ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষের শেষকৃত্য সম্পন্ন

প্রকাশিত: ১২:০৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষের শেষকৃত্য সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘তোমার ঐ মনটাকে একটা ধুলোমাখা পথ করে দাও’, ‘তুমি হারিয়ে যাওয়ার সময় আমায় সঙ্গে নিও’, ‘আমি খুঁজে বেড়াই আমার মা’, ‘এই করে কেটে গেল বারোটি বছর’, ‘দেহ মাদল’ প্রভৃতি জনপ্রিয় গানের সুরস্রষ্টা বাসুদেব ঘোষ। রবিবার রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষ। দীর্ঘদিন থেকেই হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। রবিবার রাত ১০টার দিকে তিনি নিজ বাসায় অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত ১১টার দিকে বারডেম হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, বাসাতেই এই বরেণ্য শিল্পীর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে আসার পর তা নিশ্চিত হয়। সোমবার সকালে অকালপ্রয়াত এই সুরস্রষ্টার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামের বোয়ালখালী কানুনগো পড়ার ধরলা গ্রামে তার নিজ বাড়িতে। সেখানেই তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ খবরটি নিশ্চিত করেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গীতিকার আশিক। বাসুদেব ঘোষের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন তিনি। শোকবার্তায় প্রয়াত বাসুদেব ঘোষের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে তার অবদানের কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সঙ্গীতাঙ্গনে। শিল্পী বাপ্পা মজুমদার একটি বার্তায় লেখেন, এ বছর একের পর এক শোক সংবাদ আর নেয়া যাচ্ছে না। শিল্পী কোনাল লিখেছেন, আমি ভাষাহীন। গীতিকবি শেখ রানা লিখেছেন, বাসুদা, আপনার মৃত্যু আমাকে শোকাতুর করে দিল। কত কত মজার স্মৃতি আপনার সঙ্গে। নিত্যদিন আর দেখা হতো না, কথার রেশও কমে গিয়েছিল। তবু আমার সেই স্টুডিও ঘোরা প্রথমদিককার সময়ে আপনার সাহচর্য কী করে ভুলি! আমার হৃদয়ে আপনি সারাজীবন বন্ধু হয়ে থাকবেন। বাসুদা, আপনি পরপারে শান্তিতে থাকুন। এই প্রার্থনা করি। শিল্পী পারভেজ সাজ্জাদ লিখেছেন, সঙ্গীত পরিচালক শ্রদ্ধেয় বাসুদেব ঘোষ, আমাদের বাসুদা নেই...গানটা ইমেল না করেই চলে গেলেন? মা কেমন আছেন কে জিজ্ঞাসা করবে আমাকে? মাত্র ৫১ বছর বয়সেই প্রতিভাবান সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার বাসুদেব ঘোষ তার অনেক কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে গেলেন। ১৯৯৫ সাল থেকে সুরকার বাসুদেব ঘোষ তার কাজ শুরু করেন। বিশেষ করে শাশ্বত ধারার বাংলা গান ও দেশাত্মবোধক গান নিয়েই তার কাজ ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১১ সালে এক হাজারটি দেশের গান নিয়ে সাজানো একটি এ্যালবাম তিনি নিজ উদ্যোগে তৈরি করেন। এ্যালবামের নাম ছিল ‘সূর্যালোকে শাণিত প্রাণের গান’। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন শতাধিক শিল্পী। এটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আয়োজনের দেশপ্রেম সম্বলিত গানের এ্যালবাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২০টি গান তৈরি করছিলেন বাসুদেব ঘোষ। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন সুমনা বর্ধন, সজল দাশ, পিন্টু ইসলাম, গোল্ডেন মণ্ডল, আশিষ সরকার, রুবেল রহমান প্রমুখ। এছাড়া চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার গান নিয়েও বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সমাপ্ত করে যেতে পারলেন না।
×