ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২০ মার্চ ২০২০

শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু

আতশবাজির বর্ণিল আলোকচ্ছটা ও মনোরম লেজার শোয়ের মধ্য দিয়ে রাত ৮টায় শুরু হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এই মাহেন্দ্রক্ষণে জন্মেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। এ সময় শতকণ্ঠে বেজে ওঠে থিম সং- ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা’, প্রখ্যাত সব সঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ রেহানাও। অন্যদিকে বাবার জন্মদিনকে উপলক্ষ করে বোন রেহানার লিখিত কবিতা স্বকণ্ঠে আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কবিতায়ও বঙ্গবন্ধুকে ধ্রুবতারাদের মাঝে, আসমুদ্র গর্জনের মাঝে, বাংলার আকাশে-বাতাসে-পাহাড়ে বঙ্গবন্ধুকে অহর্নিশি খুঁজে ফেরার আকুতি জানানো হয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে চরাচরে সর্বত্রই বঙ্গবন্ধু অদৃশ্য হলেও সতত বিরাজমান। কেননা, তিনি জন্মগ্রহণ না করলে, তিনি মর্ত্যে আবির্ভূত না হলে বাংলাদেশের সৃষ্টিই হতো না। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অবিচ্ছিন্ন, একাকার ও অভিন্ন। আর এরই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে ছন্দে ছন্দে, বর্ণে, গল্পে- আলোকচ্ছটায়, সমবেত কণ্ঠ ও সুরসঙ্গীতে, সর্বোপরি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত কলাবিন্যাসে শিল্পিত সুষমায়। দু’ঘণ্টাব্যাপী দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচারিত হয় এই অনুষ্ঠানমালা, যা প্রকৃতপক্ষে আবহমান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-লোকগাথা-জনজীবন-রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একেবারে স্বাধীনতা সংগ্রামÑ ধাপে ধাপে তুলে ধরে দৃশ্যকল্পের মাধ্যমেÑ যার মূল নিয়ামক ভূমিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির অবিসংবাদী নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান। একই সঙ্গে ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভা-ারি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ওআইসি মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওনাইমানের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন জাতির পিতার প্রতি। সব মিলিয়ে সুপরিকল্পিত ও মনোগ্রাহী ছিল অনুষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সরকার জনকল্যাণ ও হিতার্থে মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত ও সীমিত করেছে। মূল অনুষ্ঠান পরে সুবিধাজনক সময়ে করা হবে নিশ্চয়ই। সরকার থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাড়াবাড়ি কিংবা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছিল আগেই। মনে রাখতে হবে যে, জাতির পিতার ত্যাগ ও আদর্শ, মানুষের প্রতি ভালবাসা, সর্বোপরি মহানুভবতা অনুসরণ করতে হবে আমাদের প্রত্যেককে। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন ও রাজনীতি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধীদের মোকাবেলায় আমাদের নতুনভাবে উজ্জীবিত হতে হবে। মুজিবের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রামের চেতনাটি জাতির অন্যতম বড় শক্তি। এই বোধই আমাদের প্রেরণা দেবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার। উল্লেখ্য, বছরটি হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও। যুগপৎভাবে চলতে থাকবে এই দুটি অনুষ্ঠান নানা উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এই উদ্যাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং দেশ ও জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা। জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত ও উজ্জীবিত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। কেননা, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন, অদ্বিতীয়। নতুন প্রজন্মসহ সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে এই বোধ ও চেতনা। আর তাহলেই কেবল সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন।
×