ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জানুয়ারিতে ফের শৈত্যপ্রবাহ

পাঁচদিন পর সূর্যের দেখা মিলল ক্ষণিকের জন্য

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

পাঁচদিন পর সূর্যের দেখা মিলল ক্ষণিকের জন্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা পাঁচদিন পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষণিকের জন্য সূর্যের দেখা মিলেছে। সূর্যের দেখা মিললেও উত্তরের জনপদে শীতের দাপট কমেনি। তবে রাজধানীতে শীত অনেকটা সহনীয় হয়ে এসেছে। কিছুটা স্বস্তি মিলেছে শীতের হাত থেকে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে তখন তাপমাত্রা আবারও কমবে। ফলে শীতের তীব্রতা আবারও বেড়ে যাবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ জুড়ে আবারও শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বলে আওয়াবিদরা জানান। এবারের ১৮ ডিসেম্বর থেকে হঠাৎই শুরু হয় শীতে দাপট। আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয় উত্তরের হাওয়া জোরদার, ঘন কুয়াশা এবং সূর্যের আলো দেখা না যাওয়ার কারণে এ সময়ে শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শীতের কাঁপন শুরু হয়। আবহাওয়াবিদরা জানান এই সময়ে মূলত ঢাকা বিভাগ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে শীত বেশি অনুভূত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, এই দুই বিভাগে দিনের তাপমাত্রা যেমন কম ছিল তেমনি সর্বোচ্চ এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ব্যবধান অনেক কম ছিল। ফলে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে শীতে প্রচ- দাপট লক্ষ্য করা যায়। তবে সোমবার থেকে ঢাকার তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে সূর্যের দেখা মেলে। অবশ্য আকাশে মেঘের আনাগোনা রয়েছে। এই অবস্থা আবহাওয়াবিরা জানান, দু’একদিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা আবারও কমবে। তখন শীত বাড়বে বলে তারা জানিয়েছেন। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আপাত নেই। আগামী শুক্রবার নাগাদ শীতের দাপট অনেকটা কম থাকবে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের দাপট থাকবে। তারা জানায় সোমবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা চট্টগ্রামের সীতকুন্ডে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে সোমবার থেকে রাজধানীর তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিন রাজধানীর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৪.০২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অপরদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ ডিগ্রী সেলনিসয়াসে। যা গত কয়েদিন ১৬ থেকে ১২ ডিগ্রীর মধ্যে চলে আসে। এ কারণে রাজধানীও প্রচ- শীতের কবলে পড়ে। তবে সোমবার থেকে তাপমাত্রা বাড়ায় রাজধানীতে শীতের তীব্রতা কমে এসেছে। মিলেছে স্বস্তি। সারাদেশে শীতে পরিস্থিতি কুড়িগ্রাম ॥ টানা ৬ দিনের শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। সোমবার দুপুরের দিকে কিছুক্ষণের জন্য রোদ উঠে। এতে মানুষের জীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। তীব্র এ শীতে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কয়েকদিনের প্রচ- শীতের কারণে জেলার ৬শ’ ৭৪টি বয়লার ও লেয়ার মুরগির খামারে শতাধিক মুরগি মারা গেছে। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় আলুর ক্ষেত আর বোর বীজ তলায় ব্যাপক লেট ব্লাইট রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ এ সময় ওই সব ক্ষেতে স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষকদের। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শাহিনুর রহমান সরদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২শ’ ১৬ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঠা-ায় দুর্ভোগ বেড়েছে চরাঞ্চলের মানুষের। এ অবস্থায় খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন তারা। অনেকেই ছুটছেন পুরনো গরম কাপড়ের দোকানে। রাজশাহী ॥ টানা শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি জ্বরসহ ঠা-াজনিত নানা রোগের প্রকোপ। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন। এ অবস্থায় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গঠন করা হয়েছে বিশেষ টিম। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম ফেরদৌস জানান, ঠা-াজনিত কারণে রামেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। তারা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি জ্বরসহ ঠা-াজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। এদিকে তীব্র শীতে অনেকটা স্থবির হয়ে এসেছে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকা-। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। খড়-কুটো জ্বালিয়ে হাত-পা তাপিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতে কাহিল মানুষ। শীতের কারণে অলস বসে আছেন শ্রমিকরা। সকালে নগরীর রেলগেট ও বিন্দুর মোড় এলাকায় দেখা যায় আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন সেখানকার শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন জানালেন, শীতের কারণে বসেই দিন পার করছেন তারা। লালমনিরহাট ॥ বোরো ধানের বীজতলা টানা কুয়াশা আর কনকনে ঠা-ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বহু বীজতলায় চারা হলুদ ও লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও বীজতলায় পচন রোগ ধরেছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চললে বীজতলা নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে কৃষক। তাই কুয়াশা ও ঠা-া থেকে বীজতলা বাঁচাতে কৃষক বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ঠা-ার কারণে অনেক স্থানের বীজতলার চারা হলুদ বর্ণ হয়ে শুকিয়ে যেতে বসেছে। কোথাও কোথাও বীজতলায় পচন রোগ ধরেছে। কৃষকরা বলছেন, বীজতলা রক্ষায় প্রতিষেধক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। কিছুতেই বীজতলা সজিব করা যাচ্ছে না। ঠা-া ও কুয়াশায় বীজতলা রক্ষা করা যাচ্ছে না। বীজতলা পলিথিন পেপার দিয়ে ঢেকে কুয়াশা ও ঠা-া থেকে রক্ষা করছেন। নীলফামারী ॥ টানা ছয় দিনের তীব্র শীতের পর কুয়াশা আর মেঘ ঠেলে নীলফামারীর আকাশে সূর্য উঁকি দিয়েছে। এতে কনকনে শীতের আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়লে জেলার শীতার্ত মানুষজন স্বস্তি ফিরে পায়। কাজে নেমে পড়ে খেটে খাওয়া মানুষ। জেলা শহরের মাদারমোড়ে জুম্মাপাড়া মহল্লার রিক্সাচালক মিজানুর রহমান (৪৫) জানালেন কি শান্তি। ছয়দিন পর সূর্য উঠেছে। রোদের আলো পেয়ে শরীরটা ঝরঝর হলো। তাই রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। এই ছয়দিন কনকন শীতে রিক্সা নিয়ে বের হতে পারিনি। জমানো টাকা দিয়ে সংসারের খরচ বহন করতে হয়েছে। এর শীতের কনকনে ঠা-ায় গত পাঁচদিন ধরে রিক্সা নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। সূর্যের দেখা মেলায় বেশ ভাল লাগছে। সকাল থেকে রোজগারও হয়েছে ভাল। লোকজন ঘর থেকে বের হওয়ায় শহরে কর্ম চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
×