ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একসঙ্গে আড়াই হাজার মানুষের ইফতার, সমমর্যাদায় আপ্যায়ন

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ১১ মে ২০১৯

একসঙ্গে আড়াই হাজার  মানুষের ইফতার,  সমমর্যাদায় আপ্যায়ন

মোরসালিন মিজান ॥ প্রায় আড়াই হাজার মানুষ ইফতার করছেন। প্রতিদিন। কেউ বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক। সম্ভ্রান্ত পরিবারের। কেউ ছিন্নমূল, ভবঘুরে। কিন্তু কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই একসঙ্গে পাশাপাশি বসে খাবার খাচ্ছেন। অভূতপূর্ব এই দৃশ্য এখন দেখা যাচ্ছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পূর্ব সাহানে। এখানে রোজার প্রথম দিন থেকে দেশের সবচেয়ে বড় ইফতার আয়োজন করছে সরকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রতিবারের মতো এবারও রমজানের প্রথম দিন থেকেই ছবিটা দেখা যাচ্ছে। রোজাদারদের প্রত্যেককে অতিথি জ্ঞান করে তাদের জন্য বিনা খরচে ইফতারের ব্যবস্থা করছে ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগ। মসজিদের পূর্ব সাহানে প্রায় ২০ হাজার স্কয়ার ফুট জায়গাজুড়ে রোজাদারদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন আছরের নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে থালা-বাটি সাজানো-গুছানোর কাজ। রোজাদাররা নিজ হাতে বিভিন্ন কাজ করছেন। একই সময় চলছে বয়ান। এভাবে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে। বাড়ছে লোকজনের সংখ্যাও। বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী, আশপাশের দোকানদার, গুলিস্তান এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ মানুষ, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, এতিম-মিসকিন সবাই এসে পাশাপাশি বসছেন। আগেও দৃশ্যটি দেখা হয়েছে। শুক্রবার আবার দেখে মনে হলো, সত্যি সুন্দর। ভেদাভেদ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা এখান থেকে নেয়া যেতে পারে বৈকি। বিরাট কর্মযজ্ঞ তদারকি করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইফতারে প্রতিদিন খেজুর থাকছে ৭০ কেজি। ৬০ কেজি মুড়ি। ১০০ কেজি ছোলা। ৭০ কেজি পিঁয়াজু। সমপরিমাণ বেগুনি। ৫০ কেজি শসা রাখা হচ্ছে। থাকছে ১০০ কেজি জিলাপি। প্রতিদিন চিনি ব্যবহার হচ্ছে ৪৫ কেজি। ফলের মধ্যে থাকছে কলা। দেড় হাজার কলা অর্ধেক করে কেটে পরিবেশন করা হচ্ছে। তার আগে গলা ভেজানোর জন্য রাখা হচ্ছে ২০ বোতল শরবত। ইফতারের আগে আগে লক্ষ্য করা গেল, মেঝেতে অনেক বড় ডিশ। সমান দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে। সব খাবারে পূর্ণ। কমিটির এক সদস্য জানালেন, এখানে প্রায় সাড়ে ৩শ’ বড় ডিশ। প্রতিটিতে ৬ থেকে ৭ জনের ইফতার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সময় ঘনিয়ে এলে দেখা গেল, ডিশের চারপাশে চমৎকার গোল হয়ে বসেছেন রোজাদাররা। এদিকে, পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য ইফতারের পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তে নামাজকক্ষে প্রতিদিন শতাধিক মহিলা ইফতার করছেন বলে জানা যায়। এখানেও ভেদাভেদহীন। এখানেও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক। সব মিলিয়ে অন্যরকম একটি আয়োজন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশাল এই আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিদিন কাজ করছেন মসজিদের ২০ খাদেম ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ২০ কর্মকর্তা, কর্মচারী। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ সাধারণ মুসল্লি। এভাবে কাজটিও ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন সবাই। শুক্রবার ইফতারের আগে কথা হয় হারুন নামের এক রোজাদারের সঙ্গে। স্টেডিয়াম মার্কেটে তার একটি দোকান আছে। বললেন, সাধারণত দোকানেই ইফতার করি। কিন্তু মসজিদে এত মানুষের সঙ্গে ইফতার করার আলাদা একটা শান্তি আছে। গরিব-ধনীর ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে পাশাপাশি বসা। একপাত্রে খাওয়া। এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? এই শিক্ষা ধরে রাখা গেলে সামাজিক জীবন আরও সহজ হবে বলে মত দেন তিনি। বাইতুল মোকাররম এলাকার হকাররাও এখানে ইফতার করতে আসেন। একজনের নাম শাহী। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের তো আসলে ইফতার করার কোন জায়গা নেই। হোটেলে শেষ মুহূর্তে গিয়ে জায়গা পাই না। তাই মালের বাক্সটা কোথাও রেখে এখানে চলে আসি। প্রায় প্রতিদিন এখানে ইফতার করেন জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকের সঙ্গে ইফতার করতে এসেই পরিচয় হয়েছে। কারও কারও সঙ্গে ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে। তাই এখানে ইফতার করতে ভাল লাগে বলে জানান তিনি।
×