ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কিত রাজাকার তালিকা প্রকাশ নিয়ে সংসদে তোপের মুখে মন্ত্রী মোজাম্মেল

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

বিতর্কিত রাজাকার তালিকা প্রকাশ নিয়ে সংসদে তোপের মুখে মন্ত্রী মোজাম্মেল

সংসদ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে বিতর্কিত রাজাকারের তালিকা প্রকাশ নিয়ে সংসদে কিছুটা তোপের মুখে পড়েছিলেন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সরকারী দলের সংসদ সদস্যদের ক্ষোভের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী আবারও বিতর্কটি উস্কে দিয়ে বলেছেন, রাজাকারের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা সক্রিয় ছিল কিনা, তা শুধু যাচাই করার ব্যাপার। তবে ওনাদের নাম যে তালিকায় আছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে ডকুমেন্টারি এভিডেন্স আছে। বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, দুঃখ প্রকাশ করে ইতোমধ্যে তালিকাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সবার সহযোগিতা নিয়ে যাচাই-বাছাই করেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী দায় এড়িয়ে বলেন, রাজাকারের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রণয়ন করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ হতে ১০ হাজার ৭৮৫ রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের একটি তালিকা এ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। প্রাপ্ত তালিকা হুবহু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উক্ত তালিকা প্রস্তুত করেনি সেহেতু কারও গাফিলতি থাকলে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এমন প্রশ্নের জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্নকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেই, কথাটি সরাসরি বলা যায় না। কারণ, ওই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এটা প্রকাশ হয়েছে। এ তালিকা সঠিক আছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। প্রকৃত রাজাকাররা এই তালিকায় আসেনি। জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি আগেই দুঃখ প্রকাশ করে সেই তালিকা প্রত্যাহার করে নিয়েছি ভুলত্রুটি থাকার কারণে। ভবিষ্যতে যাতে আর ভুলত্রুটির পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য আমরা সকলের সহযোগিতা নিয়ে এবং সম্পূর্ণরূপে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করব। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও সরকারী দলের সংসদ সদস্য মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমও অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল আমরা কোন তালিকা তৈরি করব না। আমাদের লক্ষ্য ছিল যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তাদের তালিকা বিদ্যমান আছে সেই তালিকা প্রকাশ করতে হবে। আমি মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। কেননা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি দিয়েছে সেটা আমরা জানি না, যেহেতু মালিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাই তারাই তালিকাটি প্রকাশ করতে পারত। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী কেন সেটা প্রকাশ করলেন? উনি (মন্ত্রী) সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি, পারবেনও না। জবাবে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সংসদে আমি এই কথাই বলেছিলাম। আমরা কোন তালিকা তৈরি বা প্রকাশ করব না। ঘটনাটাও তাই হয়েছে। আমরা যেটা পেয়েছি সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও প্রণয়ন করেনি, তাদের কাছে যা সংরক্ষিত ছিল তাই দিয়েছে। তালিকায় যাদের নাম গিয়েছে তারা শুধু সক্রিয় ছিল কিনা, তা শুধু যাচাই করার ব্যাপার। তবে ওনাদের নাম যে তালিকাতে আছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে আমার যেটা অভিজ্ঞতা হয়েছে তালিকা করতে, তখন মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে চাওয়া হয়েছে, কারা কি করবে? তারা সমানে তাদের অজ্ঞাতেই হয়তবা অনেকের নাম দিয়েছে। সেজন্যই এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাচাই-বাছাই করেই তালিকা প্রকাশ করব।
×