক্ষম। ইভারমেকটিনের কার্যকারিতা খতিয়ে দেখতে বলিভিয়ার ত্রিনিদাদ শহরের বাসিন্দাদের এই ড্রাগ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার ডোজ ইভারমেকটিন ওষুধ দেবে। ওই শহরটিতে এখন পর্যন্ত ৫৮১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪১ জন মারা গেছে। করোনার চিকিৎসায় ইভারমেকটিনের কার্যকারিতার কথা নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশী একজন ডাক্তার। বেসরকারী হাসপাতাল বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেসিডিন বিভাগের প্রধান ডাঃ মোহাম্মদ তারেক আলম বলেন, আমরা বিস্ময়কর ফল পেয়েছি। করোনায় আক্রান্ত ৬০ জন রোগীর ওপর দুটি ওষুধ একসঙ্গে প্রয়োগ করার পর তারা সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ব্যবহার হওয়া এ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল মেডিসিন ইভারমেকটিনের এক ডোজের সঙ্গে একটি এ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন দেয়ার পর অনেকটা বিস্ময়কর ফল দেখা গেছে।
×