ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামী বছরকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হবে : পর্যটন প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আগামী বছরকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হবে : পর্যটন প্রতিমন্ত্রী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ২০২১ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি প্রাপ্তির পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং পর্যটন বিষয়ক ম্যাগাজিন 'ভ্রমণ' এর যৌথ আয়োজনে 'বাংলাদেশের পর্যটন : সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন পর্যটন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'পর্যটন প্রতিযোগিতার বাজার, যে যত বেশি সেবা দেবে, তাঁর দিকেই ঝুঁকবে পর্যটক। সেবার মান নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটন বিকশিত হবে। আগে হয়নি বলে বর্তমানে হবে না, এটি কোন কথা নয়। ইচ্ছা, উদ্যম ও পরিশ্রম থাকলে সব কিছু অর্জন করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং কর্মে এ দেশ আজ সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং, আমরা যদি পরিশ্রম করি, উদ্যমী হই পর্যটনে অবশ্যই দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা সম্ভব।' পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এতোদিন নানা কারণে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ হয়নি। তবে এই শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করা হবে। সকল স্টক হোল্ডারদের সুপারিশ শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, ছোট কাটরা, জাতীয় সংসদ ভবনসহ সকল ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনা ব্র্যান্ডিং করা হবে।' প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। দেশের প্রতিটি জায়গায় প্রতিটি কোণে এখন পর্যটকরা নিরাপদে বিচরণ করতে পারছেন। টুরিস্ট পুলিশ গঠন করায় পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।' মাহবুব আলী বলেন, 'পর্যটন নিয়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের সম্ভাবনা ও ঘাটতির জায়গাগুলো তারা চিহ্নিত করবে। তারা আমাদের পরামর্শ দেবে, সেটা আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করবো। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা ছাড়া পর্যটনের বিকাশ সম্ভব নয়। পর্যটন বিকাশের জন্য আমাদেরকে জাতি হিসাবে পর্যটনবান্ধব হতে হবে।' তিনি বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ কাজে লাগাতে পারলেই দেশ এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পর্যটন এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া পর্যটন কর্পোরেশনকে অবশ্যই পর্যটনের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে ও উদ্যমী হতে হবে। গতানুগতিক কাজের মাধ্যমে পর্যটনের সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। আমরা পর্যটনের দৃশ্যমান উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।' অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক বলেন, 'সত্যিকার অর্থে পর্যটনকে এগিয়ে নিতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এজন্য প্রত্যেক বাংলাদেশিকে দায়িত্ব নিতে হবে। গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে হবে, যাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব না জন্মায়।' সিনিয়র বলেন, 'আমাদের দেশে পর্যটকদের জন্য প্রকৃত অর্থে সেরকম কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। কক্সবাজারে পর্যটন করপোরেশনের মোটেলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রতিটি পর্যটন আকর্ষণে পর্যটকদের উপযুক্ত বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আরো জানান, আগামী এপ্রিল থেকে সরাসরি সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট চালু করা হবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ৯১২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ডিজাইনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে একটা ডিজাইন দেবে। কক্সবাজার বিমানবন্দর ২৪ ঘন্টা চালু রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অতি দ্রুত কক্সবাজার থেকে ২৪ ঘন্টা ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। তিনি বলেন, 'পর্যটনকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। দেশীয় স্থাপনা ও সম্পত্তির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। আমরা আমাদের পর্যটন বিকাশের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সফলতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি।' ট্রাভেল ম্যাগাজিন 'ভ্রমণে'র সম্পাদক আবু সুফিয়ানের উপস্থাপনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ, পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাস, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোকাব্বির হোসেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান ও গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নওয়াজিশ আলী খান প্রমুখ।
×