ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন ও পাপের ফল ভোগ করছেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন ও পাপের ফল ভোগ করছেন খালেদা জিয়া

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পথ ছেড়ে সঠিক রাজনীতির পথে ফিরে আসার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সুযোগ পেলেও ভয়াল দুঃশাসনের কারণে বিএনপি ও দলটির নেত্রী খালেদা জিয়া আজ সবক্ষেত্রে ব্যর্থ। দুর্নীতির কারণে কারাগারে বসে বিএনপি-জামায়াতের পাপের ফল ভোগ করছেন খালেদা জিয়া। আগামী ১০ বছর শুধু নয়, শত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করলেও বিএনপিকে আর কোনদিন ক্ষমতায় আসার সুযোগ দেবে না দেশের জনগণ। কারণ দেশের জনগণ কোন সময় অতীত দুঃসময় ও অসময়ের কথা ভুলে যায় না। বিএনপির উচিত- অতীত কৃতকর্মের জন্য দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সরকারি দলের সামছুল আলম দুদু, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ প্রমূখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে মোহাম্মদ নাসিম মুজিব বর্ষের কর্মসূচিতে সংসদ সদস্যদের অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব রেখে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক পাহাড়-পর্বত পার করে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা উন্নয়নে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও ঋণখেলাপীদের দৌরাত্ম কেন দূর করতে পারছি না। ঋণখেলাপী ও অর্থলুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কোন অভিযোগ আমাদের শুনতে না হয়। নারী-শিশু নির্যাতন ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রলম্বিত বিচার নয়, ধর্ষকদের দ্রুত ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। সড়ক দূর্ঘটনাও ঠেকানো যাচ্ছে না। কোন ফ্রাঙ্কেস্টাইনদের কারণে সড়ক আইন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, কেন চরম দন্ড বাস্তবায়ন করতে পারছি না? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এ ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সংসদে বিএনপির বন্ধুরা আছে। তাঁরা সংসদে ভাল ভাল কথা বললেও বাইরে তাদের অন্য চেহারা। সংসদে যখন কথা বলে তখন মনে হয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা কথা বলছেন। কিন্তু বাইরে গেলেও উল্টো সুর। তিনি বলেন, সরকারের ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু দূরদর্শী, সাহসী ও প্রজ্ঞাবান একজন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন বলেই দেশ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর সফল নেতৃত্বে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি-জামায়াতের ঘরও আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। তাই বিএনপিকে বলবো- আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনাদের নেত্রী (বিএনপি) সুযোগ পেলেও ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা ক্ষমতা থেকে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিনি, প্রতিশোধ নেইনি। কিন্তু বিএনপির আমলে আমাদের প্রত্যেক নেতার শরীর নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। ১৪ দলের এই কেন্দ্রীয় মুখপাত্র বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন করেছে, গণধর্ষণ চালিয়েছে। হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে দুর্নীতির রাজ্যে পরিণত করেছিলো। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে হত্যার জন্য ২১ আগস্টে ভয়াল গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছরের দুঃশাসন ও পাপের ফল এখন ভোগ করছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে বসে। ক্ষমতায় থাকতে অন্যের বিচার তো দূরের কথা, স্বামীর (জিয়া) বিচার পর্যন্ত করেনি। তাই বিএনপিকে বলবো- এসব অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চান। ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে তিনি বলেন, উনি তো নিজেই হাঁটতে পারেন না। তিনি কীভাবে লাথি মেরে সরকারকে ফেলে দেবেন? আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা করতাম, তার মুখে এসব কথা মানায় না। উনি এখন অন্য দলের হয়ে (বিএনপি) ভাড়া খাটার ব্যবসায় নেমেছেন। দুই সিটি নির্বাচনে ভোট কম পড়ার কারণ অনুসন্ধানের দাবী জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কী কারণে ভোটাররা বিমূখ হলো তা খতিয়ে দেখতে হবে। ভোটবান্ধব থেকে কেন দূরে যাচ্ছি? এমপিদেরও উপলব্ধি করতে হবে কেন কম ভোট পড়লো? কারণ একজন রাজনীতিবিদের কাছে ভোটার ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গীবাদ, মিথ্যাচার ও উস্কানীমূলক বক্তব্যে দিয়ে কোন কাজ হবে না। এসব কাজের কারণে বিএনপি এখন জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। বিএনপির নির্যাতনে আমরা রক্তাক্ত হয়েছি, কিন্তু আমরা কখনো অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করিনি, ভয়াল নাশকতা চালাইনি। দেশের মানুষ দুঃসময় ও অসময়ের কথা ভুলে যায় না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এবং বিরোধী দলে থাকতে যেসব কাজ করেছে- আগামী ১০ বছর তো বটেই, জনগণ আর কোনদিন বিএনপিকে কোন সুযোগ দেবে না। সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। কিন্তু তখন অনেক নেতাই ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারে না। ঋণখেলাপীর কারণে সরকারের অনেক বদনাম হচ্ছে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তারা ফেরত দিচ্ছে না। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে বার বার অর্থ ও সময় বৃদ্ধি করতে হয়। এতে উন্নয়নের কাজ বিলম্বিত হয়। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহত হওয়া বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ রাষ্ট্রপতিকে সাদা মনের মানুষ আখ্যায়িত করে বলেন, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে দেশে গণতন্ত্রহীনতা, আইনের শাসন নেই, ব্যাংক- শেয়ারবাজারসহ অর্থনৈতিক লুটপাটের কথা বলেননি। বর্তমান সরকারের আমলে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। সরকার ভোট থেকে ভয় পায়। এ কারণে জনগণ ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট। এ কমিশনের ওপর জনগণের কোনই আস্থা নেই। বিএনপি পরাজিত হয়নি, বরং যারা জনগণের ভোট কেড়ে নিয়েছে তারাই পরাজিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক ঐক্যের কথা বলেছেন, কিন্তু কার সঙ্গে ঐক্য? জাতীয় পার্টি তো সরকারের বর্ধিত অংশ। ঐক্য করতে হলে বিএনপির সঙ্গেই করতে হবে। তিনি মারাত্মক অসুস্থ্য কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবী জানান। হুইপ আতিউর রহমান আতিক বলেন, বাংলাদেশ সব সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আর এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী, সৎ, প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব ও দেশপ্রেমের কারণে। মাত্র ১০ বছরেই দেশের দেশের চিত্র পাল্টে গেছে। কোন অশুভ শক্তিই দেশের এই অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করতে পারবে না।
×