ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি করে দেবে সরকার

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি করে দেবে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের উপজেলা পর্যায়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আট হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ২ হাজার ২৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদনও দেয়া হয়েছিল। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতে সে প্রকল্প প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ফ্ল্যাটের পরিবর্তে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বসতভিটায় বাড়ি করে দেবে সরকার। মুক্তিযোদ্ধা যাদের ভিটা নেই তাদের পার্শ¦বর্তী খাস জমিতে ঘর করে দেয়া হবে। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত দেন। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান। এদিন, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নতুন ১০টি ও সংশোধিত ৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই ১৩ প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৪৫৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল (জিওবি) থেকে দেয়া হবে ৯ হাজার ৪৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে ১৫৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৮২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের পরিকল্পনামন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়টি নিয়ে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের দাবিুর প্রেক্ষিতেই এ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি ছিল ফ্ল্যাট না দিয়ে নিজস্ব ভিটায় একই টাকা খরচ করে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার। সেজন্য এখন নতুন করে ঘর নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হবে। জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২ হাজার ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৫৩২টি ভবনে মোট আট হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের কথা ছিল। প্রতিটি ভবন পাঁচতলা হলেও এগুলোতে ওঠা নামার লিফটের কোন ব্যবস্থা ছিল না। আরও জানা গেছে, নতুন প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে সারাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে ১৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা হয়েছে। আর নতুন প্রকল্পে একতলা একটি ঘর নির্মাণের সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। এদিকে একনেক সভা নিয়ে মন্ত্রী জানান, এখন থেকে যেসব সেতু বা অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে সেগুলো স্থানীয় কোন মুক্তিযোদ্ধা বা প-িত ব্যক্তির নামে তাদের নামকরণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তা না হলে নদীর নামে নামকরণ করতে হবে। এছাড়াও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রকল্প ওভারলেপিং না করতে উচ্চক্ষমতার একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন অনুমোদন পাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে বিদ্যুত বিভাগের ‘বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্প’। এতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৪২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা সরকার অর্থায়ন করবে, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৫৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং বিদেশী ঋণ ১ হাজার ৭৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া বুধবার তিনটি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে ‘পায়রা সেতু’ দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩৬৮ কোটি ২৯ লাখ সরকারী অর্থায়ন এবং বিদেশী ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। মূল প্রকল্প ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে চলমান আছে। এই প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় সংশোধনীতে এর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২২ সালের জুনে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ‘ঢাকা শহরে ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৭৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ‘গোপালগঞ্জে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপন’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় হবে ৭৯৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ২০১৩ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই ধাপে এর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাকি নয়টি নতুন প্রকল্পের মধ্যে ‘মীরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৮৪৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটি পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়/বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের (এন-১০৪) ২-লেন অংশ (মহিপাল থেকে চৌমুহনী পূর্ব বাজার পর্যন্ত) চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে খরচ হবে ৭৪৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ জনপথ অধিদফতর। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়কের সিন্দুকছড়ি থেকে মহালছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘মংলা বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম সংগ্রহ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে এই প্রকল্প ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে। এটি বাস্তবায়ন করবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘কুড়িগ্রামের চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর ভাঙ্গনরোধ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘সোনাগাজী ও মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়কে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারী অর্থায়নে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৬৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে এই প্রকল্প। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের অধীন ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে।
×