ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এখন প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এখন প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কৃত্রিম নয়, প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। কিছুদিন পর পরই শোনা যায় প্রাণিকুল ডিম ফোটাচ্ছে, না হয় বাচ্ছা প্রসব করছে। শুরু থেকে এই চিড়িয়াখানার ত্রিশ বছর সময়ে এ ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। এর মূল কারণ হচ্ছে, বন্য প্রাণীকে প্রাকৃতিক আদরে কৃত্রিম স্থানেও চিকিৎসা ও পরিচর্যা করায় প্রজনন বাড়ছে। আর সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে অন্য প্রাণীর বংশ বৃদ্ধির। বড় ধরনের প্রাণী ছাড়াও খুদে পাখিরাও প্রজননে ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে না। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ফয়’স লেক সংলগ্ন একমাত্র এই চিড়িয়াখানায় পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। এই কৃত্রিম অভয়ারণ্যও নতুন পাখির প্রজন্মে ভরে যাচ্ছে। এতে আগত পর্যটকরাও উৎসুক হয়ে প্রাণিকুলের তথা অজগরের বাচ্চা আর বাঘের শাবক দেখে দেখে সম্প্রতি অত্যধিক সময় কাটিয়ে দিচ্ছে খাঁচার সামনে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এ চিড়িয়াখানায় দুটি ডোরাকাটা বাঘ আনা হয়েছিল। এরমধ্যে পুরুষ বাঘটির নাম রাখা হয়েছিল রাজ আর স্ত্রী বাঘটির নাম রাখা হয়েছিল পরী। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই দুটি ব্যাঘ্রশাবক জন্ম নিয়েছিল রাজ ও পরীর সংসারে। প্রকৃতির আশীর্বাদে এ দম্পতি আবারও দুটি শাবকের জন্ম দিয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর। তবে এদের দেখাশোনা করছে রাজ ও পরীর পাশাপাশি কিউরেটররা। পর্যটকদের অনেকেরই অজানা রয়েছে ব্যাঘ্রশাবকের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফোটে না। এতে কিছু সময় অতিবাহিত হয়। খড়ের তৈরি গাদায় এসব শাবককে রক্ষণাবেক্ষণ করছেন কিউরেটররা। সময়মতো বোতলে পুরে দুধ যেমন খাওয়ানো হচ্ছে তেমনি চিকিৎসা সেবা ও শুশ্রƒষার মাধ্যমে এদেরকে দ্রুত সবল করার চেষ্টা চলছে এমনটি জানালেন হাটহাজারী উপজেলার ইউএনও এবং চিড়িয়াখানার সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন। কৃত্রিম স্থানে প্রাকৃতিক প্রজনন প্রসঙ্গে সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, শুধু বাঘের শাবকই নয়, এই চিড়িয়াখানায় অজগরও ২৬টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। চিড়িয়াখানার পক্ষ থেকে প্রজননের যথেষ্ট সুযোগ, সুবিধা ও চিকিৎসা সেবা দেয়ায় আগামীতে অন্য প্রাণীদেরও শুভ সংবাদ পাওয়া যাবে এমনটিই আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পাখির অভয়ারণ্যেও প্রজনন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মোট ২০টি অজগর ছিল। গত বছরের এপ্রিল মাসে এসব অজগর ৩৫টি ডিম পেড়েছে। বাচ্চা ফোটানোর উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ এসব ডিম খাঁচা থেকে সরিয়ে ইনকিউবেটরে রাখেন। উল্লেখ্য, এর আগেও অজগর ডিম পাড়লেও বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার বাচ্চা ফোটাতে ইনকিউবেটরে নজর রাখা হয়েছে কৌতূহলীভাবে। অজগরের বাচ্চা প্রজননের জন্য বিভিন্ন তাপমাত্রায় ৬০ দিন পার হওয়ার পর দেখা গেল ৯টি ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু বাকি ২৬টি ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ক্রমশ এসব বাচ্চা বেরিয়ে আসার পর আবার এদের খাঁচায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রজনন বিষয়ে জানা গেছে, ডিম থেকে বাচ্চা বেরিয়ে আসার পর পনেরো দিন পার হতেই এরা চামড়া বদল করে। ধীরে ধীরে খাবার খেয়ে এরা বড় হতে থাকে। এক্ষেত্রে প্রায় তিনমাস নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে হয়য কর্তৃপক্ষকে। চিড়িয়াখানায় আগত পর্যটকরা জানিয়েছেন, বাংলা বর্ণমালা শিখতে গেলে শুরুতেই ‘অ’ বর্ণের সঙ্গে অজগর শব্দটি চলে আসে। প্রবীণরা শিশুদের ভয় লাগাতেও এ শব্দ পড়ানোর সময় উচ্চৈস্বরে আওয়াজ তোলেন। এমনও প্রশ্ন উঠিয়েছে শিশুরা, সাপে ডিম পাড়ে না বাচ্চা দেয়। চিড়িয়াখানায় প্রতিনিয়ত অজগরের বাচ্চাগুলোকে দেখতে পর্যটকদের ভিড় অত্যধিক। সম্প্রতি ২০২০ নতুন বছরের শুরুর প্রাক্কালে চিড়িয়াখানার আবদ্ধ খাঁচায় দুটি ব্যাঘ্র শাবকের জন্মের খবর শুনে কৌতূহল বেড়ে গেছে আগতদের।
×