ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় মৃত বেড়ে তিন লাখ ৩১ হাজার

বিশ্বে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড লক্ষাধিক আক্রান্ত

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২২ মে ২০২০

বিশ্বে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড লক্ষাধিক আক্রান্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বিশ্বে একদিনে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। একইদিন এশিয়ায়ও একদিনে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রাশিয়ায় একদিনে আট হাজারের বেশি আক্রান্ত হলেন। আর মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানচেট এক গবেষণায় জানিয়েছে, ভেন্টিলেটর সাপোর্টেও বয়স্কদের মৃত্যু ঝুঁকি কমছে না। এছাড়া পাকিস্তানে করোনায় মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। আবার করোনায় মৃত্যু নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য লুকানোর অভিযোগ উঠেছে। করোনা মৃত্যুতে শীর্ষস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে আরও ২৩ হাজারের বেশি হয়েছে। এদিকে ইরান জানিয়েছে, তাদের ১০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে গত সাতদিন ধরে বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, এনডিটিভি, রয়টার্স, গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের। সারা পৃথিবীতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃহস্পতিবার বেড়ে ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৪০ জন হয়েছে। মৃতের সংখ্যাও বেড়ে তিন লাখ ৩১ হাজার ১৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০ লাখ ৪৫ হাজার ৩১০ জন। একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৪৭৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন চার হাজার ৬৮৫ জন। এ্যাক্টিভ কেস রয়েছে ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৮৭৬ জনের। এদের মধ্যে ৪৫ হাজার ৬৯৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও প্রাণহানিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক হাজার ৫৫২ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৯৪৮ জন। দেশটিতে আক্রান্ত ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৭ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রাশিয়া। দেশটিতে আক্রান্ত তিন লাখ ১৭ হাজার ৫৫৪, মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৯৯ জনের। স্পেনে আক্রান্ত দুই লাখ ৭৯ হাজার ৫২৪, মারা গেছেন ২৭ হাজার ৮৮৮ জন। ব্রিটেনে আক্রান্ত দুই লাখ ৪৮ হাজার ২৯৩, মারা গেছেন ৩৫ হাজার ৭০৪ জন। ইতালিতে আক্রান্ত দুই লাখ ২৭ হাজার ৩৬৪, মারা গেছেন ৩২ হাজার ৩৩০ জন। বিশ্বে একদিনে রেকর্ড আক্রান্ত ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণের আকাশচুম্বী উল্লম্ফনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনেক উন্নত দেশ লকডাউন প্রত্যাহার করে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফেরার প্রস্তুতির মধ্যেই বুধবার একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখেছে বিশ্ব। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএইচও বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে রেকর্ড এক লাখ ৬ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ওই সংক্রমণ এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, এই মহামারীতে আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এশিয়ায় রেকর্ড সংক্রমণ ॥ করোনায় কাঁপছে এশিয়া। এ মহাদেশের অর্ধশত দেশ ও অঞ্চলে ঝড়ের গতিতে বাড়ছে সংক্রমণ। গেল ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন দেশে রেকর্ডসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে ৮ লাখ। প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি। আক্রান্তের দিক থেকে এশিয়ায় শীর্ষে তুরস্ক, দ্বিতীয় ইরান, তৃতীয় ভারত। বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ায় নবম, বিশ্বে ২৮তম। তবে ঘনবসতি ও দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা সত্ত্বেও এশিয়ার অনেক জনবহুল দেশ এবং আফ্রিকার কিছু অংশের অনেক দরিদ্র দেশেও মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম। একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে ব্রাজিলও। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন রেকর্ড ২৩ হাজার ১৮৭ জন। এ মহাদেশে আক্রান্তের শীর্ষে তুরস্ক, মৃত্যুতে ইরান। তুরস্কে আক্রান্ত এক লাখ ৫২ হাজার ৫৮৭, মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ২২২ জন। ইরানে আক্রান্ত এক লাখ ২৯ হাজার ৯৪৯, মারা গেছেন সাত হাজার ২৪৯ জন। এশিয়ায় তিন নম্বরে থাকা ভারতেও সংক্রমণ লাখ ছাড়িয়েছে। দেশটিতে আক্রান্ত এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬, মৃত্যু তিন হাজার ৪৫৬ জন। ভারতের পরের অবস্থান করোনার আঁতুড়ঘর চীন। দেশটিতে আক্রান্ত ৮২ হাজার ৯৬৭, মৃত্যু চার হাজার ৬৩৪। এরপর সৌদি আরবে আক্রান্ত ৬২ হাজার ৫৪৫, মৃত্যু ৩২৯ জন। পাকিস্তানে আক্রান্ত ৪৮ হাজার ৯১, মৃত্যু এক হাজার ১৭ জনের। কাতারে আক্রান্ত ৩৭ হাজার ৯৭, মৃত্যু ১৬ জন। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ২৯ হাজার ৮১২, মৃত্যু ২২ জন। বাংলাদেশে আক্রান্ত ২৮ হাজার ৫১১, মৃত্যু ৪০৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬১৭ জন। পাকিস্তানে আরও ৩২ ॥ পাকিস্তানে প্রাণঘাতী করোনায় এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কমপক্ষে ৪৮ হাজার ৯১ জন করোনায় আক্রান্ত। ওয়ার্ল্ডোমিটারের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ১৯৩ জন এবং মারা গেছে ৩২ জন। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৪ হাজার ১৫৫ জন। বর্তমানে সেখানে করোনার এ্যাক্টিভ কেস ৩২ হাজার ৯১৯। ১১১ জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। যুক্তরাষ্ট্রে আরও ১৫১৮ ॥ যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৩ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী করোনা আক্রান্ত হয়েছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ হাজার ২৮৫ এবং মারা গেছেন এক হাজার ৫১৮ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯ জন। ব্রাজিলে আরও ৮৮৮ ॥ ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে সর্বোচ্চ আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৫১। ফলে দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৭৯ জন। অপরদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৮৮৮ জনের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ হাজার ৮৫৯ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৫৭। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৮ হাজার ৮৯৪ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ১৬ হাজার ৬৮৩ জন। নিরাপদ নয় মৃতদেহ- আইসিএমআর ॥ মৃতদেহকেও ছাড়ছে না করোনা। গবেষণায় দেখা গেছে, যদিও মৃত্যুর পর সময়ের সঙ্গে মরদেহে করোনার ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়, তারপরও মরদেহ থেকে সম্পূর্ণ রূপে চলে যায় না। তাই মৃত্যু-পরবর্তীতে দেহকে অসংক্রমিত বলা যাবে না বলছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। এজন্য করোনায় মৃতদের ময়নাতদন্তের সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি। একটি মরদেহে কতদিন পর্যন্ত করোনা বেঁচে থাকতে পারে, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই ওই তথ্য জানায় আইসিএমআর। পাশাপাশি করোনায় মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তের বিষয়ে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছেন তারা। সেসব রোগীর ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেতিবাচক এসেছে, তাদের জন্যও একই নির্দেশনা মানতে বলা হচ্ছে ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে। কারণ হিসেবে আইসিএমআর কলছে, দেহে লক্ষণ দেখা দেয়ার কারণেই তাদের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এজন্য তাদের রিপোর্ট নেতিবাচক আসলেও তাদের একেবারে করোনামুক্ত মৃতদেহ হিসেবে বিবেচনা করতে নারাজ আইসিএমআর। তথ্য লুকাচ্ছে দিল্লী সরকার! ॥ দিল্লীর সরকারী হিসাব বলছে, সেখানে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৬৮ জনের। যদিও শ্মশান ও কবরস্থান থেকে থেকে পাওয়া তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। তাদের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত দিল্লীতে বিশেষ নিয়ম মেনে শেষকৃত্য হয়েছে পাঁচ শ’ জনেরও বেশি। সরকারি তথ্য আর শ্মশান ও কবরস্থানের তথ্যের মধ্যে এ বিশাল ফারাক থাকার কারণে বিরোধীদলের দাবি, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও প্রকৃত সংখ্যা লুকাচ্ছে সরকার। করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে হেরফের থাকায় কেজরিওয়ালের সরকার কারণ খতিয়ে দেখতে বিশেষ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, করোনায় প্রকৃত মৃতের তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি দিয়েছেন দিল্লীর স্বাস্থ্যসচিব পদ্মিনী সিঙ্গলা। চিঠিতে শ্মশানঘাটে শেষকৃত্য ও কবরস্থানে দাফনের সঠিক তথ্য জানতে চেয়েছেন তিনি। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অব দিল্লীর (এমসিডি) তথ্যানুযায়ী, দিল্লীর দুই শ্মশানঘাট ও একটি কবরস্থানে ৫৮০ জনের বেশি মানুষের করোনায় মৃতদের শেষকৃত্য করা হয়েছে। ইরানে ১০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত ॥ ইরানে করোনায় প্রায় ১০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির আধা-সরকারী বার্তা সংস্থা আইএলএনএকে বৃহস্পতিবার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে ১০ হাজারের মতো স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারসের হিসাবে, দেশটিতে এক লাখ ২৬ হাজার ৯৪৯ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। যাদের মধ্যে সাত হাজার ১৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৯৮ হাজার ৪০৮ জন। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ইরানে।
×