ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যথায় ব্যবস্থা

বিদেশফেরতরা কোথায় আছেন তা থানায় জানাতে হবে

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২৫ মার্চ ২০২০

 বিদেশফেরতরা কোথায় আছেন তা থানায় জানাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি মাসে বিদেশ থেকে দেশে আসা ব্যক্তিদের অবস্থান জানাতে কড়া নির্দেশনা জারি করল পুলিশ সদর দফতর। নির্দেশনা মোতাবেক বিদেশ ফেরতরা যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানকার বা আশপাশের কোন থানায় গিয়ে তাদের অবস্থান জানানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার মোবাইল নম্বরও থানায় লিপিবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। তবে বিদেশ ফেরত ব্যক্তির পক্ষে অন্য কেউ বা তার মনোনীত কোন ব্যক্তির বিদেশ থেকে আসার ব্যক্তি সম্পর্কে থানায় তথ্য দিতে পারবেন। এমন নির্দেশনা না মানলে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের পাসপোর্টের কার্যক্রম স্থগিত ও প্রয়োজনে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরের তরফ থেকে এমন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। জারিকৃত নির্দেশনা পুলিশের প্রতিটি বিভাগ ও ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ১ মার্চ থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিদেশ থেকে দেশে আসা প্রবাসীরা তাদের পাসপোর্টে উল্লিখিত ঠিকানায় অবস্থান করছেন না। তাদের অনেকেই সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে ঘোরাফেরা করছেন। যা দেশের করোনাভাইরাস নিয়ে সৃষ্টি পরিস্থিতিতে তাদের নিজেদের এবং সাধারণ জনগণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য ১ মার্চ থেকে হালনাগাদ দেশে আসা প্রবাসীদের তাদের বর্তমান অবস্থান নিকটস্থ থানায় জানাতে অনুরোধ করা হলো। তাদের অবস্থানের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নম্বরও থানায় দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে প্রবাসী যদি নিজে থানায় না যান, সেক্ষেত্রে তার কোন আত্মীয়স্বজন বা তার মনোনীত কোন ব্যক্তি আগত প্রবাসী সম্পর্কে থানায় তথ্য দিতে পারবেন। বিদেশ থেকে আসা যেসব ব্যক্তি এমন নির্দেশনা মানবেন না, তাদের ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮’ বাংলাদেশ দ-বিধি এবং প্রযোজ্য অন্যান্য আইনের উপযুক্ত ধারা মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি প্রয়োজনে তাদের পাসপোর্টের কার্যক্রম স্থগিত ও প্রয়োজনে বাতিল করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পুলিশের সকল ইউনিট সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। সময়ে সময়ে সরকার যে নির্দেশনা দিচ্ছে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বিদেশ ফেরত প্রবাসী নাগরিকরা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন কি না তা নিশ্চিত করতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এমন তল্লাশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশ থেকে সম্প্রতি প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন। তাদের নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত তালিকা তৈরি করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা। সেই তালিকা প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি সেই তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছেও দেয়া হয়েছে। দেশে ফেরা প্রবাসীদের মধ্যে অধিকাংশই টানা ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ভয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের শনাক্ত করতে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। দেশে আসা ব্যক্তিদের অবস্থান জানার জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আত্মগোপনে চলে যাওয়া ওইসব ব্যক্তির অবস্থান জানার পর সংশ্লিষ্ট জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য অনুরোধ করছেন। অনেক সময়ই তাদের তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করতে হচ্ছে পুলিশকে। করোনাভাইরাসের হাত থেকে নিরাপদ থাকার প্রয়োজনীয় পোশাক না থাকায় পুলিশ বাহিনীতে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। শরীয়তপুর জেলার পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান দৌলা জনকণ্ঠকে বলেন, তার কাছে বিদেশ থেকে দেশে আসা ৩ হাজার ৪৬৪ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে। তালিকা পাঠানোর আগেই নিজ উদ্যোগে তিনি ৬৪০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করেন। এছাড়া ২২১ জন নিজ উদ্যোগে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন। বাকিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তাদের অবস্থান জেনে তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাপ্ত তালিকা মোতাবেক শুধু রাজশাহী জেলায়ই ১ হাজার ৩০৮ জন বাংলাদেশী করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকাসহ এর সংখ্যা তা নিশ্চিত নয়। দেশে ফেরার পর করোনাভাইরাসের কারণে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ভয়ে অনেকেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। আত্মগোপনে যাওয়া প্রবাসীদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে যাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের আর বাড়ির বাইরে বের হতে দেয়া হয়নি। বাড়ির সামনে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। তারপরেও তারা মাঝে মধ্যেই বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া যে বাড়িতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তি রয়েছে, সেই সব বাড়ির সামনে পুলিশ রাখা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নানা সচেতনতামূলক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। হ্যান্ডমাইক দিয়ে তাদের দেশ, জাতি, পরিবার, প্রতিবেশী, পরিজনসহ সার্বিক মঙ্গলের জন্য নিজ বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়েও প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপযুক্ত পোশাক না থাকার কারণে পুলিশ সদস্যরা প্রবাসীদের সরাসরি ধরছেন না। তাদের বিষয়ে জেলার স্বাস্থ্য দফতরকে অবহিত করা হচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, এ জন্য প্রয়োজনে ওইসব বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে।
×