ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রফির ভাগ চান নিউজিল্যান্ড কোচ!

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১৭ জুলাই ২০১৯

ট্রফির ভাগ চান নিউজিল্যান্ড কোচ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নির্ধারিত ৫০ ওভার টাই। সুপার ওভারও টাই। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিয়ম অনুযায়ী বেশি বাউন্ডারির জোরে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ১২তম বিশ্বকাপের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের দৃশ্য এখনও সবার চোখে ভাসছে। একটা দল ১০২ ওভার খেলে না হেরেও শিরোপাবঞ্চিত, আরেকটা দল স্রেফ বাউন্ডারির বিনিময়ে মেতে উঠল উৎসবে। এই নিয়মে পরিবর্তন চাইছেন রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড কোচ। এমনকি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দুই দলকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার দাবিও জানিয়েছেন গ্যারি স্টিড। ভগ্ন হৃদয়ে তিনি কথা বলেছেন ওভার থ্রো থেকে পাওয়া প্রতিপক্ষের সেই ৬ রান নিয়েও। যেটি ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়। ইংলিশদের জয়ের নায়ক বেন স্টেকস অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি আজীবন কেন উইলিয়ামসনের কাছে ক্ষমা চেয়ে যাবেন। নিয়ম-কানুনের এমন ফল খোদ কিউই সেনাপতিও মেনে নিতে পারেননি। ভদ্রলোকের প্রতিমূর্ত উইলিয়ামসনের বুকের গভীর থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাসই বেরিয়ে আসছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় আবেগ সামলাতে না পেরে যুগ্মচ্যাম্পিয়নের ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়ে বসেন গ্যারি স্টিড। তিনি বলেন, ‘যখন সাত সপ্তাহের টুর্নামেন্টের ফাইনালে দু’দলকে আলাদা করা যায় না তখন অন্যকিছু বিবেচনা করা উচিত। সবকিছু পুনর্বিচার করতে হবে। আমি মনে করি তা করার সময় এখনই!’ এরপরই নিজেকে সামলে নিয়ে স্টিড বলেন, ‘রুদ্ধশ্বাস এই ফাইনালের শেষটা এমনভাবে হওয়া কাম্য নয়। এক শ’ ওভার ও সুপার ওভার শেষেও দুই দলের মধ্যে সেরা বেছে নেয়া যায়নি। শেষে বাউন্ডারি গণনায় বিশ্বকাপ জয়! নিয়মের বেড়াজালে আমাদের খালি হাতে ফিরতে হলো। এই ম্যাচ দেখার পর আগামী দিনে আইসিসি নিশ্চয়ই নিয়মের বদল আনবে।’ নিউজিল্যান্ডের ওভার থ্রো থেকে অতিরিক্ত রান পেয়েছে ইংল্যান্ড। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে ক্রিকেট অঙ্গনে। মার্টিন গাপটিলের ছুড়ে মারা বল ইংলিশ ব্যাটসম্যান বেন স্টোকসের ব্যাটে লেগে বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। তাতে দৌড়ে দুই রান আর ওভার থ্রোতে ৪ রান মিলে ৬ রান যোগ হয় ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে। ক্লোজ ম্যাচে যেটি শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দেয়। সাবেক আম্পায়ার সাইমান টাফেলও এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেননি, ‘দ্বিতীয় রানের সময় স্টোকস দাগ অতিক্রম করেনি। সে অনুযায়ী সেটা ৫ রান হবে এবং স্ট্রাইকে থাকবে অপর ব্যাটসম্যান।’ টাফেলের বক্তব্য নিয়ে কিউই কোচ গ্যারি স্টিড বলেন, ‘আমি আসলে ব্যাপারটা জানতাম না। কিন্তু দিন শেষে আম্পায়াররাও তো মানুষ। মাঝে মধ্যে তারাও ভুল করে। কিন্তু এমন সময় ভুল করা কারোই কাম্য নয়।’ নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ দেশটির সাবেক তারকা ক্রিকেটার ক্রেইগ ম্যাকমিলানও কণ্ঠ মিলিয়েছেন স্টিডের সুরে। তিনিও বিশ্বাস করেন শিরোপা ভাগাভাগি করা ‘ঠিক ছিল’। তিনি বলেন, ‘এটা এমন না যে কালকেই ফল পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত এটা বলা ঠিক হবে, সাত সপ্তাহের এত বড় টুর্নামেন্ট শেষে যখন ফাইনাল ম্যাচ ও সুপার ওভারেও দু’দলকে আলাদা করা গেল না এবং কোন দলই যখন হারেনি তখন শিরোপা নিয়ে অন্যভাবে ভাবা যেত।’ বাউন্ডারির হিসেবে ইংল্যান্ডকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আইসিসির সমালোচনা করেছেন গৌতম গম্ভীর, ডিন জোনস, ব্রেট লি, যুবরাজ সিংয়ের মতো সাবেক তারকারা। অবশ্য ভবিষ্যতে আইসিসি যুগ্মচ্যাম্পিয়ন নিয়ে ভাববে বলে আত্মবিশ্বাসী গ্যারি স্টিড ও ক্রেইগ ম্যাকমিলান। ম্যাকমিলান বলেন, ‘নিয়ম যথাযথভাবে হয় কিনা তা আমি জানি না। আমি অনেক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছি, অনেক ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি। সুতরাং আবার বলি, এটা নিয়ে বিতর্ক হবে, আলোচনা হবে। কিন্তু ফল পরিবর্তন হচ্ছে না।’ নিয়তির হিসেব মেলানো কঠিন। এই নিয়তি কখন কাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা আসলেই কেউ জানে না। ৪৭ বছর বয়সী গ্যারি স্টিড একসময় ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসের মাঠকর্মী ছিলেন। অথচ স্টিড এবার বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই লর্ডসেই ফিরছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধান কোচ হিসেবে। এ গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানায়। দুর্ভাগ্য একটুর জন্য কিউদের প্রথম শিরোপাটা এনে দিতে পারলেন না।
×