ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগের ঋণের ক্ষেত্রেও ৯ শতাংশ হারে সুদ শোধ করা যাবে

এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২ এপ্রিল ২০২০

এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এক অঙ্কের ঋণের সুদহার কার্যকর করেছে দেশের সকল ব্যাংক। বুধবার থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ঋণের এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আগের নেয়া ঋণের ক্ষেত্রেও নয় শতাংশ হারে এখন থেকে সুদ পরিশোধ করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঋণের সুদহার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একটি সার্কুলার জারি করে। এতে বলা হয়, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারিসহ সব ধরনের শিল্প, গাড়ি, বাড়ি, আবাসনসহ কোন ঋণে আর সিঙ্গেল ডিজিটের বেশি সুদ নিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। আগে দেয়া ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বলা হয়। তবে আমানতের ক্ষেত্রে নিজেদের মতো করে সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। অধিকাংশ ব্যাংক এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে শাখা পর্যায়ে নির্দেশনাও দেয়। তবে করোনার কারণে অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি বাস্তবায়নে খুব বেশি আগ্রহী নয়। তাদের ধারণা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে হয়তো শিথিলতা দেখাতে পারে। যদিও এর আগে ব্যাংকগুলো নিজেরা বসে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেয়াদী আমানতে আর ৬ শতাংশের বেশি সুদ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ সিদ্ধান্ত অনেক ব্যাংক মানছে না বলে জানা গেছে। আর এ জন্য অনেক ব্যাংক এখনও আমানত নিচ্ছে ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে। বিশেষ করে নতুন ও আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো আমানতে উচ্চ সুদ দিয়ে গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর না করার আর কোন সুযোগ নেই। নির্দেশনা মোতাবেক বাস্তবায়ন এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন করেছে দেশের কার্যরত ব্যাংকগুলো। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায় এরই মধ্যে নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। রেপোর সুদহার ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহেল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক বুধবার থেকেই এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর করেছে প্রাইম ব্যাংক। তিনি বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী আগের নেয়া ঋণের ক্ষেত্রেও নয় শতাংশ হারে এখন থেকে সুদ পরিশোধ করা যাবে। এদিকে পুরোনো ব্যাংকের তুলনায় নতুন ব্যাংকগুলো আমানতে কিছুটা উচ্চসুদ দেয়। ঋণেও সুদ নেয় বেশি। সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে, সেই নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কার্যকর করেছি। বেসরকারী পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের জন্য শাখাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের এ্যাসেট-লাইবিলিটি কমিটির (এ্যালকো) বৈঠক করে কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন করা সবার জন্য চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি, রফতানির এলসি কমায় এটা বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। তবে এখনও অনেক ব্যাংক ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে। তারা কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করবে, তা দেখার বিষয়। এদিকে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আগামী জুন পর্যন্ত কোন ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণীমানে কোন পরিবর্তন আনা যাবে না। সম্প্রতি দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বর্তমানে কোন ঋণগ্রহীতা যদি ৩০ জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে খেলাপী করা যাবে না। তবে যদি কোন খেলাপী ঋণগ্রহীতা এই সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ করেন, তাকে নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমদানি-রফতানিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে অনেক ঋণগ্রহীতাই সময়মতো ঋণের অর্থ পরিশোধে সক্ষম হবেন না বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এতে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এবং দেশে সামগ্রিক কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, গত ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণীমান যা ছিল, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ওই মানেই রাখতে হবে। এর চেয়ে বিরূপ মানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
×