ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব ফুটবলে নতুন বিস্ময় মোয়েস কিন

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১০ এপ্রিল ২০১৯

বিশ্ব ফুটবলে নতুন বিস্ময় মোয়েস কিন

গত নবেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ইতালির জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল কিনের। ইতালির ১-০ গোলে জয়ের সেই ম্যাচের শেষ ২৮ মিনিট খেলেছিলেন জুভেন্টাসের তরুণ এই স্ট্রাইকার। এরপর ২০২০ ইউরো বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে কিনকে শুরুর একাদশে রাখেন ইতালি কোচ রবার্তো মানচিনি। কোচের আস্থার প্রতিদান বেশ ভালোমতোই দিয়েছেন কিন। দারুণ এক গোল করে দলের জয়ে অবদান রাখেন তিনি। সেইসঙ্গে ইতিহাসেও জায়গা করে নেন কিন। ১৯ বছর ২৩ দিন বয়সে গোল করে ইতালির ইতিহাসের দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম গোলদাতা হয়ে গেছেন জুভেন্টাস স্ট্রাইকার। তার চেয়ে কম বয়সে ইতালির জার্সিতে গোল করেছিলেন শুধু ব্রুনো নিকোল। ১৮ বছর ২৫৮ দিনে ইতালির জার্সিতে গোল করেছিলেন তিনি। ব্রুনো কীর্তিটা গড়েছিলেন সেই ১৯৫৮ সালে। অর্থাৎ গত ৬০ বছরেরও বেশি সময়ে ইতালির সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হলেন কিন। জুভেন্টাস স্ট্রাইকার এমন কীর্তি গড়লেন তার নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই। সেই কিনের চমক এখানে নিয়মিতই দেখছে ফুটবল বিশ্ব। ইতালির হয়ে টানা দুই ম্যাচে গোল করা মোয়েস কিন জুভেন্টাসের জার্সিতে শেষ তিন ম্যাচের সবকটিতেই প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন। টিনএজ সেনসেশন মোয়েস কিনের গোলেই তুরিনে ঘরের মাঠে এসি মিলানকে ২-১ গোলে পরাজিত করে সিরি’এ লীগের শিরোপার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় জুভেন্টাস। কয়েকদিন আগেই ক্যালিয়ারিতে বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন কিন। শনিবার বদলি বেঞ্চ থেকে উঠে এসে ৮৪ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন তিনি। থাইয়ের ইনজুরির কারণে বিশ্রামে ছিলেন জুভেন্টাসের সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। আর সিআর সেভেনের অনুপস্থিতিই সুযোগ করে দেয় কিনকে। তবে রোনাল্ডোর অনুপস্থিতি গত কয়েক ম্যাচ ধরে বুঝতেই দিচ্ছেন না ১৯ বছর বয়সী কিন। শনিবার তুরিনে বিরতির পাঁচ মিনিট আগে সফরকারী এসি মিলানকে এগিয়ে দেন পোলিশ ফরোয়ার্ড ক্রিজিসটো পিয়াটেক। এটি ছিল মৌসুমে পিয়াটেকের ২১তম গোল। ৬০ মিনিটে স্পট কিক থেকে জুভেন্টাসকে সমতায় ফেরান পাওলো দিবালা। ৬ মিনিট পর কিনকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যান দিবালা। ৮৪ মিনিটে এই কিনের হাত ধরেই জয়ের দেখা পায় স্বাগতিকরা। এই ম্যাচের শেষে কিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ জুভেন্টাসের কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকেও কিন বদলি বেঞ্চ থেকে উঠে এসে গোল পেয়েছে। সত্যিকার অর্থেই সে একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। সে এখনও বয়সে তরুণ। যে কারণে তার ওপর কোন ধরনের চাপ দিতে চাই না। সে ম্যাচটাকে উপভোগ করুক।’ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে আজ আয়াক্সের মুখোমুখি হবে জুভেন্টাস। এই ম্যাচে কিনকে তিনি খেলবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে এ্যলেগ্রি বলেন, ‘দখা যাক কি হয়। এই ম্যাচের মতোই বদলি খেলোয়াড় হিসেবেও কিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন।’ দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণে ফুটবল দুনিয়ায় এখন ব্যাপক আলোচিত মোয়েস কিন। কেউ কেউ আবার মেসি-রোনাল্ডোর সঙ্গেও তুলনা করছে তাকে। তবে কিন অবশ্য তাদের সঙ্গে তুলনা করতে নারাজ। যদিওবা একদিন তাদের মতো হতে চান এই ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড। এ বিষয়ে কিন বলেন, ‘আমি মেসি নই, রোনাল্ডোও নই। কিন্তু একদিন অবশ্যই তাদের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখি।’ কিন জানান, তিনি জুভেন্টাস সতীর্থ ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে দেখেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। সিআর সেভেনের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখছেন এই তরুণ ফরোয়ার্ড। ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর দেশের ফুটবল ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হয়েছেন কিন। প্রথমবার শুরুর একাদশে জায়গা পেয়ে দলের দ্বিতীয় গোলটিও করেন তিনি। এভাবে এগিয়ে যেতে চান ক্যারিয়ারের বাকি সময়টাতেও। কিনের বিশ্বাস, জুভেন্টাসে রোনাল্ডোর সঙ্গে খেলার সুযোগটাই তাকে বিকশিত করছে। রোনাল্ডোর সঙ্গে থেকে নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে চান তিনি। কিন বলেন, ‘আমি তার কাছ থেকে শিখি, প্রত্যেক দিনই। অনুশীলনের মাধ্যমে আমার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি আমি। অনেক রেকর্ড ভাঙার আছে, আমি সেগুলো ভাঙতে প্রস্তুত।’ ভবিষ্যতে ফুটবল দুনিয়ায় আলো ছড়াবেন কিন। এটা বিশ্বাস করেন এ্যালেগ্রি নিজেও। এপ্রসঙ্গে জুভেন্টাস কোচ বলেন, ‘ইতালির হয়ে দুই গোল করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। সার্বিকভাবে দেখতে গেলে জাতীয় দলে একজন খেলোয়াড়কে অনেক বেশি মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়। একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের সব ধরনের গুণাবলী তার মধ্যে আছে। ফিনল্যান্ড ও লিচেনস্টেইনের বিপক্ষে ইতালির হয়ে কিনের গোল দুটি যোগ্যতার প্রমাণ দেয়।’ কিনের জন্ম ইতালিতেই। তবে বাবা আইভরিকোস্টের। যে কারণে ফুটবল মাঠে বর্ণবৈষ্যমেরও শিকার হন তিনি। সম্প্রতি ক্যালিয়ারির বিপক্ষে ম্যাচের শেষদিকে আক্রমণের শিকার হন মোয়েস কিন। নির্ধারিত সময়ের খেলা তখনও পাঁচ মিনিট বাকি। ঠিক ঐ সময়ই গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন কিন। গোলের পর প্রতিপক্ষের জালের পাশে গিয়ে সমর্থকদের সামনে উদযাপন শুরু করেন তিনি। তাতেই যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে স্বাগতিক সমর্থকরা। তার দিকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারা হয় কলা, প্লাস্টিকের বোতল, পানি ইত্যাদি। যদিও দ্রুত এগিয়ে যান ক্যালিয়ারি খেলোয়াড়রা। গোলরক্ষক এ্যালিসিও ক্র্যাগনো সরিয়ে দেন কিনকে এবং নিজের সমর্থকদের শান্ত হতে বলেন। কিন্তু তাতেও বর্ণবাদী আচরণ থামেনি। তখন পাশ থেকে ক্যালিয়ারির সমর্থকরা চেঁচামেচি করতে থাকে। যার মধ্যে ‘বিইউইই’ শব্দও শোনা যায়। ইতালিয়ান মিডিয়া জানাচ্ছে, এই শব্দটা সেখানকার ফুটবলে ফুটবলারদের অপমান করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ভিড়ের মধ্য থেকে বানর বলার শব্দও শোনা যায় সেই সময়টাতে। ম্যাচ শেষে ছলছল জল ছিল কিনের চোখে। ফুটবল খেলতে গিয়ে সম্ভবত প্রথমবার এত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো তরুণ প্রতিভাবান এই ফুটবলারকে। যদিও তার পাশে ছিলেন দুই দলের সবাই। খেলোয়াড়, রেফারি- সবাই তাকে সান্ত¡না দিয়েছেন।
×