ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইরাক, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জটিলতম অবস্থার মুখে

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৪ জানুয়ারি ২০২০

ইরাক, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জটিলতম অবস্থার মুখে

চরম অর্থনৈতিক দূরবস্থা, লাগামহীন দুর্নীতি ও বিদেশী শক্তি ইরানের মাত্রাতিরিক্ত হস্তক্ষেপ ইরাকে চলমান বিক্ষোভের জন্য দায়ী। সম্প্রতি রকেট হামলায় মার্কিন কন্ট্রাক্টরের মৃত্যু এবং মার্কিন বিমান হামলায় ইরানপন্থী এক ইরাকী মিলিশিয়ার মৃত্যুর ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরাকীদের বিক্ষোভের পথে ধাবিত করে। এরপর গত সপ্তাহে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনা বিক্ষোভকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চূড়ান্তরূপে প্ররোচিত করে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। বিমান হামলা ও দূতাবাসে হামলার ঘটনায় মূলত ইরানপন্থী মিলিশিয়ারা জড়িত। এ ঘটনায় নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েকবছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সমস্যায় পতিত হলো এবং ইরাককে ও তার প্রতিবেশী দেশ ইরানকে এক জটিল সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এদিকে ইতিহাসের সবচেয়ে জটিলতম অবস্থার মুখে নিপতিত হলো ইরাক, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক। এই ত্রিদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন ভাঙ্গনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। গত শুক্রবার ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কিরকুকের কাছে ইরাকী সেনাবাহিনীর একটি ঘাটিতে অন্তত ৩০টিরও অধিক রকেট হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত মার্কিন বেসামরিক এক কন্ট্রাকক্টর নিহত ও ইরাকী দুই সরকারী কর্মকর্তাসহ চারজন আহত হয়। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানপন্থী মিলিশিয়া গ্রুপ কাতেব হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছে। এদিকে ওই জঙ্গী গ্রুপের এক মুখোপাত্র জানিয়েছেন, এ হামলার ঘটনায় তাদের কোন রকম সম্পৃক্ততা নেই। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি গত মঙ্গলবার টুইটারে এক বার্তায় বলেন, ‘ইরান যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং বহু মানুষকে আহত করেছে।’ যাইহোক না কেন, ওই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রও পুরো দমে যাইনি। তারা এ পাল্টা জবাব হিসেবে বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মার্কিন এই বিমান হামলাকে ‘চূড়ান্ত জবাব’ বলে অবিহিত করেছেন। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে এমন কাজ করবে না যা মার্কিন নর-নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়। ইরাকে প্রভাব বিস্তার, ইরানের পরমাণু ইস্যু ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বৈরি সম্পর্ক চলছে। আর এই সম্পর্ক আরও বেশি মাত্রা নিয়েছে বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে। এই ট্রাম্প প্রশাসনই ২০১৫ সালে করা পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং তেহরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে অতি সম্প্রতি ইরাকে মার্কিন বিমান হামলার ঘটনা সব কিছুকে যেন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়েছে এবং সেখানকার মানুষের চাপা ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে। দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও পেশাগত সঙ্কটসহ প্রভৃতি কারণে গত ১৬ বছর ধরে দেশটির মানুষের মনে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ ছিল, আর এর মধ্যেই সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার ঘটনা চলমান গণবিক্ষোভকে তরান্বি^ত করেছে। তেহরান ও ওয়াশিংটনের শীতল লড়াইয়ের চাপে পড়ে ইরাক এখন অনেকটা ধরাশায়ী হয়ে গেছে। বাগদাদের ভাগ্য তাই এখন অনিশ্চিত বৈকি। ইরানের শিয়া ধর্মীয় প্রধান আয়াতুল্লাহ আলী আল-হোসাইনী আল-সিসতানি সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইরাককে কখনোই ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র’ তৈরি করা চলবে না। এছাড়া ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল-মেহেদী ওই বিমান হামলাকে ইরাকের মাটিতে সংঘটিত সহিংসতা বলে উল্লেখ করেছেন।
×