ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্ল্যাকআউট মুক্ত রাখার পরিকল্পনা

আমফানে বিদ্যুত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২০ মে ২০২০

আমফানে বিদ্যুত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখার প্রস্তুতি

রশিদ মামুন ॥ সুপার সাইক্লোন আমফানকে ঘিরে দুশ্চিন্তা বেড়েছে বিদ্যুত সঞ্চালন এবং বিতরণে। উৎপাদন কমিয়ে ব্ল্যাকআউটের হাত থেকে মুক্ত রাখার পরিকল্পনা করছে বিদ্যুত বিভাগ। সুপার সাইক্লোন সিডরে ব্ল্যাকআউট হওয়াতে এবার আগেভাগে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে যাতে পুরোদেশের বিদ্যুত পরিস্থিতি একেবারে ভেঙ্গে না পড়ে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানিকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত দু’দিন থেকে আমফানে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখতে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি না দেখে সারাদেশে বিদ্যুত ব্যবস্থা সচল করার বিষয়ে আগেভাগে কিছুই বলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। সিডরের চেয়ে শক্তিশালী বলা হচ্ছে আমফানকে। সিডরে ২০০৯ সালে নবেম্বরে দেশের বিদ্যুত ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তখন ব্ল্যাকআউট হওয়াতে সারাদেশের বিদ্যুত সরবরাহ ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। কোন কারণে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুত উৎপাদন হলে সঞ্চালন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণে এক সঙ্গে সব বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। যাকে ব্ল্যাকআউট বলে। এমন হলে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা চালু করতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ. কে. এম হুমায়ূন কবীর বলেন, আমরা গত দু’দিন ধরেই উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করছি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় আবহাওয়া পরিবর্তনের খবর পাঠাচ্ছি। কোন ভাবে যেন ব্ল্যাকআউটের মতো ঘটনা না ঘটে এজন্য পরিকল্পনাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্ল্যান-এ, বি এবং সি। এই পরিকল্পনায় কত মেগাওয়াট চাহিদাতে কোন কোন বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত নিতে হবে তা বলে দেয়া হয়েছে। দেশের যেসব হাসপাতালে করোনা টেস্ট হয় এর পাশাপাশি চিকিৎসা হয়। সবখানে আমরা আলাদা করে বলে দিয়েছি যেন দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়। এক্ষেত্রে যেখানে যেখানে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুত সরবরাহ করা যায় সেখানে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্যোগকালীন মন্ত্রণালয়ের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ঝড়ে আরইবি, ওয়েস্ট পাওয়ার জোন এবং পিডিবি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদের আমরা বলেছি সব কিছু প্রস্তত রাখতে। যাতে ঝড় চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়। ঝড়ের সময় বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলো পরিস্থিতির কারণে লাইন বন্ধ করে দেয়। তখন দেখা যায় একবারে অনেকটা চাহিদা কমে যায়। এতে বিপাকে পড়ে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি)। এ কারণে বিদ্যুত বিভাগ থেকে বলা হয়েছে এভাবে লাইন বন্ধ না করে এনএলডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্যক্রম চালাতে হবে। অন্যদিকে এলএনডিসিকে তিন ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য আগে থেকে উৎপাদন বিতরণে সমন্বয় আনার জন্যই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। জানতে চাইলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা তিন ধরনের পরিকল্পনায় মনে করছি ঝড়ের সময় যদি চাহিদা ৮ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে তাহলে কোন কোন কেন্দ্র চালু রাখব আবার যদি আরও কমে ৬ হাজার বা তার চেয়ে কমে তিন হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে তাহলে তার জন্যও পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি বলেন ঝড়ের সময় দক্ষিণাঞ্চলের কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হবে না হলে সঞ্চালন ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়তে পারে। এজন্য তখন কোন কোন এলাকা থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা গাড়িতে সব মালামাল ভর্তি করে রেখেছি। ঝড় শেষ হওয়া মাত্রই আমাদের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চলে যাবে। এছাড়া আমাদের যেসব কর্মী রয়েছে তাদের আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাবস্টেশনের আশপাশে থাকার ব্যবস্থা করেছি। সাবস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজারকে সার্বক্ষণিক সাবস্টেশনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণত স্টেশন ম্যানেজার অফিস টাইমের পরে বাড়ি চলে যান। দেশের উপকূলীয় তিন জেলাতে বড় তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে রাপমাল বাগেরহাটে, পায়রা পটুয়াখালীতে এবং কক্সবাজারে মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র। তিন কেন্দ্রকেই কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যেসব ক্রেন ছিল সেগুলোতে গুটিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মওলা বলেন, আমাদের কেন্দ্রটি উৎপাদনে রয়েছে। প্রথম প্রস্তুতি হিসেবে আমরা কেন্দ্রটির উৎপাদন কমিয়ে আনছি। যাতে চাইলেই কেন্দ্রটি সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা যায়। দ্বিতীয়ত আমরা সব ক্রেন গুটিয়ে ফেলেছি। নির্মাণ কাজের জন্য এখানে বড় বড় ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের জেটিতে কয়লা লাইটারেজ করার জন্য জাহাজ ছিল, সেগুলোকে আরও ভেতরে নিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে কোন ক্ষতি সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখা যায়। এছাড়া আমাদের কর্মীদের সুরক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা। সুপার সাইক্লোন হওয়াতে এবার বিতরণ ব্যবস্থায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এজন্য বিতরণ কোম্পানি আগে ভাগে নিজেদের প্রস্তুত করে রেখেছে। মঙ্গলবার সকালেও আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মঈন উদ্দিন দেশের সব জিএম এবং এজিএমদের সঙ্গে অনলাইন মিটিং এ্যাপস জুমে বৈঠক করেছেন। আরইবির একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে এখন কাজ করতে লোক পাওয়া যায় না। এর ওপর সাইক্লোন সব মিলিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। তিনি বলেন, বুলবুলে আমাদের সব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ২০/২৫ দিন সময় লেগেছিল। ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা কম ছিল বলেই কম সময়ে এটি করা গেছে। কিন্তু সিডরে আমাদের অভিজ্ঞতা ভাল নয় আমাদের সকল কাজ শেষ করতে তিন মাসের মতো সময় লেগেছিল। এবার আমাদের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঝড়ের পর কি কি মালামাল লাগবে সেগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমাদের নিজেদের লোকের পাশাপাশি ঠিকাদারের লোকও প্রস্তুত রয়েছে। তবে ঝড়ে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তার উপরই সব কিছু নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
×