ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহসড়ক ॥ বাড়ছে দুর্ঘটনা

৬৬ কিমিতে ৫০ বাঁক

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৯ মার্চ ২০১৯

৬৬ কিমিতে ৫০ বাঁক

বিকাশ চৌধুরী,পটিয়া ॥ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়কের ৬৬ কিলোমিটারে রয়েছে ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। এই বাঁকগুলো যেন মরণফাঁদ। শাহ আমানত তৃতীয় সেতু থেকে শুরু করে পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি পর্যন্ত এসব বাঁক রয়েছে। বাঁক ছাড়াও রাস্তার দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা, হাট-বাজার বসার ফলে দুর্ঘটনা ও যানজট প্রতিদিনই লেগে রয়েছে। ফলে দূরপাল্লার গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে। সর্বশেষ বুধবার গভীররাতে মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও একটি যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঝরেছে ৮টি প্রাণ। দূরপাল্লার যাত্রীরা জানান, বিশেষ করে শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর পরে মইজ্যারটেক, ক্রসিং, পটিয়ার শান্তিরহাট, কলেজ বাজার, বাদামতল, মনসা, চৌমুহনী, ভেল্লাপাড়া, মুন্সেফ বাজার, থানার মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, বাসস্ট্যান্ড, পোস্ট অফিস মোড়, চন্দনাইশের রৌশন হাট, বাগিচা হাট, কেরানী হাট, দোহাজারী বাজার, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়ার বটতলী এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন যানজটে আটকে থাকতে হয়। ঝুঁকিপূূূূূূর্ণ বাঁকের কারণে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজারের পথে চকরিয়া হতে দোহাজারী সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৫০ মিনিট। বাঁক কম থাকার কারণে তারা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে পারছেন। অথচ দোহাজারী সেতু থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত বাকি ৫০ কিলোমিটার সড়কে সময় লাগছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, স্পিডব্রেকার, নিষিদ্ধ গাড়ি চলাচল ও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে মূলত মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশ ও গাড়ি চালকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়কের পটিয়া মইজ্জারটেক, পটিয়া-আনোয়ারা-ক্রসিং, মনসার টেক, বাদামতল, গৈড়লার টেক, আমজুরহাট, পটিয়া পোস্ট অফিস, আদালত গেইট মোড়, থানার মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, বাসস্টেশন, কমলমুন্সির হাটসহ ২০টি পয়েন্টে ও চন্দনাইশ থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত প্রায় ৩০টির অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে লোহাগাড়া উপজেলা সদর পর্যন্ত ৬৬ কলোমিটার দূরত্বে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ছাড়াও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা গাড়ির স্ট্যান্ড, গ্যারেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার পাশ ঘেঁষে নিয়মিত বসে হাট-বাজার। তাছাড়া যত্রতত্র অপরিকল্পিত স্পিডব্রেকার গাড়ি চলাচলে দিবারাত্রি বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, অবৈধ হাট-বাজার ছাড়াও রাস্তার দু’পাশে সিএনজি, মাহেন্দ্র, মাইক্রোসহ অন্যান্য যানবাহন রাখাও যানজট সৃষ্টির মূূূূূূূূূূূূূূূূূূূল কারণ। গাড়ি চালকরা জানান, মহাসড়কের দু’পাশে এতবেশি বিভিন্ন দোকানপাট, গাড়ির স্ট্যান্ড ও গ্যারেজ গড়ে উঠেছে এবং সড়কটি এত বেশি আঁকাবাঁকা যে প্রতিনিয়ত অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। ফলে চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দেড় ঘণ্টারস্থলে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায় বলে জানান যাত্রীরা। চালকরা গাড়ি দ্রুত চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এদিকে, মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হলেও এই নির্দেশ অমান্য করে তিন চাকার গাড়ি চলাচল করছে। তিন চাকার গাড়ি বন্ধ করতে পটিয়া-ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি গাড়ি আটক করে খালেও ফেলে দিচ্ছে। তারপরও বন্ধ হয়নি তিন চাকার এসব গাড়ি। পটিয়া-ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মিজানুর রহমান, মহাসড়কের ৬৬ কিলোমিটারে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, রাস্তার দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা, হাট-বাজার, অবৈধ গাড়ি পাকিং এর কারণে মূলত দুর্ঘটনা ও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বাঁক সোজা ও রাস্তার দুই পাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা গেলে মহাসড়কে যানজট দূর করা সম্ভব হবে।
×