ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. আইরিন পারভীন লোপার হাফ সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ১২:১৯, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

ড. আইরিন পারভীন লোপার হাফ সেঞ্চুরি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অন্যতম নন্দিত নাট্য ব্যক্তিত্ব ড. আইরিন পারভীন লোপার ৫০তম জন্মদিন আগামীকাল। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার চিলেকোঠায় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই নাট্য ব্যক্তিত্বকে শুভেচ্ছা জানানো হবে। আগামীকাল সন্ধ্যায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারমান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীসহ নাট্য অঙ্গনের মানুষরা। পুরানো ঢাকার অতন্ত সংস্কৃতিমনা সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৭০ সালের ১৭ জানুয়ারি ড. আইরিন পারভীন লোপার জন্ম জন্ম। বাবা মৃত খলিলুর রহমান, মাতা জিলফাতুন নেছা। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে মঞ্চে গান পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতি অঙ্গনে বিচরণ। পরবর্তীতে পুরানো ঢাকার প্রতিদ্বন্দ্বীর নাট্যদলে মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে মঞ্চে অভিনয় করেন। ছয় বছর বয়স থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘নতুন কুড়ি’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতি পদচারনার শুরু হয় । ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি’, ‘কচিকাঁচার মেলা’, চাঁদের হাট, ‘খেলাঘর’সহ বিভিন্ন শিশুতোষ সংগঠনের হয়ে গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি ও অভিনয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরষ্কার অর্জন করে। আট বছর বয়সে শিশুদের নাট্য সংগঠন শিশুতীর্থ হয়ে নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির জাতীয় শিশুশিল্পী পুরষ্কার অর্জনসহ স্কুল ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কয়েকবার শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরষ্কার লাভ করেন। মঞ্চ, টিভি মিডিয়া ছাড়াও শিশুশিল্পী হিসেবেও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমানের ‘দিন যায় কথা থাকে’। এরপর ‘দেবদাস’, ‘বিজয়ীনি সোনাভান’ এবং পরবর্তীতে ‘সুভা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কৈশোর উত্তীণ হবার পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে পুনরায় থিয়েটার (আরামবাগ ) এর হয়ে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। এ দলের নিয়মিত প্রায় সব প্রয়োজনা ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’, ‘রাক্ষুসী’, ‘বটবুক্ষের ধরমকরম’, ‘খামাখা খামাখা’ নাটকে অভিনয় করা ছাড়াও ‘কিং লিয়র’ ও ‘রূপভান’ নাটকে নেপথ্যে কাজ করেন । ১৯৯৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ লাভ করেন। নাট্যকলায় অনার্সসহ মাস্টার্স পাশ করেন প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান লাভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ভারতের প্রখ্যাত নাট্যজন অধ্যাপক আশোক মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন নাট্যকলা বিভাগের প্রতিটি প্রযোজনায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। তার মধ্যে আশোক মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় কবিগুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিরকুমার সভা’ নাটকে নীরবালা চরিত্রে অভিনয় করে ভারতের সুধীমহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এই নাটকের ৭০টির অধিক প্রদর্শনীতে অভিনয় করার সুবাদে ভারতের প্রায় সব অডিটোরিয়ামে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। শুধু তাই নয় ‘চিরকুমার সভা’ নাটকে নীরবালা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমী প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ মঞ্চ অভিনেত্রীর পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ভারতে পড়াকালীন সময়ে প্রখ্যাত নির্দেশক রতন থিয়াম, বিভাস চক্রবর্তী, আশোক মুখোপাধ্যায়, ঊষা গাঙ্গুলী ও মনোজ মিত্রসহ বহু খ্যাতিমান নির্দেশকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। উক্ত সময়ে লন্ডনের বয়াল শেক্সপিয়ার থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গে শেক্সপিরিয়ন ড্রামা বিষয়ক মাসব্যাপী কর্মশালায় কাজ করার বিরল সুযোগ লাভ করেন। ২০১০ সালে কয়েকজন সমমনা নাট্যবন্ধুদের নিয়ে গঠন করেন পেশাদারী নাট্যচর্চার নাট্যদল ‘নাট্যম রেপার্টরি’। এ দলের প্রথম প্রযোজনা ‘দমের মাদার’ এবং দ্বিতীয় প্রযোজনা ‘সাইকেলআলা’ এখন নিয়মিত মঞ্চায়িত হচ্ছে। ত্তৃীয় প্রযোজনা ‘প্রলম্বিত প্রহর’ মঞ্চায়নের প্রস্তুতি চলছে। এতে অভিনয় করছেন প্রখ্যাত নাট্যজন মঞ্চসারথী আতাউর রহমান । গুণী নাট্য ব্যক্তিত্ব ড. আইরিন পারভীন লোপার নির্দেশনায় সম্প্রতি মঞ্চে এসেছে নতুন নাটক ‘বাঘ’। নাসরিন মুস্তাফা রচিত নাটকটি প্রযোজনা করেছে দৃশ্যকাব্য। আইরিন পারভীন লোপা বাংলাদেশের গুণী একজন নাট্যপ্রাণ মানুষ। নির্দেশক হিসেবেই ক্রমেই বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গণকে ঋদ্ধ করছেন। মঞ্চে প্রায় ৭০টির অধিক নাটকের পোষাক পরিকল্পনার কাজ করেছেন, মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন ১৪টিতে, আলোক পরিকল্পনা করেছেন ১৫টিতে, ২৫টির অধিক নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টিভি চ্যানেলে তিনশতাধিক খন্ড ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন। শিশুশিল্পী থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা মাধ্যমে কাজ করে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন লোপা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সম্মাননা’, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন দর্শক ফোরাম সন্মাননা’, ‘নাট্যতীর্থ সম্মাননা’,‘ময়মনসিংহের অনস্বাবল থিয়েটার সম্মাননা’, ‘কুমিল্লার প্রতিবিম্ব থিয়েটার সম্মাননা’, ‘কবি জসিম উদ্দিন সম্মাননা’, থিয়েটার প্রণীত ‘জাকারিয়া পদক-২০১৪’, জাপান থেকে ‘উচিসুরা পদক-২০০৮’, ‘কোমিও হাপ্পে পদক-২০১১’সহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। অতিথি শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, কোরাস রেপার্টরি গুরুকুল ইস্মফল, মনিপুর। এছাড়াও নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন আবদুল্লাহ আল মামুন থিয়েটার স্কুল এবং এন এন আই ডি তে। সব মিলিয়ে নাট্য জগতে অবাধ বিচরণ করছেন লোপা। জন্মদিন উপলক্ষে গুণী এই নাট্য ব্যক্তিত্বের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
×