ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে শিরিনের রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে শিরিনের রেকর্ড

রুমেল খান ॥ বৃহস্পতিবার থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার ৪২তম আসর। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক ফেডারেশন ঘোষণা দিয়েছিল এবারের প্রতিযোগিতা হবে ইলেক্ট্রনিক্স টাইমারে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে হ্যান্ড টাইমারে। জানা গেছে কারিগরি সমস্যার কারণে এমনটা হয়েছে। বিষয়টি জেনে ক্ষুব্ধ হন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে জানিয়ে দেন, পরেরবার এমনটি হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। উদ্বোধনী দিনের সেরা আকর্ষণ ছিল ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। এতে পুরনো রানী শিরিন আক্তারকে পাওয়া গেলেও দেখা গেছে নতুন রাজা মোহাম্মদ ইসমাইলকে। দু’জনেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্প্রিন্টার। সাতবারের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ এবার নৌবাহিনীরই অভ্যন্তরীণ বাছাইয়ে তৃতীয় হওয়াতে জাতীয় প্রতিযাগিতায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা হারান। পুরুষদের ১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম ও দ্বিতীয় যারা হয়েছেন তারা দু’জনেই জাতীয় রেকর্ড টাইমিং করেছেন। মহিলা বিভাগে নৌবাহিনীর শিরিন আক্তার ১১.৮০ সেকেন্ড নিয়ে স্বর্ণ, একই দলের সোহাগী আক্তার ১১.৯০ সেকেন্ড নিয়ে রৌপ্য এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শরীফা খাতুন ১২.৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে জিতেছেন তাম্রপদক। পুরুষ বিভাগে নৌবাহিনীর মোহাম্মদ ইসমাইল ১০.২০ সেকেন্ড নিয়ে স্বর্ণ, বিকেএসপির হাসান মিয়া ১০.৩০ সেকেন্ড নিয়ে রৌপ্য এবং নৌবাহিনীর রাকিবুল হাসান ১০.৪০ সেকেন্ড নিয়ে তাম্রপদক লাভ করেন। স্বর্ণজয়ের পর শিরিন আক্তার বলেন, ‘সুলতানা পারভীন লাভলী আপার রেকর্ড ভেঙ্গে ভাল লাগছে। উনি সাতবারের দ্রুততম মানবী ছিলেন। আমি এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো (সামারে চারবার, ন্যাশনালে চারবার) দ্রুততম মানবী হলাম। এ জন্য খুব খুশি লাগছে।’ সাতক্ষীরার মেয়ে শিরিন বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনই হচ্ছে আমার সফলতার কারণ। অনেকদিন ধরেই বিকেএসপিতে ট্রেনিং করেছি কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফির কাছে। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আশাকরি ভাল টাইমিং হয়েছে। আমার এই সাফল্যের পেছনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যাপক অবদান আছে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা থাকার কারণে প্রতিযোগিতা শুরুর শেষ একমাস শিরিনকে বিকেএসপি থেকে অনুশীলন করতে হয়েছে। এ জন্য বিকেএসপি কর্তৃপক্ষকেও অশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। শিরিনের পরবর্তী লক্ষ্য আসন্ন সাফ গেমসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। ‘এ জন্য আমরা বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন থেকে ভাল সহযোগিতা পাচ্ছি। আশাকরি সাফ গেমসে ভাল টাইমিং করে স্বর্ণপদক জিততে পারব।’ প্রতি বছরই মেজবাহ আর শিরিন ১০০ মিটার বিজয়ী হন। কিন্তু এবার মেজবাহ এই আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে শিরিন বলেন, ‘তাকে মিস করছি। তবে নৌবাহিনীরই আরেকজন এই ইভেন্টে বিজয়ী হওয়ায় খুশি হয়েছি।’ শিরিন আশা করেন ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও তিনি স্বর্ণপদক জিততে পারবেন। যদিও শিরিন দাবি করেছেন, তিনি সবচেয়ে বেশি ও টানা আটবার দ্রুততম মানবী হয়েছেন; কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে এই রেকর্ডটি হচ্ছে সাবেক স্প্রিন্টার নাজমুন নাহার বিউটির। বিউটি ২০০৫-২০১৩ পর্যন্ত টানা নয়বার জাতীয় পর্যায়ে দ্রুততম মানবী হন। তাছাড়া সার্বিকভাবে মোট ১১ বার দ্রুততম মানবী হয়েছেন। এছাড়া সাবেক এ্যাথলেট ফিরোজা বেগম ১০ বার দ্রুততম মানবী হন। শিরিন হয়তো এই তথ্য-পরিসংখ্যানটি জানেন না। মোহাম্মদ ইসমাইল স্বর্ণজয়ের পর বলেন, ‘কার্ল লুইস লং জাম্পের মতো ১০০ মিটারেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিলেন। বিষয়টি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সবসময় ভেবেছি, তারা পারলে আমি পারব না কেন? সবসময় চিন্তা করতে হবে ওপরের লেভেলে। তাদের চেয়ে আমি উচ্চতায় কম হতে পারি, কিন্তু যথাযথ পরিশ্রম-অনুশীলন করলে এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। প্র্যাকটিস মেক্স এ ম্যান পারফেক্ট। তাছাড়া বাংলাদেশ অলিম্পিকে এ্যাথলেট পাঠালে স্প্রিন্টারই পাঠায়। এটা ভেবেও লং জাম্পার থেকে স্প্রিন্টার হয়েছি ছয় মাস আগে। বলতে পারেন আমি কারুর দ্বারা নয়, নিজের দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছি। এটা আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। অবশ্য শুক্রবার লং জাম্পেও খেলব।’ ইসমাইল আরও বলেন, ‘আমরা নৌবাহিনীর দু’জন আজ পুরুষ ও মহিলা বিভাগে ১০০ মিটার জিতলেও বাস্তবতা হচ্ছেÑ নৌবাহিনীতে অনুশীলনের জন্য কোন মাঠ নেই। ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভোর ৬টায় আমাদের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এসে অনুশীলন করতে হয়। ফেরার সময় কয়েক ঘণ্টার জ্যাম ঠেলে ফিরতে হয়। এটা একটা বিরাট সমস্যা।’ বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানায়। বয়স ২৬। ইসমাইল মূলত লংজাম্পার। এর আগে জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে ৮টা স্বর্ণ জিতেছেন। এবারই প্রথম ১০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিলেন এবং অভিষেকেই প্রথম হন, তাও আবার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হাসান মিয়াকে হারিয়ে! ‘মনে হচ্ছে ১০০ মিটারের এই সাফল্যের কাছে লংজাম্পের ৮ সোনা জেতার কৃতিত্ব কিছুই না। শ্রদ্ধেয় কোচ কিতাব আলীও বলেছেন, ১০০ মিটার গোল্ড না পেলে এ্যাথলেটিক্সে কোন মজাই থাকে না।’ অনেক স্প্রিন্টারই আছেন, যারা শুরুতেই তাক লাগানো সাফল্য পেয়ে পরে হারিয়ে গেছেন। আশাকরি আমার বেলায় তেমনটা হবে না। নিয়মিত অনুশীলন করে ফিটনেস-ফর্ম ধরে রাখতে পারলে আশাকরি আগামী বছরগুলোতেও ১০০ মিটার স্প্রিন্টের এই সাফল্য ধরে রাখতে পারব।
×