ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণতান্ত্রিক সরকার হলেই গুম খুন আতঙ্ক দূর হবে

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ৩১ আগস্ট ২০১৯

  গণতান্ত্রিক সরকার হলেই গুম খুন আতঙ্ক দূর হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারবিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে গুমকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন। এদিকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ২০৯ জন মানুষ গুম হয়েছে। ফখরুল বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আসুন আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হই। কেবলমাত্র একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলেই গুম, অপহরণ, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার আতঙ্ক মানুষের মন থেকে দূর হবে। ফখরুল বলেন, গুমের মূল লক্ষ্য বিরোধীকণ্ঠকে নির্মূল করা। গুমের অব্যাহত পরিস্থিতিতে দেশে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়ঙ্কর জটিল রাজনৈতিক সঙ্কট। জনসমর্থনহীন সরকারের টিকে থাকার অবলম্বনই হচ্ছে গুম। এ ধারা বয়ে চললে দেশ ঘন অন্ধকারে ডুবে যাবে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। এ পর্যন্ত গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। দেশে গুমের আতঙ্ক এখন সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। দুঃশাসন থেকে উৎপন্ন হয় গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী হিংস্র্রতা। সরকারের গড়ে তোলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধীদলের প্রতিবাদী নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে অল্পদিন বা দীর্ঘদিন অথবা চিরদিনের জন্য নিখোঁজ করে দেয়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ পর্যন্ত নৃশংস গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম ও ছাত্রদল নেতা সুমনসহ অসংখ্য মানুষ। আরেকটি অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয়েছে অন্য দেশে। এই নতুন ধরনের ঘটনা দেশবাসীকে অজানা আতঙ্কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গুম হয়েছে ১২০৯ জন রিজভী ॥ দেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত ১২০৯ জন মানুষ ঘুম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে গুম হওয়া ১ হাজার ২০৯ জন মানুষের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুমের সংখ্যা ৪৩৫ জন। গুম হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, লাকসাম বিএনপি নেতা হুমায়ুনর কবির পারভেজ, ছাত্রদল নেতা জাকির, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তারিকুল ইসলাম ঝন্টু, আদনান চৌধুরী, মোঃ সোহেল, খালিদ হোসেন সোহেল, সম্রাট মোল্লা, মাহবুব সুমনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পার্শ¦বর্তী দেশে ফেলে দিয়ে এসেছে। রিজভী বলেন, গুমের ঘটনার একদিন তদন্ত করে বিচার হবেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা এখনও পথ চেয়ে বসে আছেন, ছোট শিশুরা অপেক্ষা করছে তাদের বাবা ফিরে আসবে সেই আশায় আর সন্তানের দুশ্চিন্তায় অনেকের বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। নিখোঁজ সুমনের মা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অন্ধ হয়ে গেছেন। গুমের শিকার প্রতিটি পরিবারের কান্না-আহাজারি আর প্রতীক্ষার দিবানিশি শেষ হচ্ছে না। রিজভী বলেন, গুম একটি ভয়ঙ্কর মানবতা বিরোধী অপরাধ। দেশে গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে। গণতন্ত্রের অকাল প্রয়াণ ঘটানোর জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। গণতন্ত্র হত্যায় রাষ্ট্রের এই নিষ্ঠুর চেহারা দেখে জনগণ শোক জানাতেও ভয় পায়। এই নিষ্ঠুর কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তারা হিংস্র্র প্রাণীর সঙ্গেই তুলনীয়। রিজভী বলেন, গুম বন্ধ করতে সরকারের প্রতি জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আহ্বান জানিয়েছে বহুবার। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে প্রথম সারির মন্ত্রীরা পর্যন্ত সেই আহ্বানকে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা সব সময় গুমের তথ্য-প্রমাণসমূহকে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা বলে এড়িয়ে চলে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, দলের নেতা আসাদুল করিম শাহিন, আবেদ রাজা, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। গুম হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি নেতারা ॥ বিশ্ব গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে দলের গুম হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপির সিনিয়র নেতারা। শুক্রবার বিকেলে দলের মহাসচিবসহ ক’জন সিনিয়র নেতা গুশ হওয়া ক’জনের পরিবারের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। বিকেল ৩টায় ছাত্রদল নেতা নিজামুদ্দিন মুন্নার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি তেজগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুমনের বাসায় ও বিকেল ৪টায় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর বাসায় যান। এছাড়া বিকেল ৫টায় বংশাল চৌরাস্তা ইসলামী ব্যাংক বিল্ডিং এর নিচতলায় নিখোঁজ ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান।
×