ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের পর গ্রেফতার রিগ্যানের জবানবন্দীতে চাঞ্চল্যকর তথ্য

হলি আর্টিজানসহ সব হামলার নেপথ্য কারিগর শিবির

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২০ জুলাই ২০১৯

 হলি আর্টিজানসহ সব হামলার নেপথ্য কারিগর শিবির

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ব্লগার, প্রকাশক, লেখক থেকে শুরু করে সর্বশেষ হলি আর্টিজান পর্যন্ত সব হামলার নেপথ্য কারিগর ছিল জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ছাত্র শিবির। বিভিন্ন অপারেশনে যেসব জঙ্গী হামলায় অংশ নিয়েছিল, তারা সবাই ছাত্র শিবিরের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছিল। ছাত্র শিবিরই তাদের পরিকল্পিতভাবে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করেছিল। জঙ্গী হিসেবে হামলায় অংশ নেয়ারা এক সময় ছাত্র শিবিরের পরিচালিত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের ছাত্র ছিল। কোচিং সেন্টার থেকেই তাদের টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে আত্মঘাতী জঙ্গী হিসেবে গড়ে তুলেছিল ছাত্র শিবির। বহুল আলোচিত ঢাকার কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানাটিতে রীতিমত নিয়ম করে একে ২২ রাইফেল, চাকু, পিস্তল চালানোর ক্লাস নেয়া হতো। আস্তানায় থাকা জঙ্গীদের অবসরে বিনোদন হিসেবে আইএসের বিভিন্ন কর্মকান্ড ও যুদ্ধের ভিডিও ফুটেজ দেখানো হতো। মেজর জিয়া, তামিম আহমেদ চৌধুরী ও মারজানসহ শীর্ষ জঙ্গীরা সেখানে যাতায়াত করত এবং ক্লাস নিত। এমনকি আস্তানাটি পরিচালনার পুরো ব্যয়ভার বহন করত শীর্ষ জঙ্গীরা। ব্যয় হওয়া টাকার অধিকাংশই ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হতো। হলি আর্টিজানে হামলার পর কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে নিহত হয় নয় জঙ্গী। পরে রকিবুল হাসান রিগ্যান নামের এক জঙ্গী গ্রেফতার হয়। প্রত্যেক জঙ্গীর অন্তত চারটি করে ছদ্ম নাম থাকত। রিগ্যানের ছদ্ম নাম ছিল পাঁচটি। রিগ্যানের দেয়া জবানবন্দীতে প্রকাশ পেয়েছে এমন আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান রেস্তুরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গী হামলায় বনানী থানার ওসি সালাহ উদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ছাড়াও ১৭ বিদেশী ও তিন বাংলাদেশী নিহত হন। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ পাঁচ জঙ্গীর মৃত্যু হয়। এমন ঘটনার পর থেকেই সারা দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। জঙ্গী আস্তানার সন্ধানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর ছয়তলা জাহাজ বিল্ডিংয়ে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মেলে। সেখানে যৌথবাহিনীর অভিযানে নয় জঙ্গী নিহত হয়। পালিয়ে যায় ইকবাল নামের এক জঙ্গী। আর পালানোর সময় লাফিয়ে পড়ে পা ভেঙ্গে আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় রকিবুল ইসলাম রিগ্যান নামের এক জঙ্গী। রিগ্যানকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে অনেক অজানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিগ্যান বর্তমানে কারাগারে। জবানবন্দীতে দেয়া তথ্য মোতাবেক রিগ্যানের পিতার নাম মৃত রেজাউল হক। মায়ের নাম মোছা. রোকেয়া আক্তার। তিনি বগুড়া জেলার নন্দিগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স। একমাত্র বোন তানিয়া সুলতানা। বগুড়া সরকারী শাহ সুলতান কলেজের ছাত্রী। বাড়ি বগুড়া সদর জেলার ইসলামপুর পশ্চিমপাড়ায়। তারা বগুড়া সদরের জামিলনগরে বসবাস করে। রিগ্যানের দাদার নাম মৃত আব্দুর জব্বার প্রামানিক। বাড়ি বগুড়া জেলা সদরের ইসলামপুর পশ্চিমপাড়ায়। রিগ্যানের চাচার নাম আব্দুল করিম (৫৮) ও জুয়েল (৬৮)। নানার বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দির ছায়াহাটে। রিগ্যানের পাঁচ মামা আশরাফ, জলিল, গফুর, খলিল ও মধু। রিগ্যান ২০১৩ সালে স্থানীয় করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এ প্লাস পেয়ে এসএসসি পাস করে। তাকে জঙ্গীবাদে টানার পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের শেষ দিকে ক্লাস ফ্রেন্ড মেহেদী হাসান শুভ রিগ্যানের নাম পরিবর্তন করে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামে ফেসবুক আইডি খুলে দেয়। ফেসবুক খুলে দেয়ার পর থেকেই তার ওপর নজর রাখছিল শিবির। পরিকল্পনা মোতাবেক ফেসবুকে সাব্বির (২৫) নামে এক জনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া হয়। সাব্বির নিয়মিত রিগ্যানকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকে। সাব্বির কথা ভাল লাগে। এরপর বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ মাঠে সাব্বিরের সঙ্গে ৭/৮ বার রিগ্যানের দেখা সাক্ষাত ও কথা হয়। সাব্বির তাকে ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষা করার জন্য বলে। পাশাপাশি দ্বীনের দাওয়াত দেয়। দ্বীন কায়েমের সঠিক আকীদা, দাজ্জাল ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনুমান নির্ভর বিষয় নিয়ে তৈরি করা কাগজপত্র দেয়। এদিকে ২০১৫ সালে বগুড়া শাহ সুলতান সরকারী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে এইচএসসি পরীক্ষা দেয় রিগ্যান। ততদিনে সাব্বিরের মাধ্যমে রিগ্যান পুরোপুরি জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষার ফল বের হওয়ার আগেই পিতা-মাতা রিগ্যানকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছে পোষণ করতে থাকেন। এজন্য রিগ্যানের জন্য কোন কোচিং সেন্টার ভাল, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন পিতামাতা। ঠিক তখনই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হাজির হয় বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের ছাত্র শিবিরের নেতা মোহাম্মদ রেজ্জাকুল। রেজ্জাকুল রিগ্যানকে রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তির যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেয়। কোচিং সেন্টারে এক মাস মেডিক্যাল ভর্তির কোচিং করে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই রিগ্যানের পুরোপুরি ব্রেন ওয়াশ করে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হিসেবে থাকা জঙ্গী প্রশিক্ষকরা। তারা রিগ্যানকে পুরোপুরি মোটিভেট করতে সক্ষম হয়। রিগ্যান জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পর সে আবার বগুড়ার আদমদীঘির ছাত্র শিবিরের নেতা মাসুদ ও শিহাবকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়। তারা দাওয়াত কবুল করে। জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পর রিগ্যানের সঙ্গে তারা ঢাকায় পালিয়ে আসে। জঙ্গী নেতাদের কথামত রিগ্যান মাসুদ ও শিহাবকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই কোচিং সেন্টারে যাওয়ার কথা বলে বগুড়ার শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে সাব্বির নামের সেই জঙ্গী তিন জনকে অন্য একজনের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। (প্রসঙ্গত, এই শিহাবই ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন ৩৫ নম্বর আছিয়া নিবাসের দ্বিতীয় তলায় নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে বাসায় ঢুকে চাপাতি দ্বারা কুপিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাত ভাই, ইউএসএআইডি কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যায় সরাসরি জড়িত। এ ছাড়া আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনার প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা ও লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনায় হামলায়ও জড়িত ছিল শিহাব। আর মাসুদ ২০১৬ সালে ২৩ অক্টোবর হোসেনী দালানে বোমা হামলার আগের রাতে ২২ অক্টোবর রাজধানীর গাবতলীর আমিনবাজারে চেকপোস্টে তল্লাশিকালে ছুরিকাঘাতে দারুস সালাম থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক ইব্রাহিম মোল্লা হত্যার সঙ্গে জড়িত। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছাত্র শিবিরের সভাপতি হিরণ পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। হিরণের সঙ্গে ছিল মাসুদ। সে বগুড়া আদমদীঘি উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাথী। মাসুদ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তারা মিরপুরের একটি বাসায় ওঠে। ওই বাসায় শাহীন, আতিকুর, ফাহাদ, সবুজ, ও আবু মুসলিম এবং তারা তিনজনসহ মোট ১৫ থেকে ২০ জন থাকত। থাকার সময় তাদের অধিকাংশই ছদ্মনাম ব্যবহার করত। বাসাটিতে ২৫ দিনের মতো ছিল তারা। সেখানে শিহাবের দায়িত্ব ছিল হাদিস পড়ে শোনানো। বাসাটি পরিবর্তন করে দ্বিতীয় বাসা হিসেবে মিরপুর-১ নম্বর ১২৩/এ দক্ষিণ বিশিলের ১০ নম্বর সড়কের সাদা মাযহাফ মসজিদের সঙ্গে থাকা ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় রিগ্যান, আতিক, মাসুদ, শাহীদ, আকাশ, সম্রাট, সুমন, ফরিদ, উমায়ের, সবুজ ও আবু মুসলিম অবস্থান করতে থাকে। এই বাসাটিতে তারা দুই মাস ছিল। এরপর মিরপুর-২ এর পশ্চিম মনিপুরের ১৩৪ নম্বর ছয়তলা বাড়ির পঞ্চম তলায় ছিল তারা। এই বাসায় নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত তামিম আহমেদ চৌধুরী ও হলি আর্টিজান মামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড মারযান যাতায়াত করত। এরপর মিরপুরের মধ্যপাইকপাড়ার ১৬৯ নম্বর বাড়ির ছয়তলার চতুর্থ তলার দক্ষিণ পাশের আনোয়ারুল আজিম ভূঁইয়ার বাসায় ৪ মাস ছিল। প্রতিটি বাসায়ই নতুন নতুন মানুষ থাকত। এখানে কল্যাণপুরের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া ইকবালও তাদের সঙ্গে ছিল। এরপর তারা আবার বাসা পরিবর্তন করে দক্ষিণ পাইকপাড়ার ৪৩২/এ নম্বর ১০তলা বাড়ির ছয় তলায় ওঠে। এই বাসায় আজিমপুরে পুলিশের অভিযানের সময় আত্মহত্যা করা তানভীর ছিল। এরপর ২০১৬ সালের ১২ জুলাই তারা কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ে ওঠে। ওই বছরের ২৬ জুলাই চালানো অভিযানে ইকবাল পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। নিহত হয় নয় জঙ্গী। রিগ্যান আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয়। রিগ্যান তার দেয়া জবানবন্দীতে আরও বলেছে, তার মূল কাজ ছিল হাদিস পড়ে শোনানো। আর কল্যাণপুরের বাসায় সে রান্নার কাজও দেখাশোনা করত। বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া তারা বাসার বাইরে বের হতো না। হাদিস পড়ে শোনানোর পাশাপাশি সে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকে। রনি নামের এক জঙ্গী বাইরে যোগাযোগ রাখত। পুরো বাসার ভাড়া, সবার হাত খরচের টাকা তামিম আহমেদ চৌধুরী দিত। রনি মোবাইলে থ্রিমা, উইকা, কিক এ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ রাখত। বাসায় একটি একে ২২ বোরের অটোমেটিক রাইফেল রাখা হতো। এছাড়া কমান্ডো চাকু ও রিভলবার পিস্তল ও বুলেট থাকত। প্রতিদিন নিয়ম করে রাইফেল, চাকু ও রিভলবার চালানোর কলাকৌশল শেখানোর জন্য ক্লাস নেয়া হতো। পুরো অস্ত্র রাখার দায়িত্ব পালন করত আতিক। বাসায় থাকা সবাই একেক জন একেক বিভাগের সদস্য ছিল। ওই বাসায় অপারেশন বিভাগ, দাওয়া বা দাওয়াত বিভাগ, ব্যাচ বিভাগ আলাদা আলাদাভাবে কাজ করত। বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে রিগ্যানকে রিয়াদুস সালেহীন ৪ খন্ড এবং আইএসের দাবিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয় পড়ে শোনাতে হতো। রিগ্যানের বহু ছদ্মনাম ছিল। তাকে অনেক সময় হাসান, রিপন, নিলয়, রাফি ও রাফিউল ইসলাম নামে ডাকা হতো। এসবই ছিল তার ছদ্ম নাম। আজিমপুরে নিহত তানভীর কাদেরীকে সবাই বড় ভাই ছদ্মনামে ডাকত। তারা মিরপুর সরকারী বাঙলা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিত। বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বইপুস্তক রাখা হতো। যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। প্রকৃতপক্ষে যারা বাসায় ছিল তারা কেউই এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কোনকালেই ছাত্র ছিল না। বাসার ভেতরে গড়ে তোলা হতো ব্যায়ামাগার। যাতে তারা শরীর চর্চা করে সর্বক্ষণ অপারেশনের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। বাসায় অবসর সময় কাটানোর জন্য বিনোদন হিসেবে আইএসের ডিভিও দেখানো হতো। কল্যাণপুরের বাসায় হলি আর্টিজানের চেয়েও বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক অপারেশন চালানোর পরিকল্পনা চলছিল। সেইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত প্রশিক্ষিত ও আত্মঘাতী হিসেবে গড়ে তোলাদের ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল উচ্চ পর্যায় থেকে। এমন প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। দেশেই তারা হলি আর্টিজানের মতো আরও বড় কিছু করার জন্য তৈরি হচ্ছে বলে আগাম আভাস দিয়েছিল। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গী জোবায়ের হোসেন (২০), নোয়াখালী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। নিহত সাব্বিরুল হক চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকনোমিকস এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র ছিল। শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টারে পড়ার সময় জঙ্গী হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী শেহজাদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শিবির থেকে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া নিহত আব্দুল্লাহ, আবু হাকিম নাইম, তাজ-উল-হক রাশিক, আকিফুজ্জামান খান ও মোঃ মতিয়ার রহমানদের প্রায় সবাই শিবিরের কোচিং সেন্টার ও কলেজে পড়ার সময় শিবিরের সংস্পর্শে এসে আস্তে আস্তে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
×