ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গত সাড়ে ৩ বছরে

এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা শুল্ক ছাড়

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৩০ জুন ২০১৯

 এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা শুল্ক ছাড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত সাড়ে তিন বছরে এমপিদের গাড়ি, শিল্পের কাঁচামাল ও পোল্ট্রি শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে সরকার শুল্ক ছাড় দিয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। যাতে অন্তত ৪টি পদ্মা সেতু অথবা রূপপুরের মতো আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা যেত। অনেক ক্ষেত্রেই এই ছাড় বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ভবিষ্যতে শুল্ক ছাড়ের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করতে কাজ করছে সংস্থাটি। চট্টগ্রাম বন্দরে অসংখ্য কন্টেনারে আসছে পণ্য। শুল্ক ফাঁকি আর মুদ্রাপাচার করতে কোন কোন কন্টেনারে ঘোষণা এক পণ্যের, আসছে অন্য পণ্য। ধরা না পড়লে সত্য-মিথ্যার বালাই নেই সবই বৈধ। এই যেমন ২০১৭ সালের আলোচিত ১২ কন্টেনার আটকের ঘটনা। যা ধরা পড়ার পর জানা গেল, এরকম আরও ৭৮ কন্টেনার মিথ্যা ঘোষণার পণ্য আমদানির আড়ালে পাচার হয়েছে হাজার কোটি টাকা। ঘোষণা ছিল পোল্ট্রি শিল্পের কাঁচামাল আর আনা হয় উচ্চ শুল্কের মদ ও সিগারেট। অথচ অনুসন্ধানে জানা যায়, পোল্ট্রি শিল্পের কোন অস্তিত্বই নেই। শুল্কমুক্ত সুবিধাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সরকারের বিপুল অংকের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি করা হয়েছে মুদ্রা পাচার। এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। এনবিআরের তৈরি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেল সাড়ে তিন বছরে পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্প ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়েছে। শুধু চলতি অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর সময়ে মাত্র ৫ মাসেই নেয় হয়েছে ৩ হাজার ২শ’ কোটি টাকার শুল্ক মুক্ত সুবিধা। কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, মূলত শুল্কমুক্ত সুবিধার আড়ালে মুদ্রাপাচার ও রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য পোল্ট্রি শিল্পের পণ্য ঘোষণা দেয়া হয়। এরকম আরও অনেক খাত সরকার থেকে শুল্ক মুক্ত সুবিধা নিচ্ছে বছরের পর বছর। এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, গত সাড়ে তিন বছরে এমপিরা নিজেদের বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিতে ৭৫৫ কোটি টাকার সুবিধা নিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন মিশন ও বিদেশী কূটনীতিকরা নিয়েছেন ১ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা, বিভিন্ন দাতা ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ২৭ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা, এর মধ্যে কিছু অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করলেও প্রশ্ন রয়েছে অনেক খাত নিয়ে। সব মিলিয়ে গেল সাড়ে ৩ বছরে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন শিল্প ও সেবা খাত প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকার শুল্ক মুক্ত সুবিধা নিয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে দেশে জিডিপির হার ৮ দশমিক ১ শতাংশ। এ ধারা টেকসই করতে সরকার পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত সাড়ে তিন বছরে যে শুল্ক মুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে তা দিয়ে অন্তত ৪টি পদ্মা সেতু অথবা একটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র করা যেত। যদিও এনবিআর মনে করে, জিডিপির ধারা অব্যাহত রাখার পেছনে শুল্ক ছাড়ের সুফল রয়েছে। এজন্য বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দিতেও হবে। তবে এর অপব্যবহার ঠেকানোর বিষয়টিও এবার তাদের বিশেষ নজরে থাকবে।
×