ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আসবে ফেব্রুয়ারিতে

সৌদি বিনিয়োগ ॥ সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

সৌদি বিনিয়োগ ॥ সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় আসছে

এম শাহজাহান ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় সৌদি আরব এদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তায় সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত সরকারী চারটি দফতরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসছে। প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী ড. মজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি। এছাড়া সৌদির অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমন্ত্রী, দেশটির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) এবং সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসডিএফ) শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসছেন। দুদিনের সফরে প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য, শিল্প ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি প্রতিনিধি দলের সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও করুণীয় নির্ধারণে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। বিডার পরিচালক মোঃ আরিফুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৭-১৮ অক্টোবর সৌদি আরব সফরকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এরই ধারাক্রমে আগামী ১০-১১ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী, অর্থনীতিক ও উন্নয়নমন্ত্রী এবং সৌদি আরবের পিআইএফ ও এসডিএফের প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশ সফর করবেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন ও বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সৌদি বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়াবলী বিডা কর্তৃক মনিটরিংয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে, সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিসংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে চলতি মাসের ৯ জানুয়ারি একটি প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের করুণীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মোঃ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করা হবে । জানা গেছে, সৌদি আরব বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরকালে এ নিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের পর সৌদি বিনিয়োগকারীরা কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এমওইউ অনুযায়ী দেশটির আলফানা কোম্পানি বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করবে। ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স নামের একটি সৌদি প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কারখানার মানোন্নয়ন করে কাফকো মডেলে প্লান্ট নির্মাণ করবে। এছাড়া দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিবছর বাড়ছে। চলতি বছর সৌদি আরব থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করেছে বাংলাদেশ। সার আমদানিতে সম্প্রতি দেশটির রাজধানী রিয়াদে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ও সৌদি আরবের বিখ্যাত সার ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সৌদি এ্যারাবিয়া বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (সাবিক) মধ্যে ওই চুক্তি হয়। রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আবদুল হাসান সম্প্রতি জানিয়েছেন, সৌদি-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উন্নয়নে এটি বড় ধরনের অগ্রগতি। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১১০ কোটি মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বছরে সৌদি আরবে প্রায় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি হয়। অন্যদিকে সৌদি আরব থেকে আমদানির পরিমাণ ৮৫ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশে অপরিশোধিত তেল, সার ও পেট্রো-কেমিক্যাল রফতানি করে সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, মাছ, চামড়াজাত পণ্য ও খাদ্য আমদানি করে রিয়াদ। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরের সময় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। ওই সময় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ওই আলোচনায় শ্রম খাত, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহায়তা, মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য ও সমৃদ্ধি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয় প্রাধান্য পায়। এদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সঙ্গে একজোট হয়ে লড়াই করবে বাংলাদেশ। সংস্কৃতি, শিক্ষা, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতেও দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। ইতোমধ্যে বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কাজ করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার ও নার্সসহ দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে সরকার কাজ করছে। তাদের এবারের সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক, হালকা প্রকৌশল, হালাল মাংসসহ বিভিন্ন সামগ্রী আমদানি করতে চায় সৌদি আরব। তিনি বলেন, একটা সময় বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল সম্পদশালী দেশগুলোর অনুদান ও সহায়তার ওপর। এখন তার পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা এখন বিনিয়োগ চাইছি। কারণ, বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
×