ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথভাবে কাজ করছে পাউবো-সেনাবাহিনী

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২১ জুলাই ২০১৯

যৌথভাবে কাজ করছে পাউবো-সেনাবাহিনী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ উজান থেকে আসা যমুনা নদীর বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক সড়কের টেপিবাড়ী (মালদহ) নামক এলাকায় বাঁধ রক্ষা সড়ক মেরামতের কাজ দ্রুত গতিতে রাত দিন বিরতিহীনভাবে কাজ করছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সেনাবাহিনী। তাদের কাজে সহযোগিতা করতে যুক্ত হয়েছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীরা। রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যৌথভাবে ভাঙনকৃত বাঁধ মেরামতের জিওব্যাগ ফেলার কাজ করছে তারা। সার্বক্ষণিক তদারকিতা করছেন সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এর আগে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকে কাজ শুরু করা হয়। এদিকে যমুনা নদীর ভূঞাপুর অংশে বিভিন্ন পানিবন্দি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানিবাহিত নানা ধরণের রোগবালাই। ভাঙনের পরের দিন শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকালে ওই ভাঙন কবলিত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পরিদর্শনকালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, ভূঞাপুর-তারাকান্দি রাস্তা যমুনা সার কারখানার জন্য গুরুতপূর্ণ বিধায় জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন অংশে জিওব্যাগ ফেলে গাড়ী চলাচলের উপযোগী করা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব আরো জানান, যমুনার পশ্চিমাংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে, পূর্বাংশে প্রাথমিকভাবে কাজ চলছে, জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ থেকে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পর্যন্ত ভাঙন রোধে সার্ভে করে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বন্যায় জলাবদ্ধদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রাণলয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের টেপিবাড়ী এলাকায় (মলাদহ) নামক বাঁধ ভাঙন স্থান পরিদর্শন শেষে ভূঞাপুর পৌরসভা সংলগ্ন স্লুইচ গেটের পাশে উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়ন সমূহের বন্যা ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পূর্বে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী আরও বলেন, ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের উপজেলার টেপিবাড়ী, তাড়াই এলাকায় ভাঙনকৃত রাস্তা মেরামেতের কাজ শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। মেরামেত কাজে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীরা যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়াও তিনি বলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্য যমুনা নদীর পূর্বপাড়ের বেরী বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। শুধু তাই নয় ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বাঁধও দেয়া হবে। একই অনুষ্ঠানে দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মো. এনামুর রহমান এমপি বলেন, সারাদেশে একযোগে বন্যা শুরু হয়েছে। আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করছি বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। বন্যা চলাকালীন অবস্থায় আমাদের এই ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তবে ত্রাণ দিয়ে আপনাদের ছোট করতে চাই না। তাই বন্যা শেষ হলেই আপনাদের এলাকা রক্ষা করতে বেরী বাঁধের কাজ শুরু হবে। তিনি আরোও বলেন, ভূঞাপুরে গবাদিপশু আশ্রয়ের জন্য একটি মুজিবকেল্লা করা হবে। এ সময় ত্রাণ বিতরণের সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, টাঙ্গাইল-০২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির, টাঙ্গাইল-০৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, টাঙ্গাইল- ০৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক টিটু, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো: শহীদুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় (বিপিএম), ভূঞাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এড্ভোকেট আব্দুল হালিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঝোটন চন্দ, পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ প্রমুখ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরে সড়কটি হুমকির মুখে ছিলো। সেটি মেরামত করার তৎপরতা চলছিলো। হঠাৎ করেই রাতে টেপিবাড়ী অংশে ভেঙে যায়। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের আহ্বানে সেনাবাহিনী বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেছে। সকালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি পরিদর্শন করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় সাংসদ ছোট মনির, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোশারফ হোসেন খান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রন কক্ষ সূত্র জানায়, বন্যা কারণে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী, নাগরপুর, দেলদুয়ার উপজেলার প্রায় ১১১ টি গ্রামের তিন লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকার ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার রাতে ভূঞাপুর -তারাকান্দি সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত নলিন-পিংনা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙে যায়। স্থানীয়রা জানান, তীব্র স্রোতের ভূঞাপুর পৌর এলাকার টেপিবাড়ী নামক স্থানে বৃহস্পতিবার (১৭ রাত ৮ টার দিকে সড়কটি ভেঙে যায়। ফলে ভূঞাপুর পৌরসভা ও ফলদা ইউনিয়নের ৭/৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভূঞাপুরের সঙ্গে তারাকান্দির সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে এই সড়ক দিয়ে তারাকান্দিবাসীর যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। পূর্ব থেকে ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে সড়কটি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেত।
×