ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চত্বর হবে সবুজ

বিদ্যুত কেন্দ্রের খালি জায়গায় বনায়নের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২৩:১২, ৪ জুন ২০২০

বিদ্যুত কেন্দ্রের খালি জায়গায় বনায়নের উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ দেশের বিদ্যুত কোম্পানিগুলোর খালি জায়গায় বনায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য প্রতিটি বিদ্যুত কোম্পানি এবং সংস্থাকে বৃক্ষ রোপণের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছর ৬৪ হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। যদিও বৃক্ষ রোপণের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছিল এক লাখ চার হাজার ৫০৭টি। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা অন্যান্য কোম্পানিকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিলেও আমাদের লক্ষ্য ছিল রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র। সেখানে মোট ছয় লাখ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সুন্দরবনের যেসকল প্রজাতি রয়েছে তার প্রতিই বেশি নজর দিয়েছি, যাতে সহজেই তারা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এতে বিদ্যুত কেন্দ্রটি সবুজ চত্বরের মধ্যেই থাকবে। বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হয় সেখানে কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি আবাসন গড়ে তোলা হয়। পরিকল্পিতভাবে আবাসনের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, হাসপাতাল, প্রার্থনালয়সহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। এসব করার পরও অনেক অব্যবহৃত খালি জমি পড়ে থাকে। এসব জমিতে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ রোপণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিবছর জুনেই বৃক্ষ রোপণ অভিযান পরিচালনা করে সরকার। এ বছর করোনার কারণে আনুষ্ঠানিককতায় কিছুটা কমতি থাকলেও বৃক্ষ রোপণের তাগিদ থাকার আশা করা হচ্ছে। জুনের শুরুতেই নিজেদের বৃক্ষ রোপণের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে বিদ্যুত বিভাগ। আর এতে দেখা গেছে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি বাস্তবায়ন করেছে বিদ্যুত বিভাগের ১৩টি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য পরিবেশের ক্ষতি হয়। এই ক্ষতিও বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে কিছুটা হলেও সমন্বয় করা সম্ভব। দেশে যেসব কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে তার বড় একটি অংশজুড়েই বৃক্ষ রোপণ করা হবে। দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ এলাকা বনভূমি থাকা প্রয়োজন। জনসংখ্যার তুলনায় জমির অপ্রতুলতার জন্য দেশে জনভূমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। সরকারের তরফ থেকে প্রতিবছর বৃক্ষ রোপণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি বিদ্যুত সংস্থার কাছেই যেসব পরিত্যক্ত জমি রয়েছে সেখানে বৃক্ষ রোপণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এজন্য কোন্ কোম্পানির কাছে কি পরিমাণ জমি রয়েছে এবং সেখানে কতটি গাছ লাগানো যায় সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা চাওয়া হয়। তাদের পাঠানো পরিকল্পা অনুযায়ী বৃক্ষ রোপণের নির্দেশনা দেয়া হয়। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। দেশের একটি কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর কর্মকর্তা জানান, একটি কেন্দ্র নির্মাণে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু মূল কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কখনই এত জমির প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি অনেক অবকাঠোমো নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যেও বিস্তর ফাঁকা জমি পড়ে থাকে যেখানে বৃক্ষ রোপণ করা যায়। সবখানে সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। এসব গাছ বড় হলে ছায়াসুনিবিড় পরিবেশের পাশাপাশি ফল এবং কাঠ পাওয়া যাবে, যা আয়ের একটি বিকল্প উৎস হতে পারে। তিনি বলেন, এতে একই জমির বহুমুখী ব্যবহারও নিশ্চিত হওয়া যাবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ৬৫ হাজার ৮৯০টি গাছ রোপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হলেও লাগিয়েছে ৪৩ হাজার ৬৪২ টি। যা একক সংস্থা হিসেবে সর্বোচ্চ। তবে পিডিবির কেন্দ্র এবং অবকাঠামোর পরিমাণ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সাত হাজার ৯৭টি লক্ষ্যর স্থলে ৯৫৩ টি গাছ লাগিয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) তিন হাজার ১৬১টির স্থলে এক হাজার ৩৮৫ টি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) পাঁচ হাজার ৬৭০ টির স্থলে পাঁচ হাজার ৬৭০ টি বৃক্ষ রোপণ করেছে। একইভাবে শতভাগ লক্ষ্য পূরণ করেছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০০ টি গাছ রোপণ করতে বলা হয়েছিল। সবই রোপণ করেছে।
×