ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী শিল্পীদের চিত্রসম্ভার ‘কন্যা আর আমরা’

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 নারী শিল্পীদের চিত্রসম্ভার ‘কন্যা আর  আমরা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে অনন্য ভঙ্গিমায় নৃত্যরত শিল্পী। আরও দুটি ক্যানভাসে রং আর রেখায় উপস্থাপিত হয়েছে নারী নৃত্যশিল্পীর নাচের বিচিত্র ভঙ্গিমা। মনছায়া সিরিজের একটি চিত্রপটে দৃশ্যমান রক্তিম বসনা এক নারী। খোঁপায় ঝুলছে জবা ফুল। আর শাড়িতে অঙ্গ ঢাকা একটি হাতে শোভা পাচ্ছে একগুচ্ছ রেশমি চুড়ি। প্রসারী দৃষ্টি মেলা ওই নারীর ঠোঁটে শাপলা নিয়ে উঁকি দিচ্ছে সাদা। এই সিরিজের আরেক ছবিতে নারীর শরীরজুড়ে ছড়িয়ে আছে লাল-সাদা শাপলা ফুলের দল। প্রদর্শনালয়ে সাজানো চিত্রসম্ভারের মাঝে চোখে ভেসে বেড়ানো হাঁসের জলকেলি। আরেকটি চিত্রকর্মে পূর্ণিমার আলোয় ঝলমল করে উঠেছে গহীন বনের ফুল। এমন মনোলোভা সব চিত্রকর্ম এখন প্রদর্শিত হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার দুই নং গ্যালারিতে। চব্বিশ নারী চিত্রকরের চিত্রকর্মে সজ্জিত এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘কন্যা আর আমরা’। শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ফেসবুকের মেসেঞ্জারভিত্তিক গ্রুপ কন্যা। শুক্রবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী মনিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আরেক প্রখ্যাত চিত্রকর মনসুর-উল-করিম। আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ, শিল্পী আহমেদ নেওয়াজ, উত্তম গুহ ও আবদুল মান্নান। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের দলনেতা শাকিলা চয়ন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মনিরুল ইসলাম বলেন, এক বছরের পরিকল্পনায় এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করতে পেরেছেন শিল্পীরা। চারুশিক্ষা শেষ করার পর অধিকাংশ সময়ই পরিবার ও সংসরকারের চাপে নারী শিল্পীদের শিল্পচর্চা অব্যাহত থাকে না। সেই অর্থে শিল্পায়োজনটি বিশেষ গুরুত্ববহ। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া এই ২৪ নারী শিল্পীর শিল্প সৃজনে আছে নিজস্ব গল্প। যতটুকু মনোযোগ দরকার প্রত্যেকেই তার পরিপূর্ণ প্রয়োগ ঘটিয়েছে। চিত্রকর্মের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে শিল্পীর বলেন, ছবি আঁকা মানেই হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তকে ধরে রাখা। আজকের ছবিটি আগামীকাল আঁকলে বদলে যায় বৈশিষ্ট্য। একইভাবেই একটি দিনের সকাল আর বিকেলের মাঝে থাকে রংয়ের পার্থক্য। আবার গত ১৫ বছরের ছবি আঁকাআঁকির কনসেপ্টেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন আর আনফিনিশড ওয়ার্ক বলে কিছু নেই। একটি ছবি যে কখন শেষ মাত্রা পাবে তা নির্ধারণ করা খুব কঠিন। আবার ছবি আঁকার জন্য নির্দিষ্ট সময় বলেও কিছু নেই। তবে প্রকৃত শিল্পীকে একজন শ্রমিকের মতোই দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা চিত্রকর্ম সৃজনের কাজটি করতে হবে। মনসুর উল করিম বলেন, ছবির সামনে নয়, আমির থাকি ছবির পেছনে। ছবি আঁকার পরিবর্তে আমি রং নিয়ে খেলা করি। দর্শক দেখে আমার রংয়ের ব্যবহার। তাই মানুষ আমাকে চেনে না, আমার ছবিকে চেনে। মূলত চিত্রকর্মকে রেখা দিয়ে অনুভব করতে হয়, উপস্থাপন করতে হয় করণকৌশলে। এই প্রদর্শনীর নারী শিল্পীদের অনেকেই দীর্ঘদিন চর্চার বাইরে থাকলেও এই শিল্পায়োজনটির আবার তাদের রেখার গতি সঞ্চার করবে। কন্যার সভাপতি শাকিলা চয়ন বলেন, আঠারো বছর বিরতি দিয়ে ছবি আকতে শুরু করেছি। আমরা যারা একত্রে আঁকতে শুরু করেছিলাম, তাদের এই জগতে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য এই গ্রুপটি তৈরি হয়েছে। গ্রুপের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই প্রদর্শনী। পারিবারিক, সামাজিক বাধা ও আলস্য উপেক্ষা করে সবাই সাড়া দিয়েছেন শিল্পিত এ আয়োজনে। যারা আঁকা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন, ঢাকার বাইরে থেকে এ রকম অনেকে এসেছে এবং পুনরায় আঁকতে শুরু করেছে। ২৪ শিল্পীর ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয়েছে নিসর্গ, নারী, ফুল, পাখির কলতান, গ্রামীণ জীবনসহ পৌরাণিক আখ্যানের চরিত্রসহ বিবিধ বিষয়। নারী ও নিসর্গের সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে প্রেমানুভূতি। বিশেষভাবে নজর কেড়েছে শকুন্তলা, মনছায়া, নীরবতা, চাঁদের স্পর্শ ও বন্ধন শীর্ষক সিরিজের ছবিগুলো। এ্যাক্রেলিক, জলরং, তেলরং ও ছাপচিত্রের আশ্রয়ে আঁকা হয়েছে চিত্রকর্মসমূহ। শিল্পায়োজনটির অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন- আফরোজা খন্দকার, আঁখিনুর রহমান ঝর্ণা, আমিনা আক্তার, আতিকুন নাহার জ্যোতি, ফাতেমা বেগম রিনা, ফারহানা ইয়াসমিন, খুরশিদা আকতার, মাহফুজা বিউটি, মাহিন মাহনুমা, মোরসেলিনা আহসান, নাজমা মুক্তা, রহমান সুখী, সেলিনা মুন্না, নুসরাত জাহান, শর্মিলা সোমা, শাহেদা কুলসুম, শামীমা আক্তার, শাহনাজ শাহীন, শাকিলা চয়ন, সুলতানা পুতুল, সুরভী সুবর্ণা, তানিয়া বারী কান্তা, উম্মে হাবিবা সুমি ও জাকিয়া ফেরদৌস। তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২৭ জানুয়ারি। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×