ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চে আসছে থিয়েট্রোনের নাটক ‘সিচুয়ানের সুকন্যা’

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২৭ জুলাই ২০১৯

মঞ্চে আসছে থিয়েট্রোনের নাটক ‘সিচুয়ানের সুকন্যা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থিয়েট্রোন ঢাকা ডট বিডি-মঞ্চে আনছে নতুন নাটক ‘সিচুয়ানের সুকন্যা’। আগামী ৩০ জুলাই মহিলা সমিতি ভবনের ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তেন নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে। পরদিন ৩১ জুলাই একই মঞ্চে নাটকটি দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হবে। বার্টল্ড ব্রেখটের ‘দ্য গুড ওমেন অব সিচুয়ান’ নাটকের অনুবাদ করেছেন মামুন হক। নাটকটি নির্দেশনা দিচ্ছেন সম্রাট প্রামানিক। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন জিনিয়া আজাদ, কৌশিক বিশ্বাস, সাদমান সাঈদ, বাপ্পি আমিন, তন্ময় বিশ্বাস, বাপ্পা রায়, শরীফুল ইসলাম, পার্থ সরকার, মাহমুদ শাকিল, ইবনে সাকিব, ফজলে রাব্বী, সায়লা পারভীন প্রিয়া, সাবরিন সুলতানা ও শিউলী ইসলাম। নাটকে ডিজাইন উপদেষ্টা আলি আহমেদ মুকুল, সেট নুর হোসেন, প্রপস এসএম সাইফুল হাসান, পোশাক শ্রেয়স্রী সরকার, আলো আতিকুল ইসলাম জয়, সঙ্গীত আহসান হাবীব বিপু, রূপসজ্জা এসএম সাইফুল হাসান, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা নুর-ই-আলম সুমন, সহকারী মঞ্চ ব্যবস্থাপনা আহমেদ কিংশুক, প্রযোজনা নির্বাহী নুর-ই-আলম সুমন । নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক সম্রাট প্রামানিক বলেন, বিশ্ব বিখ্যাত জার্মান কবি, নাট্যকার ও নির্দেশক ইউজিন বার্টল্ড ফ্রেডরিক ব্রেখট। জন্ম জার্মানিতে ১৮৯৮ সালে, মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬৫ সালে পূর্ব বার্লিনে। বার্টল্ড ব্রেখট মূলত নাট্যকার হিসেবেই বিশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে জননন্দিত হয়ে ওঠেন। তিনি নাট্যকলা সম্পর্কে নিজস্ব নাট্যচিন্তা ও ধ্যান-ধারণায় এনেছেন নতুন নাট্যকৌশল ‘এপিক থিয়েটার’। যা ছিল পূর্ববর্তী ক্লাসিক্যাল এ্যারিস্টটলীয় নাট্যধারার বিপরীত। তিনি দর্শকদের নাটকীয় ইন্দ্রজালের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার পরিবর্তে চিন্তাশীল, গতিশীল এবং বিশ্লেষণী ভূমিকায় অবতীর্ণ করেন। মার্কসবাদী চিন্তায় উদ্বুদ্ধ বার্টল্ড ব্রেখটের নাটকে উৎসারিত হয়েছে তৎকালীন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং সমাজের সাদা-কালো শাসক-শোষিতের সুস্পষ্ট দ্বন্দ্ব। বার্টল্ড ব্রেখটের ‘সিচুয়ানোর সুকন্যা’ নাটকটি এই চিন্তাধারার বাইরে নয়। বার্টল্ড ব্রেখটের নাট্যধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং তার ১২০তম জন্মবার্ষিকীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে থিয়েট্রোন ঢাকা বিডি’র প্রথম প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে এনেছেন তার রচিত নাটক ‘সিচুয়ানোর সুকন্যা’। এই পান্ডু লিপিটি জার্মান ভাষা থেকে অসাধারণ প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন মামুন হক। দীর্ঘসময় মামুন হকের জার্মানিতে অবস্থান, জার্মান ভাষা-সাহিত্য এবং শিল্পবোধ অনুবাদের ভাষা-বুননে স্পষ্ট। এই নাট্যপ্রযোজনায় আমরা নির্দেশক, অভিনেতা, ডিজাইনার, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা ও অভিনেতা মিলে ২৫ জন যুক্ত আছি। নাটলিপিটি টানা একমাস সান্ধ্যকালীন মহড়া শেষে প্রদর্শনী হয়। কিন্তু নাট্যনির্মাণ প্রক্রিয়ায় আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। উল্লেখ্য, নাটলিপিটিতে চরিত্র সংখ্যা ছত্রিশজন হলেও আমাদের চৌদ্দজন অভিনেতার মাধ্যমে নাট্যনির্মাণ করা এবং অভিনয়ে ব্রেখটীয় নাট্যরীতির প্রয়োগ। পুরো নাটলিপিটি মঞ্চায়ন করতে সময়সীমা হবে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। কিন্তু আমরা দেড় ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যেই নাট্যপ্রযোজনাটিকে বাঁধতে চেয়েছি। নাট্যপ্রযোজনার অভিনেতারা একেক জন একেক নাট্যদল থেকে আসা এবং অল্পসময়ের মধ্যে সবাইকে একই সূত্রে বাঁধা। উল্লেখিত চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ- আমাদের ডিজাইনার টিমের। একদিকে ডিজাইনের অনাড়ম্বতা অন্যদিকে সময় ও বিষয়বস্তুর নান্দনিক উপস্থাপন। আমরা এসব চ্যালেঞ্জকে যথাসাধ্য অতিক্রম শেষে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি ‘সিচুয়ানের সুকন্যা’ প্রযোজনা নিয়ে। আমরা বয়সে তরুণ, চিন্তায় নবীন। প্রযোজনার সঙ্গে প্রায় সকলেই উত্তর পুরুষের এই নাটকের নান্দনিক উপস্থাপনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি বয়সের ব্যবধানে। শুনেছি দেখি নাই নাট্যজন আলী জাকেরের নির্দেশনায় নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের প্রযোজনা ‘সৎ মানুষের খোঁজে’। কিন্তু অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমরা ভুলের উর্ধে নই। শ্রদ্ধেয় অগ্রজনের কাছে বিনীত দাবি- আমাদের প্রযোজনার অসঙ্গতি ধরিয়ে দিবেন। আমরা বুঝতে চাই, শিখতে চাই, জানতে চাই- প্রতিটি প্রদর্শনীতে আপনাদের সামনে নতুনভাবে হাজির হতে চাই। জয় হোক মানবতার, জয় হোক নাটকের। নাটক প্রসঙ্গে অনুবাদক মামুন হক বলেন, ১৯৯৩ সালে প্রথম জার্মানিতে এই নাটকটি দেখার সুযোগ হয় আমার। তখন দেখেই আমার মাতৃভাষায় নাটকটি দেখার এবং মঞ্চায়ন করার খুব ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম। তারই পরিবেশনা আজ। প্রথমত বার্টল্ড ব্রেখটকে জানতে হলে আমাকে চলে যেতে হবে ১৮৯৮ সালে। জার্মানির আউসবুখ শহরে ১৮৯৮ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। আউসবুখ শহরটি জার্মানির মিউনিখের নিকটেই অবস্থিত। যৌবনেই তার জন্মস্থান ত্যাগ করে মিউনিখে বসবাস করা আরম্ভ করেন। কয়েক বছর পরেই বার্লিনে স্থানান্তরিত হন। সে সময় বার্লিন ছিল শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির কেন্দ্র বিন্দু। বার্লিনে এক্সপ্রেশনিজম নামক সাহিত্যের সঙ্গে জড়িত হন। পরবর্তীতে বুঝতে পারে শ্রমিক শ্রেণীর সঙ্গে এক্সপ্রেশনিজম সাহিত্যিকদের সংহতি খুব কম ছিল। তার নাটকে ভারফ্রেমডং (এ্যালিয়েন্যাশন) নামক জার্মান সাহিত্যে নতুন অধ্যায় চালু করে এর সমাধান বের করার চেষ্টা করেন। সিচুয়ানের সুকন্যা সেল্টের আচরণে সমালোচনামূলক বক্তব্যই খুঁজে পাওয়া যায়। সে চায় সমাজের পরিবর্তন করতে। ব্রেখট ভিন্ন দুটি ধরনের নাটক তার জীবনে করে গেছেন। একটি এপিক থিয়েটার অন্যটি ড্রামাটিক থিয়েটার। ড্রামাটিক থিয়েটারে আমরা এক ধরনের ভয় ও সহানুভূতি দেখতে পাই। এবং এই সমস্ত নাটকে একটি পরিশুদ্ধতার মাধ্যমে পরিসমাপ্তি হয়। এপিক থিয়েটার যেটা দর্শকদের মাঝে একটা সমালোচনামূলক অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। তার এসব নাটকের মাধ্যমে সমাজের মানুষের মাঝে সচেতনতা ও সক্রিয়তা বৃদ্ধি করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। প্রাচীন গ্রিসের মতো দেবতাদের মাউন্ট অলিম্পাস থেকে নামিয়ে নিয়ে আসেন। প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত নাট্যকার ইউরিপিদিস তার নাটকে দেবতাদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। কিন্তু ব্রেখট এখানে অন্য পথে হেঁটেছেন। তার লেখক জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। যেমন ১৯৩৩ সালে এক নায়ক তন্ত্রের কারণে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তখন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকেও জার্মান ত্যাগ করতে হয়েছিল। ব্রেখট জার্মানি ছেড়ে কয়েকটি দেশে বসবাস করেছেন। যেমন- সুইডেন, ডেনমার্কসহ যুক্তরাষ্ট্রেও তিনিও বহু দিন বসবাস করেছেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব জার্মানিতে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে পূর্ব বার্লিনে থিয়েটার, নাটকের জগতে অনেক সুখ্যাতি অর্জন করেছিল। এই জগত বিখ্যাত নাট্যকার ১৯৫৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
×