ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদপুরে এতিমখানা ভবনের ছাদ ধসে ৫০ শিক্ষার্থী আহত

প্রকাশিত: ০৯:১১, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

চাঁদপুরে এতিমখানা ভবনের ছাদ  ধসে ৫০ শিক্ষার্থী আহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর, ২৪ নবেম্বর ॥ মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি কমপ্লেক্সের আল-আমিন এতিমখানার পরিত্যক্ত ভবনের ছাদ ধসে ৫০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে ৪৪ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১২ জন। গুরুতর আহত এক শিশু শিক্ষার্থীকে ঢাকা রেফার করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শনিবার রাত ১০টার দিকে পরিত্যক্ত ৪তলা ভবনের দ্বিতীয়তলায় ছাদে শিক্ষকদের সঙ্গে শতাধিক শিক্ষার্থী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ বিষয়ে একত্রিত হলে দুর্ঘটনার শিকার হয়। একত্রিত হওয়া শিক্ষার্থীরাসহ ছাদের মাঝখানের অংশ ধসে নিচে পড়ে যায়। এই সময় ওই স্থানে থাকা প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী কম-বেশি আহত হয়। চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এতিম শিক্ষার্থীরা হলেন-সিহাব (১৪), আইনুদ্দিন (১৩), নাহিদ (১৩), সাব্বির (১৩), ইব্রাহীম (১৩), তরিকুল ইসলাম (১৩), আব্দুল আজিজ (১৩), সজিব (১৫), আব্দুল্লাহ (১৪), রহমান (১৫), নাহিদ (১৪) ও সিনিয়র সহকারী মৌলভী মোহাম্মদ হোসেন (৫০)। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেয়া শিশুর নাম হচ্ছে সিয়াম (১০)। রাত ২টায় মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আহম্মদ উল্যাহ বলেন, মতলব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২৫ জন। এর মধ্যে ৯ জন ছাড়া বাকিদের চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে ও ৩ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। ফরাজিকান্দি আলিয়া মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ মাসুদ আল বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ফরাজিকান্দি আল-আমিন এতিমখানা থেকে একটি টিম জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে, একটি টিম চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামে এবং একটি টিম মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করতে পাঠানো হয়। সেই কারণে টিম লিডার (শিক্ষক) মোহাম্মদ হোসেন সেই এতিমখানার কুচকাওয়াজে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে টিমের তালিকা তৈরি করছিলেন। এমতাবস্থায় এতিমখানার বর্ধিত অংশের দ্বিতীয় তলার ছাদ ধসে পড়ে। এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার। তিনি পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে আহত শিশুদের চিকিৎসার তদারকি করেন। একইভাবে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা হক। আমতলীতে পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, আমতলী উপজেলার এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান চলছে। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করেছে ওই পরিত্যক্ত ভবনে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থীদের। জানা গেছে, উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীও সংখ্যা আট শ’। ২০১০ সালে ভবনের পিলার, ভিম ও পলেস্তরা খসে পড়তে থাকে। এতে পাঠদান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুশফিকুর রহমান ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে পাঠদান বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় গত দুই বছর ধরে পরিত্যক্ত ভবনেই পাঠদান চালিয়ে যান স্কুল কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম ওই বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শন করে ছাদ অপসারণ করা প্রয়োজন মর্মে প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে প্রকৌশলী আরও উল্লেখ করেছেন দ্রুত ছাদ ও ছাদের ওপর নির্মিত আধাপাকা ভবন অপসারণ না করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে ইউএনও মনিরা পারভীন গত ৩ অক্টোবর বিদ্যালয়ের ছাদ ও ছাদের ভবন অপসারণের জন্য বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি ওই ছাদ ও ছাদের ভবন অপসারণ করেনি। সদ্য সমাপ্ত জেএসসি পরীক্ষা ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই শেষ করেছেন। পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস নেয়ায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। দ্রুত পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা। রবিবার আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের পিলার, ভিম ও পলেস্তরা ধসে পড়ছে। ভবনের ছাদের ওপর আধা পাকা টিন শেডের ঘরের ওপরে টিনের চালা নেই। ভঙ্গ অবস্থায় পড়ে আছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এহতেসামুল হক সামস, আনিকা, আলভি, সিয়াম ও ঐশর্য্য জানান, জীবনে ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস করতে হচ্ছে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাই।
×