ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডিন জোন্স-ম্যাককুলামকে ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিক

প্রকাশিত: ১০:৫২, ২৯ জুলাই ২০১৯

 ডিন জোন্স-ম্যাককুলামকে ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিপদে চেনা যায় আসল বন্ধুকে- চিরন্তন এই সত্যটি ক্রিকেট মাঠের ক্ষেত্রে হয়ত কিছুটা অন্যরকম। দলের বিপর্যয়ে চেনা যায় প্রকৃত ব্যাটসম্যানকে। সেই কাজটি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে নিয়মিতই করে এসেছেন মুশফিকুর রহীম। অনেক আগেই তাই মিডলঅর্ডারে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে ‘দেয়াল’ কিংবা ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ উপাধি জুড়ে গেছে তার নামের সঙ্গে। তারই আরেকটি প্রতিচ্ছবি ফুটল রবিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। ৩২ বছর বয়সী এ ডানহাতি মিডলঅর্ডার টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন যখন ৩১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দল ধুঁকছিল। অপরপ্রান্তে টানা উইকেট যেতে থাকলেও তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন। করেছেন ১১০ বলে ৬ চার, ১ ছক্কায় ৯৮ রান। এই ইনিংসের মাধ্যমে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন তিনি। পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান ডিন জোন্স ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক মারকুটে ওপেনার ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে। ওয়ানডে ইতিহাসে ৬১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক এ মাইলফলক পেরিয়েছেন ক্যারিয়ারের ২১৫তম ম্যাচে ২০১তম ইনিংসে নেমে। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে বিপদের মুখে ব্যাট চালিয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেছিলেন মুশফিক। তবে দলকে জেতাতে পারেননি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও তিনি প্রায় একই পরিস্থিতিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। দলীয় ৩১ রানের মধ্যে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল সাজঘরে ফেরেন। এরপর মুশফিক জুটি বাঁধার চেষ্টা চালিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে। কিন্তু তারা কেউ মুশফিকের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গী হিসেবে টিকে থাকতে পারেননি। তবে এর মধ্যেই মুশফিক নিজেকে ধীরস্থিরভাবে উইকেটে থিতু করেছেন। দলীয় ১১৭ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে বাংলাদেশ দল। ওই সময় মুশফিক ৬০ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত, উইকেট ভালভাবে বুঝেও ফেলেছেন। অতীতে এমন মুহূর্তগুলো প্রকা- ‘দেয়াল’ হয়ে দাঁড়িয়ে সামাল দিয়েছেন মুশফিক একাই। এবারও তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তার যোগ্য সারথি হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেটে দু’জনে ৮৪ রানের জুটি গড়েন মাত্র ৮২ বলে! অর্থাৎ বিপদের মুখেও সাবলীল ব্যাটিং করে দলের রানও বাড়িয়েছেন, আবার বিপদ থেকেও টেনে তুলেছেন। ফলে বাংলাদেশ দলের রান দুই শ’ পেরিয়ে যায়। ৭১ বল খেলে ক্যারিয়ারের ৩৭তম ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। মিরাজ ৪৯ বলে ৪৩ রান করে ফিরে গেলেও তিনি শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন। তবে বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে উইকেটে টিকে থেকে সিঙ্গেলস নিয়ে দলকে বাঁচিয়ে অন্যদের জন্য আরেকবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মুশফিক। ২০০ ইনিংসে ৫৯৯২ রান নিয়ে প্রেমাদাসায় রবিবার নেমেছিলেন মুশফিক। মাত্র ৮ রান প্রয়োজন ছিল তার তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে ৬০০০ রান পূর্ণ করার জন্য। ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে স্কয়ার লেগে খেলে এক রান নিয়ে এই মাইলফলকে পৌঁছে যান তিনি। মুশফিকের আগে বাংলাদেশের পক্ষে ৬ হাজার ওয়ানডে রান পেরিয়েছেন তামিম ও সাকিব আল হাসান। তবে তামিম গত বছর জানুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৬ হাজার রান ছুঁয়েছিলেন মাত্র ১৭৭ ম্যাচের ১৭৫তম ইনিংসে। সাকিব এবার বিশ্বকাপে টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ মাইলফলকে পৌঁছেন ক্যারিয়ারের ২০২ নম্বর ম্যাচের ১৯০ ইনিংসে। সেখানে মুশফিকের লাগলো ২১৫তম ম্যাচে ২০১ নম্বর ইনিংস। ওয়ানডে ইতিহাসে তিনি এখন ৬১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রানের মালিক হয়েছেন। আর এ মাইলফলক ছুঁয়ে তিনি দলকে বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছেন এবং সেঞ্চুরির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১১০ বলে ৬ চার, ১ ছয়ে ৯৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তবে ৭১ বলে অর্ধশতক হাঁকানোর পর রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন মুশফিক। বাকি ৪৮ রান করেছেন মাত্র ৩৯ বলে। আর তাতেই কলম্বোয় সম্মানজনক সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে ৩৪তম বার অপরাজিত থাকলেন মুশফিক। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ৪২ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড রিয়াদের। এরপরই মুশফিক ৩৪, মাশরাফি ২৭ ও সাকিব ২৬ বার নটআউট থাকার নজির দেখিয়েছেন। তবে এর আগে কখনও ৯০ এর ঘরে থেকে অপরাজিত থাকতে হয়নি তাকে। তবে নার্ভাস নাইনটিজে আউট হয়েছিলেন ৩ বার। ২০০৯ সালের ১৮ আগস্ট বুলাওয়েতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৯৮ রানে, ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায় ৯০ রানে এবং গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে আবুধাবিতে ৯৯ রানে সাজঘরে ফিরেছিলেন। এবার অপরাজিত থাকলেন ৯৮ রানে। এর ফলে ২১৫ ম্যাচের ২০১ ইনিংস খেলে তার ওয়ানডেতে রান ৭ সেঞ্চুরি, ৩৭ হাফসেঞ্চুরিতে ৩৬.৪৬ গড়ে ৬০৯০! তার পেছনে পড়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান ডিন জোন্স (১৬৪ ম্যাচ, ১৬১ ইনিংস ৬০৬৮) ও সাবেক কিউই অধিনায়ক ম্যাককুলাম (২৬০ ম্যাচ, ২২৮ ইনিংসে ৬০৮৩ রান)। এখন তিনি তাই সর্বকালের সেরা ওয়ানডে রান সংগ্রাহকদের মধ্যে ৫৯ নম্বরে উঠে এসেছেন। তার অনেক পেছনে পড়ে গেছেন অনেক কিংবদন্তি। অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড বুন (৫৯৬৪), দক্ষিণ আফ্রিকার জন্টি রোডস (৫৯৩৫), পাকিস্তানের রমিজ রাজাসহ (৫৮৪১) অনেকেই পারেননি ৬ হাজার রান করতে। বাংলাদেশের পক্ষে অবশ্য সবার ওপরে তামিম। তিনি ২০৩ ম্যাচে ২০১ ইনিংস ব্যাট করে ৬৮৯০ রানের মালিক। সাকিব আছেন দুইয়ে ২০৬ ম্যাচের ১৯৪ ইনিংসে ৬৩২৩ রান করে।
×