ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রন্থমেলা প্রতিদিন

পাঠক চাহিদার শীর্ষে আছে উপন্যাস

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাঠক চাহিদার  শীর্ষে আছে উপন্যাস

মনোয়ার হোসেন ॥ পেরিয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাইশটি দিন। আর এই সময়ের মধ্যে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যানুযায়ী প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৮৫টি। এই বিপুলসংখ্যক বইয়ের মধ্যে সৃজনশীল ধারার গ্রন্থ তালিকায় এগিয়ে আছে কাব্যগ্রন্থ। সংখ্যাটি হচ্ছে ১ হাজার ১৯৮। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উপন্যাস। রবিবার পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ৬০০। তবে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকেও পাঠকের আগ্রহে এগিয়ে আছে উপন্যাস। বিভিন্ন প্রকাশনীর সৃজনশীল ও মননশীল ধারার বহুমাত্রিক বিষয়ের বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে উপন্যাস। উপন্যাসের প্রতি পাঠকের আগ্রহ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, মানুষ আসলে একটি গল্প শুনতে চায়। সেই গল্পে থাকতে হয় নতুন কিছু। উপন্যাসের কাহিনীর সেই নতুনত্বের পরিপূর্ণ গল্পই পাঠককে ধরে রাখে। প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সব সময়ই অন্য যে কোন ধারার বইয়ের চেয়ে উপন্যাসের কদর বেশি ছিল এবং এখনও আছে। তাই শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বব্যাপীই উপন্যাসের চাহিদা বেশি। কারণ, উপন্যাসের ভেতর জীবন ও সমাজ বাস্তবতার গল্প খুঁজে পায়। মেলায় প্রকাশিত কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের তথ্য তুলে ধরা হলো এ লেখায়। এবারের মেলায় কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে এনেছে হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ‘মৎস্যগন্ধা’ ও রেজাউর রহমানের ‘আবাসভূমি’। প্রথমা থেকে প্রকাশিত আনিসুল হকের ‘এখানে থেমো না’ শীর্ষক ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাসটি চলছে ভাল। বেরিয়েছে দ্বিতীয় সংস্করণ। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ধ্রুব এষের উপন্যাস ‘পরেশের বউ’ হয়েছে পাঠকসমাদৃত। এসেছে দ্বিতীয় সংস্করণ। অবসর থেকে বেরিয়েছে ইমরান কায়েসের ‘জন্মান্তর’ এবং তাবারক হোসেনের ‘বিজিতা’। অনন্যা থেকে বেরিয়েছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘টোপ’ ও ‘কয়েকজন মেয়ে’। পার্ল পাবলিকেশন্স এনেছে মোস্তফা কামালের ‘মানবজীবন’ ও দীপু মাহমুদের ‘আধিয়ার’। বিদ্যা প্রকাশ এনেছে মোহিত কামালের ‘হ্যাঁ’ ও ধ্রুব এষের ‘সরোজিনীর ডায়রী’। সময় প্রকাশন মেলায় এনেছে ধ্রুব এষের ‘পরামানবী’ ও আনিসুল হকের সঙ্কলন ‘চার রকম মন’ । অন্যপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে সুমন্ত আসলামের ‘যদি কখনো’ এবং সাদাত হোসাইনের ‘মেঘেদের দিন’ ও ‘মরণোত্তম’। পাঞ্জেরী এনেছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘কংকালের মুখ’, স্বকৃত নোমানের ‘শেষ জাহাজের আদমেরা’, মোজাফ্্ফর হোসেনের ‘তিমিরযাত্রা’ ও মারুফ রসূলের ‘কাক্সিক্ষত মৃত্যুর খসড়া’। এ ছাড়াও পাঞ্জেরী থেকে এসেছে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও মঈনুল আহসান সাবেরের ‘উপন্যাস ত্রয়ী’। নাগরী এনেছে ইমতিয়ার শামীমের ‘যার স্বপ্ন দেখেছিল’ এবং প্রশান্ত মৃধার ‘গোলকধাঁধাঁয় ঘোরাফেরা’ শিরোনামের উপন্যাস। কথাপ্রকাশ প্রকাশনী থেকে আসা সুমন্ত আসলামের ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন চা খেতে আসেন’ উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ চলছে। এ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স প্রকাশ করেছে আতা সরকারের ‘তিতুর লেঠেল’ ও ‘আপন লড়াই’ এবং ওমর ফারুকের ‘শায়লার জবানবন্দী’। অনিন্দ্য প্রকাশ মেলায় এনেছে মোশতাক আহমেদের ‘বসন্ত বর্ষার দিগন্ত’, ইশতিয়াক আহমেদের ‘গতকাল’ ও জামশেদ নাজিমের ‘আবেগের জলডুবি’। শোভা প্রকাশ এনেছে সুব্রত পালের ‘রঙ বদল’ এবং মহিবুল আলমের ‘জোড়া সিঁথি নদীর তীরে’। মানিক মানবিকের ‘জীবন যৌবন এবং জলাঞ্জলি’ প্রকাশ করেছে প্ল্যাটফর্ম। তোফায়েল আহমেদের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের লেখা বই। ‘রক্তঝরা মার্চ ১৯৭১ : অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা’ শিরোনামের গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে জার্নিম্যান বুকস। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের ঘটনা অবলম্বনে রচিত বইটির উন্মোচন করা হয় রবিবার। একইসঙ্গে একই প্রকাশনী থেকে বেরুনো তারিক সুজাতের কাব্যগ্রন্থ ‘সুরের পথে একলা হাঁটি’ এবং নাজনীন হক মিমির লেখা ‘৬৯-এর শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ও মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুভূতি প্রকাশে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণসহ একাত্তরের মার্চ মাসের নানা ঐতিহাসিক ঘটনাকে মেলে ধরেছি এই বইয়ে। এর মাধ্যমে আমাদের ইতিহাসের দলিলকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছি। একাত্তরের পয়লা মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত নানা ঘটনাপ্রবাহ উঠে আসে বইটিতে। একাত্তরের ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে তেসরা মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন একতরফাভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছেন। এর বিরুদ্ধে বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেন। এমন নানা ঐতিহাসিক ঘটনাবলী সংযুক্ত হয়েছে গ্রন্থটিতে। তবে এ বইটি আমি নিজে লিখিনি। আমার বলা কথার ভিত্তিতে শ্রুতিলিখন করেছেন দুজন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। কথার সূত্র ধরে তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির এই দিনেই এক জনসভায় তোফায়েল আহমেদই শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে পথ চলেছেন। মোড়ক উন্মোচন অনুুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অন্য দুটি বইয়ের লেখক তারিক সুজাত ও নাজনীন হক মিমি। নতুন বইয়ের তথ্য বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গ্রন্থমেলার ২২তম দিনে নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১৫৪টি। এর মধ্যে ইউনিভার্সাল একাডেমি থেকে প্রকাশ হয়েছে ড. মাহবুব উল্লাহর ‘পূর্ব বাংলার বাম ও কমিউনিস্ট আন্দোলন ১৯৪৭-১৯৭১: সাফল্য ও ব্যর্থতা’। বাংলা একাডেমি থেকে এসেছে মুর্শিদা বিনতে রহমান রচিত ‘স্বাধীনতার পথে বঙ্গবন্ধু: পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭০-এর নির্বাচন’। কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘ভালোবাসা-২’ ও ‘ভালোবাসা-৩’। অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে পীর হাবিবুর রহমানের ‘বলিউডের ট্র্যাজিক প্রেম’। অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে আনজীর লিটনের ‘ছড়াসমগ্র-৩’। সবুজ সমুদ্রের মুজিব ও জলচোখ বই জবি সংবাদদাতা জানান, এবারের বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে মুহম্মদ ফয়সল আকন্দ দুটি বই। একটি ‘সবুজ সমুদ্রের মুজিব’ অপরটি ‘জলচোখ’। লেখক একই হলেও দুটি বইয়ের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। ‘সবুজ সমুদ্রের মুজিব’ ও ‘জলচোখ’ বই দুটি প্রকাশ করছে বিভাস এবং প্রচ্ছদ করেছেন পিয়াস খান। বইমেলার ৩৮২-৩৮৩ নম্বর স্টলে বই দুটি পাওয়া যাচ্ছে।
×