ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেশাজীবীদের সঙ্গে ১৪ দলের মতবিনিময়

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের জোয়ারে অপশক্তি ভেসে যাবে

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের জোয়ারে অপশক্তি ভেসে যাবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ যারা জাতির মীমাংসিত বিষয় মানবে না, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করবে না, ২৬ মার্চকে স্বীকার করবে না, যারা একাত্তরের গণহত্যা স্বীকার করবে না, যারা সংবিধানের চার মূলনীতি মানবে না- তারা বাংলাদেশে রাজনীতি-সমাজনীতি করতে পারে না। এটাই জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর চ্যালেঞ্জ। তাই মুজিববর্ষে পুরো জাতি এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ও ঐকমত্য হলে বিএনপি-জামায়াতসহ স্বাধীনতা-বিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশের রাজনীতি-সমাজনীতি থেকে ভেসে যাবে, আবারও সেই একাত্তর-বাহাত্তরের বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে। বঙ্গবন্ধুর জš§শতবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে যে জোয়ারের সৃষ্টি হবে তার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের মতো অপশক্তিগুলো এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মুজিববর্ষ পালনে বিভিন্ন কর্মসূচীর প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকা-, তাঁর চিন্তা-চেতনা, তিনি যে জাতীয় চার মূলনীতি নিয়ে সংবিধান রচনা করেছেন তা আলোচনার মধ্য দিয়েই জাতির পিতা তথা বাংলাদেশের মূল রাজনীতির ধারাটা চলে আসবে। যারা সব সময় স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে, বাংলাদেশকে মানে না, তাদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে হবে। তিনি বিএনপি-জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কারা কি মানল বা না মানল, এটা এখন দেখার ব্যাপার নয়। তার কারণ একটি পরিবারের পাঁচ সন্তান থাকলে তার ভেতর একটা কুলাঙ্গারও থাকে এবং সেই কুলাঙ্গার সন্তান ভীতিতেই থাকে। তার কোন অস্তিত্ব শেষ পর্যন্ত থাকে না। পরিবারের কাছেও না, সমাজের কাছেও না। দেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের অবস্থাও ঠিক তেমনি। তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধীর জন্মশতবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী যেভাবে বিজেপির মতো একটি কঠিন সাম্প্রদায়িক শক্তি পালন করছে, এটা দেখে কিন্তু আমাদের দেশের তথাকথিত ওই শক্তির (বিএনপি-জামায়াত) কোন চেতনা আসে না। অর্থাৎ যে কুলাঙ্গার, সে কুলাঙ্গারই থাকবে। মতবিনিময় সভায় গৃহীত কর্মসূচী ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। কর্মসূচী অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর জš§শতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় সারাদেশে একযোগে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচী পালন করবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। কেন্দ্রীয়ভাবে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন করে শোভাযাত্রাসহকারে ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে যাওয়া হবে। সেখানে স্থাপিত স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন নেতৃবৃন্দ। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১৪ দলের আরও কর্মসূচী জাতীয় কর্মসূচীর সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে বলে জানান মোহাম্মদ নাসিম। সভাপতির বক্তৃতায় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা এখানে ভোট চাইতে আসিনি। তবে মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি পরাজিত হতে পারে না। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতির পিতার অবদান তুলে ধরে বলেন, ধর্মের নামে রাজনীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর যে একেবারে অবিচল অবস্থা, এটা কিন্তু ভুলেই যেতে বসেছি বিভিন্নভাবে। বঙ্গবন্ধু বলতেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাব, এটা কিন্তু কথার কথা ছিল না। সর্বোপরি তিনি কথা রেখেছিলেন এবং করে দেখিয়েছিলেন, সেটাই হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, যারা জাতির মীমাংসিত বিষয় মানবে না, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করবে না, যারা সংবিধানের চার মূলনীতি মানবে না- এদের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সর্বস্তরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। রাজাকার, জঙ্গী এবং জামায়াত ও তার দোসরদের সঙ্গে সবরকম রাজনৈতিক লেনদেন ছিন্ন করি। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে সর্বত্র প্রতিরোধ করে পরাজিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপির সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকী, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ. কামরুল আহসান খান, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মুকুল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতা অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী, প্রকৌশলী এ কে এম আবদুল মোতালিব, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা।
×