ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের কপি মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে হস্তান্তর

প্রকাশিত: ১১:০১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের কপি মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে হস্তান্তর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ের অনুলিপি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট। এখন তা গবেষক ও দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। হাইকোর্টের বৃহত্তর বিশেষ বেঞ্চের বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকীর মাতৃভাষা বাংলায় লেখা ১৬ হাজার ৫শ’ ৫২ পৃষ্ঠার ৩৩টি ভলিউমে রায়ের কপি সোমবার বেলা ১১টার সময় তুলে দেন সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। অনুলিপি গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী। সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে গিয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলীর নিকট পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় করা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকীর মাতৃভাষা বাংলায় লেখা ১৬,৫৫২ পাতার রায়ের কপির ৩৩টি ভলিউম হস্তান্তর করেন। এ সময় আমাই মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী ভলিউমগুলো গ্রহণ করে তাদের স্বাগত জানান। অনুলিপি গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেনÑ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) শফীউল মুজ নবীন, উপপরিচালক মাহবুবা আক্তার, নাজমুন নাহার ও মিজানুর রহমান। অন্যদিকে, সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে রায়ের অনুলিপি হস্তান্তরকালে উপস্থিত ছিলেনÑ সুপ্রীমকোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার ওমর হায়দার ও বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়ায় মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি সমৃদ্ধ জাদুঘর ও একটি বিশ্বের লিখন-বিধি আর্কাইভ রয়েছে। রায়ের অনুলিপি বিশ্বের লিখন-বিধি আর্কাইভে গবেষক ও দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু বিচারকগণকে সহজ ভাষায় বাংলায় রায় লেখার কথা বলতেন। বৃহৎ ও বাংলায় এই রায় প্রদানের মাধ্যমে জাতির পিতার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রায়ের অনুলিপি হস্তান্তরকালে সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকীর লেখা ২৭ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ শব্দের যুগান্তকারী এ রায় বিশ্বের বিচার বিভাগের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ হিসেবে ইতোমধ্যেই একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ভাষার মাসে রায়ের কপি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হলো। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের ইতিহাসে মাতৃভাষা বাংলায় লেখা এ রায় যেমন প্রথম তেমনি আনুষ্ঠানিক রায়ের অনুলিপি প্রদানের ঘটনাও এটিই প্রথম। তিনি জানান, প্রধান বিচারপতি এই প্রথম একটি অনুবাদ সেল গঠন করেছেন। সেখানে সুপ্রীমকোর্টের রায়গুলো ইংরেজীতে প্রদান করা হলেও পরে তা বাংলায় অনুবাদ করা হবে। যাতে সাধারণ মানুষ তা সহজেই জানতে ও বুঝতে পারে। বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেন এবং বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নবেম্বর উন্মুক্ত আদালতে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। তারও দুই বছর পর গত ৮ জানুয়ারি সকালে তিন বিচারপতির সই করা পূর্ণাঙ্গ রায়টি সংশ্লিষ্ট শাখা প্রকাশ করে। বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকীর বাংলায় লেখা ১৬ হাজার ৫৫২ পাতার রায়ে মামলার প্রেক্ষাপট, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও নৃশংসতার সচিত্র পর্যবেক্ষণ, প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক আইনের প্রয়োগ এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণের সঙ্গে বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার একমত পোষণ করেছেন।
×