ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শামীম ফের রিমান্ডে

নুসরাত হত্যার আরেক পরিকল্পনাকারী শাকিল গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

নুসরাত হত্যার আরেক পরিকল্পনাকারী শাকিল গ্রেফতার

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় মহিউদ্দিন শাকিল নামে আরেক পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে সোনাগাজী থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে পিবিআইয়ের একটি তদন্ত দল। ইতোমধ্যে ওসির ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে তদন্ত দল। এদিকে এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমকে আরও তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া এ মামলার আলোচিত আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সভাপতি রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার ঘটনায় মহিউদ্দিন শাকিল নামে আরেক পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআইয়ের একটি দল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফেনী শহরের উকিল পাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের এডিশনাল এসপি মোঃ মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শাকিল সোনাগাজীর চরচান্দিয়া গ্রামের রহুল আমীনের ছেলে। সে নুসরাতের সহপাঠী। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার সময় শাকিল মাদ্রাসার মূল ফটকে পাহারায় ছিল। আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিনের আদালতে দেয়া স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দীতে শাকিলের নাম উঠে আসে। এদিকে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড নিয়ে তৎকালীন সোনাগাজী মডেল থানার প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তদন্তে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত দল। বুধবার বিকেলে পিবিআই সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানার নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল ফেনী সোনাগাজীতে পৌঁছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পিবিআই তদন্ত দল সোনাগাজী থানার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। সোনাগাজীর সেই মাদ্রাসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমাদের ফেনীর নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ব্যারিস্টার ছায়েদুল হক সুমনের তৎকালীন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। আদালত সে মামলা পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার আদেশ দেয়। এই মামলা তদন্তের জন্য ঢাকা পিবিআইয়ের সদর দফতরের একটি টিম সোনাগাজী পৌঁছে। পরে তদন্ত দলটি সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, সোনাগাজী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) করিমুল হকসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে মতামত গ্রহণ করেন। তারা সোনাগাজী থানাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ৮ সদস্যের তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানা বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১১ টায় ফেনী পিবিআই অফিসে সাংবাদিকদের জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ নং ধারায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ধারায় বলা আছে ভিকটিমের অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণ করে তা প্রচার সংগত নয়। আমরা এ বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও মামলার অভিযোগে যা যা বলা আছে আমরা তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করছি। গত ১৭ এপ্রিল মামলাটি হাতে পেয়েছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা। তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে রিমা সুলতানা জানান, বুধবার আমরা থানার কার্যক্রম শেষ করে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করব। সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে, প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক অনেক কথা এসেছে, সেগুলো যাছাই-বাছাই করা হবে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হবে। এ তদন্ত দলে আরও রয়েছেন পিবিআই হেড কোয়ার্টারের পরিদর্শক আনসারুজ্জামান, উপ-পরিদর্শক মুনীরসহ আটজন জন। গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে সেখানে ওসি তার মোবাইলে নুসরাতকে ধমক দিয়ে ভিডিও ধারণ করেন। তিনি অশালীন ভাষায় নুসরাতের সঙ্গে কথা বলে তা মোবাইলে রেকর্ড করে। নুসরাতের গায়ে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করার পর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ব্যারিস্টার সুমন ঢাকা সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা তদন্তের স্বার্থে ওসি মোয়াজ্জেমের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করে পিবিআই। আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল কারাগারে ॥ নুসরাত হত্যা মামলায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। এ সময় আদালতের বিচারক মোঃ জাকির হোসাইন আসামি রুহুল আমিনকে জেল হাজাতে পাঠানোর আদেশ দেন। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী শাহাদাত আবারও রিমান্ডে ॥ বৃহস্পতিবার একই আদালতে নুসরাত খুনের মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী এই মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হাসেন শামীমকে ফেনী কারাগার থেকে আদালতে এনে পিবিআই ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। বিচারক শামীমের আরও ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক (ওসি) মোঃ শাহ আলম জানান, নুসরাত হত্যা মামলার আরও তথ্য উদঘাটনে শাহাদাত হোসেন শামীমের পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। নুসরাতের বাড়িতে ॥ ফেনীর সোনাগাজী পৌর শহরের উত্তর চান্দিয়া নুসরাতের গ্রামের বাড়ির চারপাশে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নুসরাতের মৃত্যুর দিন থেকে বাড়ির সামনের উঠানে প্রচুর মানুষের ভিড় জমে থাকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, আবার সাধারণ মানুষ এখানে ভিড় জমান। নুসরাতের বৃদ্ধ দাদা। তার মা মেয়ের শোকে কাতর। নুসরাতের বাবা মাওলানা একেএম মুসা মানিক একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক। তিনি বলেন, আমি আমার মেয়ের খুনীদের এমন বিচার চাই, তা যেন সারা বিশ্বের বিচারের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। খুনীদের এ পরিণতি দেখে যেন পৃথিবীর সব অপরাধী সাবধান হয়ে যায়। আর কোন বাবার বুক যেন খালি না হয়। এদিকে ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার প্রতিবাদ শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের উদ্যোগে মানববন্ধন অব্যাহত রয়েছে।
×