ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আলপনায় বর্ষবরণ উদযাপন

প্রকাশিত: ১২:৫২, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

 আলপনায়  বর্ষবরণ  উদযাপন

গৌতম পান্ডে ॥ পিচঢালা পথ রং-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে বরণ করে নেয়া হলো বাংলা নববর্ষ। শিল্পীর তুলিতে ফুটে উঠেছে ফুল, ফল, পাখি, গাছ, মাছ, বাঘ, পেঁচাসহ গ্রাম বাংলার কৃষাণ-কৃষাণীর ছবি। লাল, নীল, সাদা, হলুদ, সবুজসহ বাহারি রঙে পুরো মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ সেজেছে রঙিন সাজে। প্রায় দুই কিলোমিটাজুড়ে বাহারি আলপনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আবহমান বাংলার নানা ঐতিহ্য। সংস্কৃতি অঙ্গনের জনপ্রিয় শিল্পী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলের তুলির আঁচড়ে যেন ক্রমেই জীবন্ত হয়ে ওঠে আলপনা। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে শনিবার রাতে চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে আলপনা আঁকা হয়। এতে অংশ নেয় প্রতিটি দলে ২৫জন করে শিল্পীর ১৬টি দল। অনুষ্ঠানের তত্তাবধানে ছিলেন মনিরুজ্জামান লিটন। বার্জারের পৃষ্ঠপোষকতায়, এশিয়াটিক ইএক্সপির আয়োজনে এই উৎসব উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নুর, এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটিন গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপার্সন অভিনেত্রী সারা জাকের, বার্জারের এমডি রূপালী চৌধুরী প্রমুখ। সন্ধার ঝড়-বৃষ্টিও মানুষকে ঘরে রাখতে পারেনি। অনুষ্ঠান একটু দেরিতে শুরু হলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারও মানুষ দেখে এই দৃষ্টিনন্দন আলপনা। উদ্বোধনের সময় স্পীকার বলেন, আলপনা বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। আলপনাতে যেসব ছবি আঁকা হয়, তা-ও গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির অংশ। আলপনা বাঙালীর বহু বছরের পুরাতন লোকশিল্পের ঐতিহ্য। পহেলা বৈশাখে ঘরবাড়ি বৈশাখী রঙে সাজাতে অনেক আগে থেকেই এর প্রচলন রয়েছে। তিনি বলেন, এ নতুন বছর রঙে রঙিন হোক বাঙালীর। উৎসবে যোগ দিয়ে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান স্পীকার। অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, আমরা কায়মনে বাঙালী হতে পারলে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। সে জন্য সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এটাই শুভদিন। কৃষিনির্ভর এই দেশের গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ তাদের চাষাবাদ, ঋতু পরিক্রমার অনুসরণ, নানা তিথি-পার্বণ, আচার অনুষ্ঠান পালনে বাংলা বর্ষপঞ্জিই অনুসরণ করে থাকে। তবে বাঙালী আন্তর্জাতিকতার সঙ্গে আপন সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা নববর্ষকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। বাংলা নববর্ষ তথা পয়লা বৈশাখ এখন বাঙালীর জীবনে সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ অভিন্ন হৃদয়াবেগে মিলিত হবে এই বিপুল আনন্দযজ্ঞে। সব মতপার্থক্য, ভেদাভেদ ঘুচিয়ে সবাইকে এক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করে তোলার অন্তর্নিহিত শক্তিই নিছক আনন্দ উৎসবের স্তর থেকে এক মহৎ মানবিক আয়োজনে উত্তরণ ঘটিয়েছে বৈশাখী উৎসবের। নববর্ষকে বরণ করতে ও উৎসবকে রঙিন করতেই এ আয়োজন বলে জানান আয়োজকরা। সারারাত আলপনা আঁকায় ব্যস্ত ছিলেন শিল্পীরা। এটি মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কের খেজুরবাগান মোড় থেকে আসাদ গেট মোড় পর্যন্ত অ৭াকা হয়। আয়োজনটি সকলের জন্য উন্মুক্ত যেখানে সবাই সম্মিলিতভাবে বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহর উদযাপন করে। বর্ণিল আলপনার পাশাপাশি বর্ষবরণের এই আয়োজনে ছিল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×