ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়েছেন ১২৬৬ বিদেশী

প্রকাশিত: ১০:০১, ৬ এপ্রিল ২০২০

 পাঁচ চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়েছেন ১২৬৬ বিদেশী

আজাদ সুলায়মান ॥ করোনা আতঙ্কে একের পর এক চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়ছেন বিদেশীরা। গতকাল রবিবার দ্বিতীয় দফায় দুটো কুকুর ও দুটো বিড়াল নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন ৩২২ মার্কিন নাগরিক। তাদের মধ্যে রয়েছে ১১ শিশু। রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের চার্টার্ড করা দ্বিতীয় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। এ নিয়ে ৫টি ফ্লাইটে এ পর্যন্ত ১২৬৬ বিদেশী কূটনীতিক ও নাগরিক ঢাকা ত্যাগ করেছেন। আগামী দুই/তিন দিনের মধ্যে ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বেশ কয়েকটি ইউরোপীয়ান দেশ, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। জানা গেছে, গতকাল দ্বিতীয় ফ্লাইটের দেখভাল করার জন্য বিমানবন্দরের উপস্থিত ছিলেন- মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। শতভাগ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে কাতার এয়ারওয়েজের ওই বিশেষ ফ্লাইট তাদের বহন করে নিয়ে যায়। এভসেক পরিচালক ইউইং কমান্ডার ওবায়দুর রহমান জানিয়েছেন, মার্কিন নাগরিকরা যথাসময়ে বিমানবন্দরের পৌঁছেন। তাদের বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিব। নাগরিকদের সঙ্গে থাকা দুটো বিড়াল ও দুটো কুকুর ৮নং গেট দিয়ে কার্গো হিসেবে প্রবেশ করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় তাদের চেকইন সম্পন্ন হয়। পৌনে ৫টা ৫০ মিনিটে ওই ফ্লাইট পুশ করা হয়। বিমানন্দর সূত্র জানিয়েছে- মার্কিন নাগরিকদের বিশেষ ওই ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতারের দোহায় যাবে। সেখানে কিছু সময় অবস্থানের পর ওই ফ্লাইট ডালাসের উদ্দেশে যাত্রা করবে। মার্কিনীদের প্রথম ফ্লাইটও একই রুট দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করে। গত সপ্তাহে প্রথম ফ্লাইটে ২৬৯ আমেরিকান বাংলাদেশ ছেড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, যারা স্বেচ্ছায় ফিরতে চাচ্ছেন তাদের তারা সহযোগিতা দিচ্ছেন। জানা গেছে- বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পর ৫টি বিশেষ ফ্লাইটে ১২৬৬ বিদেশী নাগরিক নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। এদের অধিকাংশই নিয়মিত যাত্রী, যারা বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধের কারণে তারা বাংলাদেশে আটকা পড়েছিলেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তারা তাদের দূতাবাসের সঙ্গে নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে যোগাযোগ করে। এরই প্রেক্ষিতে দূতাবাসগুলো বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় ভাড়া করা বিমানের মাধ্যমে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এ সংক্রানন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রগামী অধিকাংশ যাত্রীই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা। যারা বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত স্থায়ী বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ সেদেশে ফিরে যাওয়ার আইনী বাধ্যবাধকতার জন্য নির্ধারিত সময়সীমার আগেই ফেরত গেছেন। জাপানী এবং রাশিয়ান নাগরিক যারা বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন- তাদের একটি বড় অংশ এদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতেন। প্রকল্পগুলো বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে। কোন কাজ না থাকায় তারা নিজ পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা বাংলাদেশে ফিরে আবার কাজে যোগ দেবেন। এর আগে গত ২৪ মার্চ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওই দেশটির ২৩০ জন এবং ২৫ মার্চ ড্রুক এয়ারের দুটি ফ্লাইটে ভুটানের ১২৪ নাগরিক বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার বিশেষ ফ্লাইটে ৩২৭ জাপানী বাংলাদেশ ছেড়ে জাপানে ফিরে গেছেন। জানা গেছে- দু’এক দিনের মধ্যে আরও কটি দেশের নাগরিকরা ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বিষেয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান দৈনিক জনক্ণ্ঠকে বলেন, ঢাকায় বসবাসরত ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া স্বদেশে ফিরে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করে সহযোগিতা চেয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয়ান দেশগুলোর বেশ কিছু কূটনীতিক ও নাগরিক স্বদেশের ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা একটা ফ্লাইট চার্টার্ড করার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। তারা সবাই একটি ফ্লাইটেই ঢাকা ত্যাগের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কাতার এয়ারওয়েজের সঙ্গেই তারা দরদাম করছেন। সিভিল এভিয়েশানের কাছে এ বিষয়ে ফ্লাইটের অনুমোদন চেয়েছেন বলে জানা গেছে। একইভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরাও ঢাকা ছাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
×