ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আনু পার্টানেন ও ট্রেভর করসন ;###;রূপান্তর : এনামুল হক

পুঁজিবাদের স্বর্গরাজ্য ফিনল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

পুঁজিবাদের স্বর্গরাজ্য ফিনল্যান্ড

২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবেচয়ে সুখী দেশ। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফিনল্যান্ড এমন একটি দেশ হিসেবে ঘোষিত হলো। ফিনিশ নাগরিকরা অসাধারণ উঁচু মাত্রার জীবনের সন্তুষ্টির কথা বলে থাকে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার হিসাবে জীবনের সন্তুষ্টির দিক দিয়ে তাদের স্থান বিশ্বে সর্বোচ্চ। তারপর নরওয়েজীয়, ডেন, সুইস ও আইসল্যান্ডারদের স্থান। বর্তমান ব্যবস্থায় ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী সমাজগুলোর অন্যতম সমাজে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য নরডিক দেশের মতো এটি দারুণভাবে সফল বেশ কিছু বৈশ্বিক কোম্পানির দেশ। সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী নরডিক অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যবসায়বান্ধবই শুধু নয় উপরন্তু মুক্ত বাজারের প্রধান প্রধান সূচকের মানদন্ডে এই অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও ভাল। এখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বৃহত্তর সুরক্ষা আছে। প্রতিযোগিতার ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণের প্রভাব কম এবং বাণিজ্য ও মূলধন প্রবাহ অধিকতর উন্মুক্ত। বিশ্বব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী ডেনমার্ক ও নরওয়েতে ব্যবসা করা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রকৃতপক্ষে সার্বিক দিক দিয়ে সহজতর। কয়েক প্রজন্ম ধরে ফিনল্যান্ডের উঁচু মাত্রার অর্থনৈতিক গতিশীলতা আছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সন্তানদের তুলনায় ফিনল্যান্ডের সন্তানদের তাদের বাবা-মায়ের অর্থনৈতিক শ্রেণী থেকে বেরিয়ে আসার এবং তাদের নিজস্ব সাফল্য অর্জন করার সুযোগ অনেক বেশি। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফ্রিডম হাউজের বিচারে ফিনল্যান্ডের নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের তুলনায় প্রকৃতপক্ষে উচ্চতর মাত্রার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অধিকতর নিরাপদ ও নিশ্চিত রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজকে অনেক সময় বিপজ্জনক র‌্যাডিকেল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফিনল্যান্ডে তাদের অনেক নীতি ও ভাবনাকে স্বাভাবিক বলে মনে হবে- সোশ্যালিস্ট বলে নয়। মি. স্যান্ডার্স ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার জন্য দাঁড়ালে ফিনল্যান্ডবাসীর অনেকে অবাক হয়েছিল যে এত বিপুল সম্পদ এবং সফল পুঁজিবাদী শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য পরিচর্যা কার্যক্রম ও বিনামূল্যে কলেজে পড়ার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। নরডিকরা এমন কর্মসূচী থাকাকে একবিংশ শতাব্দীতে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া ব্যবসায়বান্ধব যে কোন দেশের জন্য একান্তই মৌলিক প্রয়োজন বলে মনে করে। মুক্ত বাজার খর্ব করা এমনকি উৎপাদনের উপায়সমূহ রাষ্ট্রায়ত্ত করার লক্ষ্য সংবলিত সমাজতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে র‌্যাডিকেলদের একাংশের কাছে জনপ্রিয়তা পেলেও ফিনল্যান্ডে মোটেও হালে পানি পাবে না। তবে এক শ’ বছরেরও বেশি আগে ফিনল্যান্ডে একবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চেষ্টা হয়েছিল রুশ সাম্রাজ্য যখন ধসে পড়ে ও ফিনল্যান্ড স্বাধীনতা অর্জন করে তখন। ফিনল্যান্ডে শিল্পায়ানের প্রক্রিয়া চলছিল। শহর ও গ্রামের শ্রমিক এবং বর্গাচাষীরা কাজের দুর্বিষহ পরিবেশ সইতে না পেরে বিদ্রোহ করে। ফিনল্যান্ডের পুঁজিপতি, রক্ষণশীল ভূস্বামী, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর প্রতিক্রিয়া ছিল ত্বরিৎ ও সহিংস। গৃহযুদ্ধ বেধে যায় ও ব্যাপক হত্যা শুরু হয়। কয়েক মাস ব্যাপী লড়াইয়ের পর সমাজতান্ত্রিক অভ্যুত্থানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। ৩৫ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়। গৃহযুদ্ধের পর সোশালিস্টরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। শ্রমিক ইউনিয়ন হয় দুর্বল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সোশালিস্টরা রাজনীতিতে ভূমিকা পালনে ফিরে এলেও ফিনল্যান্ড সমাজতন্ত্রকে বিপ্লবী শক্তিতে পরিণত হতে দেয়নি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর দেশটি অধিকতর শিল্পায়িত যুগে প্রবেশ করায় সমাজতন্ত্রের পতি সহানুভূতি ফিরে আসে। শ্রমিক ইউনিয়ন শক্তিশালী হয়। এসময় ফিনল্যান্ডের ইতিহাস অপ্রত্যশিত মোড় নেয়। ফিনিশ পুঁজি পতিরা পুজিবাদের প্রতি সমাজতন্ত্রের অব্যহত হুমকি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। শ্রমিকদের দাবি দাওয়া ও চাহিদার প্রতিনিধিত্বকারী রাজনীতিকদের তরফ থেকে তাদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ আসে। সংঘাত পরিহার ও নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও নতুন শিল্পরক্ষা করার জন্য ফিনিশ পুঁজিপতিরা কৌশল বদলায়। শ্রমিক শোষণ ও তাদের দাবিয়ে রাখার পরিবর্তে পুঁজিপতিরা দীর্ঘ মেয়াদী স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে এসব পরিকল্পনা নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো পুঁজিপতিরা অনুধাবন করে যে যত বেশি আয় তত বেশি কর এই ধারণাটা মেনে নেয়া তাদের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থেরই সহায়ক হবে। এই কর শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবান ও উৎপাদনক্ষম রাখার জন্য সরকারের নতুন কর্মসূচীর বাস্তবায়নে অর্থ জোগাবে। এতে অধিকতর লাভজনক শ্রমবাজার গড়ে উঠবে। এই কর্মসূচীগুলোই আজ ফিনল্যান্ডে করদাতার অর্থায়নে সার্বজনীন সেবা ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে যার মধ্যে আছে জনস্বাস্থ্য পরিচর্যা, পাবলিক ডে-কেয়ার ও শিক্ষা, বাবা-মায়ের সবেতন ছুটি, বেকারত্ব বীমা ইত্যাদি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে এ ধরনের সর্বজনীন সরকারী কর্মসূচী বেসরকারী খাতের লাভজনক ব্যবসায় ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে না। এমনটা যে বাস্তবেই অসম্ভব সেই ধারণাকে জোরদার করার জন্যই যেন ট্রাম্প প্রশাসন গত শরতে এক অদ্ভুত রিপোর্টে বলেছে যে ‘সমাজতন্ত্র’ নরডিকদের জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অথচ সমাজতন্ত্র তো নয়ই বরং বিংশ শতাব্দীর অধ্যায়জুড়ে এবং আজ অবধি ফিনল্যান্ড বাজার অর্থনীতি, বেসরকারী ব্যবসায় ও পুঁজিবাদের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ একটি অর্থনীতির দেশ হিসেবে বয়ে গেছে। সরকারের উদার ও সর্বজনীন জনসেবা ব্যবস্থা ফিনল্যান্ডের পুঁজিবাদের বিকাশ ও গতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত তো করেইনি বরং সাহায্য করেছে। পুঁজিবাদী উদ্ভাবনার কারণে কর্মচ্যুতিসহ যেসব ঝুঁকি থেকে থাকে এসব কল্যাণমূলক ব্যবস্থা তা শুষে নেয়। ফিনল্যান্ডের প্রবৃদ্ধির স্থিতিশীল ভিত্তি থাকায় এসব ছোটখাটো ধাক্কা অর্থনীতির গায়েই এসে লাগে না। দেশটির সবচেয়ে লক্ষণীয় কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তর মোবাইল ফোন কোম্পানি, বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ এলিভেটর প্রস্তুতকারক এবং বিশ্বের সবচেয়ে সফল দুটি মোবাইল গেমিং কোম্পানি। আজকের ফিনল্যান্ডে গেলে দেখা যাবে কর্মচঞ্চল অর্থনীতির মধ্যে জীবনযাত্রার মান কত উন্নত। সেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল শপিং মল, ফ্যান্সি কার ও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিযোগিতামূলক প্রাইভেট কোম্পানি। অন্যান্য নরডিক দেশ ফিনল্যান্ডের চেয়েও অনেক আগে থেকে এ ধরনের পুঁজিবাদের চর্চা করছে এবং আরও বেশি সাফল্য লাভ করেছে। নরডিক দেশগুলোর সবই একে অপর থেকে আলাদা। সকলেরই ভুল ভ্রান্তি, দুর্বলতা, অনন্য ইতিহাস ও নাগরিক সমাজে মতানৈক্য আছে। শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন ও নিয়োগ কর্তাদের মধ্যে বিরোধ এবং লড়াই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ভারসাম্যের মধ্যে ধরে রাখে। পরিস্থিতি অনেক সময় খারাপ আকার ধারণ করে না তা নয়। সম্প্রতি এক শ্রমবিরোধের মধ্যে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। তবে সামগ্রিকভাবে নরডিক দেশগুলো এবং সেই সঙ্গে তাদের ব্যবসায় এলিটদের সিংহভাগ একটা সহজ ফর্মুলায় এসে পৌঁছেছে। তা হলো শ্রমিক-কর্মচারীরা যদি ভাল ও পরিমিত বেতন পায় এবং তাদের অনুকূলে উন্নত মানের গণতান্ত্রিকভাবে জবাবদিহিমূলক এমন সেবামূলক সরকারী ব্যবস্থা থাকে যাতে প্রত্যেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বাঁচে, মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করে এবং নিজেদের ও সন্তানদের জন্য সুযোগ-সুবিধার সত্যিকারের সমতা ভোগ করে তাহলে পুঁজিবাদ ভালভাবে চলতে ও ক্রিয়াশীল থাকতে পারে। অবশ্য তার জন্য পুঁজিপতি ও কর্পোরেশনগুলোকে তাদের আমেরিকান সমগোত্রীয়দের তুলনায় অধিকতর ন্যায্য মজুরি ও কর দিতে হয়। নরডিক দেশগুলোর নাগরিকরাও অধিকতর কর দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে এই ব্যাপরগুলো উদ্ভট শোনাবে। কারণ সেখানে ব্যবসায়ীরা ও অর্থনীতিবিদরা বরাবরই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে থাকেন যে কর বাড়ালে প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে এবং বিনিয়োগে উৎসাহ হ্রাস পাবে। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে গত ৫০ বছর ধরে দেখা গেছে কেউ যদি নরডিকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকেন তা হলে একই সময় মার্কিন শেয়ার বাজারে বিনিয়োজিত অর্থ থেকে প্রাপ্ত বার্ষিক প্রকৃত মুনাফার তুলনায় তার মুনাফার পরিমাণ বেশি। নরডিক অঞ্চলের পুঁজিপতিরা নির্বোধ নন। তারা জানেন যে কর পরিশোধ করার পরও তাঁরা অতি মোটা অঙ্কের আর্থিক মুনাফা অর্জন করে থাকেন। তারা তাদের মুনাফার পর্যাপ্ত অংশ বিলাসী জীবনযাপন, প্রভাব বিস্তার ও সামাজিক মর্যাদা অর্জনের জন্য রেখে দেন। নরডিক বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা কয়েক ডজন। নরডিক নাগরিকরাও নির্বোধ নন। ফিনল্যান্ডের সচ্ছল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একজন সদস্য সমস্ত কর পরিশোধ ও ব্যক্তিগত ব্যয় মেটানোর পরও তার সার্বিক প্রাপ্তির অঙ্কটা সমপর্যায়ের আমেরিকানের তুলনায় বেশি। সেই সঙ্গে উন্নততর জীবনমান তো আছেই আর আছে অনেক কম ঝক্কি ও ঝামেলা। প্রশ্ন হচ্ছে নরডিক দেশগুলোর সম্পদশালীরা কেন এই ব্যবস্থাকে মেনে নেবে? নরডিক পুঁজিপতিদের কেউ কেউ প্রকৃতপক্ষে সমান সুযোগ-সুবিধার নীতিতে বিশ্বাসী এবং সকল মানুষের কল্যাণে যে সমাজ বিনিয়োগ করে সেই সমাজের মূল্য বা গুরুত্বকে তারা স্বীকার করে। তবে এ ছাড়াও আরও একটি কারণ আছে। কর পরিশোধ করা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবান ও শিক্ষিত রাখার কাজটা সরকারকে দিয়ে করিয়ে নেয়ার একটা সুবিধানজক উপায় পুঁজিপতিদের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে ও যথেষ্ট মাত্রায় শিক্ষিত শ্রমিকদের খুঁজে বের করতে রীতিমতো হিমশিম খায়। অন্যদিকে নরডিক সমাজগুলোর দাবি সরকারকে সকল নাগরিকের জন্য উন্নত মানের সরকারী সেবা জোগাতে হবে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা এ সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে তাদের যেটা কাজ সেই ব্যবসায়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারে। এটা আর সকলের জন্যও সুবিধাজনক। ফিনল্যান্ডের কায়িক শ্রমিক, বৈধ অভিবাসী, ভাল বেতনের ম্যানেজার ও বিত্তবান পরিবারসহ সকল অধিবাসী স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা ও বিশ্বমানের পাবলিক স্কুল থেকে বিপুল সুবিধা ভোগ করে থাকে। এখানে একটা বড় শিক্ষা হলো পুঁজিপতিরা যখন সরকারকে শত্রু হিসেবে না দেখে মিত্র হিসেবে দেখে এবং উঁচু মানের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যখন সকল নাগরিকের ভাগ থাকে তখন সরকার সব কাজ ভালভাবেই করিয়ে নিতে পারে। নরডিক অঞ্চল একটা ল্যাবরেটরির মতো যেখানে পুঁজিপতিরা দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিশীলতা ও মানুষের বিকাশের পরিবেশে মূলধন বিনিয়োগ করে এবং মোটা অঙ্কের মুনাফা বজায় রাখে। অন্যদিকে মার্কিন পুঁজিপতিরা এক ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে। তারা কর কমিয়েছে, সরকারকে দুর্বল করেছে, ইউনিয়ন ধ্বংস করেছে ও অত্যাবশ্যক সার্ভিসগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় নিয়ে নিয়েছে। এ সবই করেছে বাড়তি মুনাফার অন্বেষায়। পরিণতিতে শ্রমিকদের জীবন বেদনাদায়কভাবে ছত্রখান হয়েছে। এমনকি ভাল অবস্থানে থাকা আমেরিকানদেরও এখন বেশ চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ক্ষোভ ও ভয়ভীতি এখন আমেরিকায় বল্গাহীন আকার ধারণ করেছে। মার্কিন শ্রমিকরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারাও পাল্টা লড়াই চালাচ্ছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মঘটে অংশ নেয়া শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল ১৯৮০ এর দশকের পর থেকে সর্বোচ্চ। আর এ বছর জেনারেল মোটরসের ধর্মঘট ছিল প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে কোম্পানির দীর্ঘতম ধর্মঘট। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের নতুন প্রজন্মের আমেরিকানদের পুরো অর্ধেক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ইতিবাচক পোষণ করে। আমেরিকান শিল্প ও ব্যবসায় নেতাদের কেউ কেউ এখন স্বীকার করছেন যে ‘পুঁজিবাদ মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জন্য কাজ করছে না।’ পিটার জর্জেসকু নামে একজন বলেছেন যে ‘পুঁজিবাদ ধীরে ধীরে আত্মহত্যা করছে।’ সাম্প্রতিককালে এ ধরনের উদ্বেগ গোটা পুঁজিবাদী মহলে ছড়িয়ে পড়েছে।’ দি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস স্বীকার করেছে যে পুঁজিবাদকে আবার নতুন করে শুরু করা দারুণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পুঁজিবাদী বিশ্বের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাঘব বোয়ালদের যদি এমন ভাবনায় পড়তে হয় তাহলে তাদের সামনে এক সহজ সমাধান আছে। তা হলো নরডিক দেশগুলোর পুঁজিবাদকে অনুসরণ করা। নরডিক পুঁজিবাদের সাফল্যের কারণ এই নয় যে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী শ্রেণী সমাজকে অধিকতর সাহায্য করছে। বরং ঠিক তার উল্টো। নরডিক পুঁজিপতিরা এ ব্যাপারে কমই সাহায্য করছে। তারা ব্যবসার ওপর মূল দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে যার মধ্যে আছে আন্তরিকভাবে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালানো এবং নাগরিকদের এমন রাজনীতিকদের পক্ষে ভোট দিতে উৎসাহিত করা যারা বেশ কিছু বলিষ্ঠ জনসেবা ব্যবস্থা প্রবর্তনে সরকারকে কাজে লাগাবে। যাতে করে জনগণের জীবনমান আরও উন্নত হয়ে ওঠে। সূত্র : দি নিউইয়র্ক টাইমস
×