ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

১০ হাজার কোটি টাকার জরুরী তহবিল

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২ জুন ২০২০

১০ হাজার কোটি টাকার জরুরী তহবিল

এম শাহজাহান ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নতুন বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি জরুরী তহবিল গঠন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার হয় এমন সব পণ্য আমদানিতে শতভাগ শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাবেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে থাকছে সব ধরনের ট্যাক্স ও ভ্যাট সুবিধা। কিছু শর্ত সাপেক্ষে হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ওষুধ ও সেবা সামগ্রী সম্পূর্ণ ফ্রি দেয়া হবে। ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ ও এ রোগের চিকিৎসা সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে আগামী বাজেটে এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কোন কারণ ছাড়াই ইতোমধ্যে সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সামগ্রী ও সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় ঘোষণা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে ওষুধের দাম হ্রাস পাবে। সহজ হবে করোনাসহ দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, সবার আগে মানুষের জীবন। করোনাভাইরাস থেকে দেশের মানুষের জীবন বাঁচাতে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে এবারের বাজেটে। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে জীবন বাঁচানো ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট। এ কারণে করোনাসহ দুরারোগ্য সব ধরনের চিকিৎসা সহজলভ্য করা হবে এবং আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও নতুন নতুন হাসপাতাল করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। করোনার যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জরুরী বরাদ্দ হিসেবে রাখা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, যে কোন জরুরী অবস্থার জন্য প্রতি বছর এ ধরনের থোক বরাদ্দ রাখা হয়। আগামীতে কোভিড-১৯ এর যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে নিয়মিত বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি জরুরী পরিস্থিতি ব্যবহারের জন্য এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়াও ত্রাণ অন্যান্য খাতেও বরাদ্দ থাকবে। যদি আগামীতে করোনার প্রভাব আরও বেড়ে যাওয়ার ফলে নতুন কোন হাসপাতাল করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে এ ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এছাড়া করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে গরিব মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য এ বরাদ্দের টাকা খরচ করা হবে। এছাড়াও করোনা নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি নির্ধারিত বরাদ্দের পরও যদি প্রয়োজন হয় তাহলে জরুরী প্রয়োজনে সিসিইউ, আইসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু, সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা (সাপোর্ট কেয়ার), করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কিট (সরঞ্জাম) এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে এ টাকা ব্যবাহার করা হবে। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মধ্যেই আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনার জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এদিকে আগামী বাজেটে শীর্ষ বরাদ্দের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে স্থাস্থ্যসেবা বিভাগ এ বিভাগে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে ১৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। করোনার ভাইরাসে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বাজেটে। যা করোনাভাইরাসের যেকোন জরুরী পরিস্থিতি খরচ করা যাবে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এখন এ পরিস্থিতিতে থোক বরাদ্দ রাখতেই হবে। এটা পর্যাপ্ত কিনা সেটা এখনও বলা সম্ভব নয়। কারণ করোনা কতদিন থাকে সেটাই আমরা জানি না। তিনি আরও বলেন, মনে এ বরাদ্দ রাখাটা ভাল। কারণ এ রকম একটা ফান্ড থাকলে জরুরী প্রয়োজনে টাকার জন্য ঘুরাঘুরি করার প্রয়োজন হবে না। তবে এ তহবিলের টাকাটা কি কি ভাবে খরচ হবে সে বিষয়ে একটি প্যান করা দরকার। এদিকে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত দরিদ্র রোগীরা তাদের চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাবেন। বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে- ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, থ্যালাসেমিয়া ও জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্তরা এসব চিকিৎসায় সহায়তা পাবেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এসব রোগে আক্রান্ত ভূমিহীন, শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্তু, বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, বিপতœীক, নিঃসন্তান, পরিবার বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। সমাজসেবা অধিদফতরের হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হবে।
×