ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে শিশুরা অপরাধে জড়িয়ে যায়

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে শিশুরা অপরাধে জড়িয়ে যায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আপীল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, শিশুরা অপরাধ করার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় না। অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে অপরাধে জড়িয়ে যায়। এর জন্য দায়ী কে সেটাও আমাদের চিন্তা করা উচিত। মনে রাখতে হবে, শিশুরা খারাপ পথে যায় খারাপ কাজ করে, চুরি করে, মারামারি করে, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন একটা কারণ আছে। নিউজিল্যান্ডে থানা থেকে শিশুদের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ মামলা নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়। চিন্তা করেন ১০০ থেকে ৭৫ জন চলে গেলে মাত্র ২৫ জন যাবে আদালতে। এরপর আদালত থেকে আরও ১০ থেকে ১৫ ভাগ ডাইভারশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। আমাদের কাজটা হচ্ছে শিশুদের কিভাবে ভাল পথে নিয়ে আসব। কি করলে ভাল হবে এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। শনিবার সুপ্রীমকোর্ট মিলনায়তনে সুপ্রীমকোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস ও ইউনিসেফের যৌথ আয়োজনে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পুলিশ সদস্য ও সমাজ সেবা কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ‘ডাইভারশন ফ্রম দ্য পুলিশ স্টেশন আন্ডার দ্য চিলড্রেন এ্যাক্ট ২০১৩’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সুপ্রীমকোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস-এর চেয়ারপার্সন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী আরও বলেন, ‘শিশুরা ক্রাইম করার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় না। ক্রিমিনাল হয়েও জন্মায় না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে ক্রাইমে জড়িয়ে যায়। এর জন্য দায়ী কে সেটাও আমাদের চিন্তা করা উচিত। পুলিশ সদস্য ও সমাজ সেবা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের কাজটা হচ্ছে শিশুদের কিভাবে ভাল পথে নিয়ে আসা যায় সেই চেষ্টা করা। কী করলে ভাল হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এ সময় প্রবেশন অফিসার এবং পুলিশ সদস্যদের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (ইনস্টিটিউশন) মোঃ আবু মাসুদ ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহেরীন প্রমুখ। শিশুদের বিচার ব্যবস্থা দেখতে নিউজিল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, নিউজিল্যান্ডে থানা থেকে শিশুদের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ মামলা নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়। চিন্তা করেন ১০০ থেকে ৭৫ জন চলে গেলে মাত্র ২৫ জন যাবে আদালতে। এরপর আদালত থেকে আরও ১০ থেকে ১৫ ভাগ ডাইভারশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। একটা শিশু খাবার কেন চুরি করে? তার ক্ষুধা লাগলে চুরি করে। একটা মোবাইল চুরি কেন করে? তার বন্ধুর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার জন্য নয়। মোবাইল চুরি করে সেটা বিক্রি করে যে টাকাটা পাবে সে টাকা দিয়ে সে তার প্রয়োজনীয় কিছু একটা কিনবে। যে জিনিসটা তার মা-বাবা তাকে দিতে পারেনি। মা-বাবা যোগান দিতে পারে না বলে শিশুরা খারাপ পথে চলে যায়, মা-বাবা ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারে না বলে শিশুরা খারাপ পথে চলে যায়। শিশুদের অপরাধে জড়ানোর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, শিশুরা খারাপ পথে যায় খারাপ কাজ করে, চুরি করে, মারামারি করে, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন একটা কারণ আছে। শিশুরা এই খারাপ কাজ বা খারাপ ব্যবহারের জন্য দায়ী নয়। শিশুরা মারামারি করে কারণ তাদের পরিবারের মধ্যে মারামারি হয় বলে এটাকে জীবনের অংশ মেনে নেয়। যে ঘরে দৈনন্দিন মারামারি হয় সে ঘরে শিশুরা বড় হচ্ছে মারামারি দেখতে দেখতে। মারামারি তাদের জন্য কিছুই না। আমাদের কাজটা হচ্ছে শিশুদের কিভাবে ভাল পথে নিয়ে আসব। কি করলে ভাল হবে এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বিচারপতি ইমান আলীর মতে, মা-বাবা পারে না কেন সেটাও চিন্তার বিষয়। গরিব মা-বাবা যে টাকা রোজগার করে সেটা দিয়ে সংসারই চলে না শিশুর বিলাসিতা দেখার মতো তাদের ক্ষমতা নেই। জিন্স প্যান্ট কিনে দেয়ার মতো তাদের কাছে টাকা নেই। সমস্যাটা কোথায়, আরেকটু গভীরে যেতে হবে দেখার জন্য। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমন যে, মা-বাবা তাদের সন্তানদের ঠিকমতো দেখাশোনা করার ব্যবস্থা নাই। আমাদের সেই মা-বাবার জন্য কর্মসংস্থান করে দিতে হবে। চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
×