ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নার্সারি করে কোটিপতি দীপক

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২৯ জুন ২০১৯

 নার্সারি করে কোটিপতি দীপক

শুরুটা ছিল ২০০৩ সালে। মাত্র ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন নাটোর শহরতলীর বনবেলঘড়িয়া এলাকার যুবক দীপক কুমার ঘোষ। তিনি ১০ কাঠা জমিতে পেয়ারা, লেবু আমসহ বিভিন্ন জাতের কলম চারা তৈরি শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে এতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বছর না ঘুরতেই সেই ১০কাঠা জমির কলম চারা বিক্রি করেন দ্বিগুণ দামে। এরপর থেকে দীপক কুমার ঘোষকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক বছরের মাথায় আরও তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে ‘মেসার্স প্রকৃতি নার্সারি’ নাম দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমান ১০০ বিঘা জমিতে ঠেকেছে দীপকের প্রকৃতি নার্সারির পরিমাণ। দীপক শুধু নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেনি, বর্তমানে তার নার্সারিতে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। বেকারত্ব ঘোচানোর পাশাপাশি নিয়মিত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে অনেক নারী-পুরুষের। বর্তমানে সদর উপজেলার ছাতনি পন্ডিতগ্রাম, ছাতনি স্লুইসগেট, ছাতনি স্কুলপাড়া, পাইকেরদোলসহ ৬/৭টি স্থানে দীপক কুমার ঘোষের নার্সারিতে চারা তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে ১০০বিঘা জমিতে নার্সারি থাকলেও প্রতিবছর ৫ থেকে ১০বিঘা জমিতে নার্সারির পরিধি বাড়ছে। এসব জমি থেকে তার প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লাখ পিচ চারা উৎপাদন হয়; যা থেকে আয় আসে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। বর্তমানে নার্সারি ব্যবসা দীপককে বানিয়েছে কোটিপতি। তার নার্সারিতে উৎপাদিত চারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদের মধ্যে নারীরা নার্সারির বিভিন্ন কলমের বেড পরিষ্কার করছেন, কেউ গাছে পানি ঢালছেন। এমন ব্যস্ততার মাঝে কথা হয় পারুল বেগম, রেশমা, সিরাজুল ইসলাম, রবি, মিলনসহ শ্রমিকদের সঙ্গে। নার্সারি শ্রমিক রেশমা বেগম বলেন, দীপক কুমার ঘোষের নার্সারি চালু করার পর থেকে এখানে কাজ করি। নিয়মিত কাজ হওয়ার কারণে আমাদের কোন দিনই বসে থাকতে হয় না। তাছাড়া অল্প শ্রমে আমরা মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে পাই। এতে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। পারুল বেগম বলেন, বাড়ির পাশে হওয়ার কারণে আমাদের দূরে কোন কাজের সন্ধানে যেতে হয় না। পরিবার সামলেই আমরা নার্সারিতে কাজ করতে পারি। আমার মতো অনেক নারী এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। আগে মরিচের ব্যবসা করতেন সিরাজুল ইসলাম। নার্সারি শুরুর এক বছরের পর থেকেই তিনি দীপক কুমার ঘোষের সকল কিছু দেখাশোনা করছেন। দীপক কুমার বলেন, ২০০১ সালে এসএসসি পড়াশোনার পাশাপাশি গুড় ব্যবসা শুরু করি। পরে এইচএসসি পাস করি। এরপর ২০০৩সালে ছোট পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি ব্যবসা চালু করি। নাটোরের সাবেক উদ্যানতত্ত্ববিদ ও বর্তমানে ঈশ্বরদীর টেবুনিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুল আউয়ালের পরামর্শে আমি নার্সারি ব্যবসা চালু করার পর থেকে পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি। প্রতি বছর আমার নার্সারিতে ২০ লাখের বেশি চারা উৎপাদন হয়; যা থেকে বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা বিক্রি হয়। দীপক আরও বলেন, আমার নার্সারিতে অনেক বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। নাটোরের সাবেক উদ্যানতত্ত্ববিদ ও বর্তমানে ঈশ্বরদীর টেবুনিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, দীপক ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন তার নার্সারির পরিধি বেড়েছে। তার নার্সারি কিভাবে আধুনিকায়ন করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। তাছাড়া ভালমানের চারা কিভাবে তৈরি এবং বাজারজাত করা যায় সে পরামর্শ দীপক কাজে লাগিয়ে আজ সফল ব্যবসায়ী। -কালিদাস রায়, নাটোর থেকে
×