ড. চঞ্চল সৈকত। দেশের গুণী একজন নাট্যকর্মী, নাট্যকার, নির্দেশক, মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং দক্ষ সংগঠক। নাট্য সংগঠন নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। পাশাপাশি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত। এবারের ঈদে বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন তিনি। সংস্কৃতি অঙ্গনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়।
ঈদের নাটকে ব্যস্ততা কেমন ছিল?
ড. চঞ্চল সৈকত : আমি নিজেকে একজন নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে নাট্যকার, নির্দেশক, মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং সংগঠক যাই বলুন না কেন, নাট্য সংগঠন নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গর্ববোধ করি। যেমন গর্ব করি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারশনের (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক) একজন কর্মী হিসেবে। পাশাপাশি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত থেকেও মঞ্চের পাশাপাশি ছোট পর্দা ও বড় পর্দাতেও নিয়মিত কাজ করছি। নিয়মিত কাজের ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে বেশ কিছু নাটক ও টেলিফিল্মে কাজ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে জিটিভির ঈদের বিশেষ নাটক ‘ভুজঙ্গি’, বাংলা টিভির সাত পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘বাবার বিয়ে’, বিটিভির বিশেষ নাটক ‘পুষ্টি’, এটিএন বাংলার বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘স্মাইল শো’, চলচ্চিত্র ‘সব সুখ তোর জন্য’ প্রভৃতি। পাশাপাশি অসংখ্য সৃজনশীল কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছি।
মঞ্চ নাটকের দর্শক বাড়াতে নাট্য উৎসব আয়োজন কতটা জরুরী বলে মনে করেন?
ড. চঞ্চল সৈকত : অবশ্যই জরুরী। আমি মনে করি উৎসব যত বেশি করা যাবে দর্শক ততবেশি মঞ্চমুখী হবেন। তবে মঞ্চ নাটকের দর্শক বাড়াতে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। শুধু ফেডারেশন নয় আমি মনে করি এ জন্য নাট্য দলগুলোকেও ফেডারেশনের পাশাপাশি কাজ করতে হবে। জোরালোভাবে বলতে চাই দর্শক সঙ্কট নিরসনে নিয়মিতভাবে মানসম্পন্ন নাটক মঞ্চায়নের কোন বিকল্প নেই।
থিয়েটার নিয়ে আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কেমন?
ড. চঞ্চল সৈকত : আমার দল নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল আমার নির্দেশনায় ‘ব্রেন ওয়াশ’ নাটকের নিয়মিত প্রদর্শনী করছে। পাশাপাশি দলের অন্য একটি প্রযোজনা ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ নাটকে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় করছি। এছাড়া নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের প্রযোজনায় আমার নির্দেশনায় ‘ইউরিডাইস’ নামের একটি নাটক অচিরেই মঞ্চে আসছে। এছাড়া বর্তমানে আমি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
সংস্কৃতি অঙ্গনের কোন্ শাখায় কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
ড. চঞ্চল সৈকত : অভিনয়, নির্দেশনা ও রচনা এই তিনটি বিষয়ের অভিজ্ঞতা আমার আছে। তিন রকম অভিজ্ঞতা মনে হলেও মূল বিষয়টি হলো নাটক করা। নাটক করতে গিয়ে সেটা অভিনয় হোক, রচনা হোক, নির্দেশনা হোক বা সাংগাঠনিক দায়িত্ব পালন হোক আমার মনে হয় আমি শিল্প সৃজনের সঙ্গে যুক্ত একজন নাট্যকর্মী। এখানে আসলে আলাদা করে ভাবার অবকাশ আমার মনে কখনও কাজ করেনি। মূল বিষয় যেটি কাজ করেছে তা হলো আমি থিয়েটার করছি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমি এসবের পাশাপাশি প্রযোজনাতেও হাত দিয়েছি। আমি মনে করি সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রযোজক তথা পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টিতে চাহিদার তুলনায় বেশ ঘাটতি রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ চিন্তা-ভাবনা করছি। তবে এক্ষেত্রে ভাল কন্টেন্টের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এবারে জিটিভির ‘ভুজঙ্গি’ নামে ঈদের একটি নাটক প্রযোজনা করে বেশ সাড়া পেয়েছি। এখন থেকে নিয়মিতভাবে নাটক প্রযোজনা করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চ্যানেলের একাধিক নাটক প্রযোজনা করছি। যেগুলো অচিরেই প্রচার শুরু হবে বলে আশা করছি।
সৃজনশীল নাট্যকর্মী তৈরিতে মূল ভূমিকা কার বলে মনে করেন?
ড. চঞ্চল সৈকত : আমি মনে করি প্রত্যেক নাট্যকর্মীই সৃজনশীল। নাট্যকর্মী তৈরিতে ভূমিকা প্রথমত প্রত্যেক নাট্যদলের। তবে এটাও সত্য যে আমাদের দেশে নাট্যচর্চা একটি পরম্পরা ব্যাপার। সিনিয়রদের মধ্য থেকেই এটা আসে। আমাদের সিনিয়রদের দেখে যেমন আমরা শিখেছি আমাদের জুনিয়ররাও তেমনি আমাদের দেখে শিখছে। এছাড়া বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের উদ্যোগে নিয়মিত লেকচার ওয়ার্কশপ, অভিনয় কর্মশালাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নতুন নতুন নাট্যকর্মী তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
-সাজু আহমেদ
শীর্ষ সংবাদ: