ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে রাজউককে

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২৮ জুন ২০১৯

বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে রাজউককে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) জনবান্ধব, স্বচ্ছ, দীর্ঘসূত্রতামুক্ত একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। এজন্য রাজউককে কেন্দ্র থেকে বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অডিটোরিয়ামে রাজউক সেবা সপ্তাহ ২০১৯-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি এসব কথা বলেন। রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর সভাপতি প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট-এর সভাপতি স্থপতি জালাল আহমেদ এবং ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এর সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ আব্দুস সবুর, রাজউক কর্মচারী লীগ সভাপতি আবদুল মালেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রাজউকের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ আমজাদ হোসেন খান। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, এত বড় ঢাকায় একটি রাজউকে বসে সব কিছু পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজউকের সকল জোনকে শক্তিশালী করতে চাই। স্তরভিত্তিক পরিসর বাড়ার কারণে রাজউককে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে। এটা তিনি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন। অদূর ভবিষ্যতে রাজউকের কেন্দ্রিকতা বিকেন্দ্রিকতায় পরিণত হবে, যাতে মানুষ সেবা পেতে পারে। মন্ত্রী বলেন, রাজউককে আমরা একটা ইমেজপূর্ণ জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি। রাজউকের ভেতরে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিকভাবে কাজ করছে, কিন্তু একটি ক্ষুদ্র অংশের জন্য রাজউককে বদনামের বোঝা কাঁধে নিতে হয়। দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল থেকে শুরু করে সব নির্মাণ তখনই ঢাকা পড়ে যায় যখনই বালিশ কেলেঙ্কারির বোঝা আমাদের মাথায় নিতে হয়। যাদের ভুল আছে তাদের শোধরানোর জন্য বারবার বলছি। যে শুধরাবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে মন্ত্রণালয়, রাজউক, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদফতর থেকে শুরু করে একটা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী অন্যায়ভাবে হয়রানি হোক এটা আমি চাই না। রাজউকে একটা ব্যাপক পরিবর্তনের জোয়ার এসেছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন, এই পরিবর্তনকে ধরে রাখতে হবে। সেবা প্রার্থীদের জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি তারা হয়রানি হননি, সেবা পেতে কাউকে টাকা দিতে হয় নি। এই পরিবর্তনকে আরও বেগবান করতে চাই। স্বচ্ছতা, সততা, ন্যায়নিষ্ঠতার কোন বিকল্প নেই। এটিকে ধারণ করতে হবে। ক্ষুদ্র অংশ যাদের কারণে অভিযোগ আসে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভাল অর্জনের ভেতরে যারা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে তাদের বিদায় করে দেব, তাদের রাজউকে দরকার নেই। পূর্তমন্ত্রী বলে, রাজউকের নব্বই শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সম্পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি ক্ষুদ্র অংশকে অনুরোধ করছি সবাই মিলে ভাল হয়ে যান। ভাল না হলে আপনাদের রাজউকে প্রয়োজন আছে কিনা ভেবে দেখতে হবে। এত পরিশ্রমের রাজউক দু-একজনের কারণে নষ্ট হয়ে যাবে, বদনাম কাঁধে নেবে, এটা হতে পারে না। সাধারণ মানুষের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, রাজউককে সাহায্য করুন। গতানুগতিকভাবে রাজউকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেক সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যে যেভাবে কাজ করছেন, এটা প্রশংসার দাবি রাখে। রাজউক-এর সেবাটাও দেখুন। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা কাউকে ছাড় দিতে চাই না। দুর্নীতি কোনভাবে চলতে দেয়া যাবে না। সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, একটি রিপোর্ট করার পূর্বে একে খতিয়ে দেখুন, রাজউক তার নৈমিত্তিক কাজের বাইরে গিয়েও, গতানুগতিকতার বাইরে গিয়েও পূর্বের চেয়ে গতিশীলতা নিয়ে কাজ করছে কি না। কোন বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে রাজউকের চেয়ারম্যান, সদস্য এমনকি প্রয়োজনে আমাকে জিজ্ঞেস করুন। আমরা কৈফিয়ত দেব। আমাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে প্রতিবেদন করলে ভাল হয়। আমি চাই না আমার বিরুদ্ধে, মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে, রাজউকের বিরুদ্ধে কেউ রিপোর্ট করবেন না। তবে এটা চাই রিপোর্টের সারবস্তু, তথ্য ও ভিত্তি থাকে। অনিয়ম হলে অবশ্যই রিপোর্ট করবেন, ব্যবস্থা নেব। সেবা সপ্তাহে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেবা সপ্তাহের পরিপূর্ণতা তখনই হবে, যখন আমরা সকলে মিলে পারস্পরিক সহানুভূতি, শ্রদ্ধা, সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্ব এবং স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করতে পারব। রাষ্ট্র আমাদের সকলের। আমরা সকলে মিলে কাজ করতে চাই। সভাপতির বক্তব্যে রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ বলেন, রাজউকের জনবল কম থাকা সত্ত্বেও সেবা প্রদান কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক বেগবান হয়েছে। স্বল্প সময়ে কোন রকমের হয়রানি ছাড়াই সেবাগ্রহীতারা সেবা পেতে পারেন সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেবাপ্রত্যাশীদের নিকট থেকে অনেক মতামত ও পরামর্শ এসেছে। ভবিষ্যতে তাদের মতামত ও পরামর্শ মোতাবেক সহজে ও দ্রুত সময়ে সেবা প্রদানের চেষ্টা করব। উল্লেখ্য, সেবাগ্রহীতাদের সহজে ও দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজউকে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৩-২৭ জুন ২০১৯ পাঁচ দিনব্যাপী পালন করা হয়েছে রাজউক সেবা সপ্তাহ ২০১৯। সেবা সপ্তাহ চলাকালে রাজউকের বিভিন্ন শাখা থেকে সেবাগ্রহীতার ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, ভবন নির্মাণ অনুমোদন, রাজউকের প্লট/ফ্ল্যাটের নামজারি, আমমোক্তার অনুমোদন, নক্সা অনুমোদন প্রভৃতি সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। সেবা গ্রহীতারা সেবা উন্নয়নে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। সেবা সপ্তাহে রাজউক-এর নগর পরিকল্পনা শাখা হতে ২৩০টি ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ শাখা হতে ১৮৮টি ইমারত নির্মাণের নক্সা অনুমোদন এবং এস্টেট ও ভূমি শাখা হতে ৬৯টি নামজারি, ৩২টি প্লটের দখল হস্তান্তর, ৮১টি প্লটের আম-মোক্তার/হস্তান্তর/লিজ ডীড/ হেবা সম্পন্ন করা হয়।
×