ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরঙ্কুশ আওয়ামী মন্ত্রিসভা ॥ দৃশ্যমান নবদিগন্ত

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

নিরঙ্কুশ আওয়ামী মন্ত্রিসভা ॥ দৃশ্যমান নবদিগন্ত

সুদীর্ঘকাল পর বাংলাদেশে চমকপ্রদ নিরঙ্কুশ আওয়ামী মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। দেশের মানুষ ভাবতে পারেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতিকে এ রকম একটি বিশুদ্ধতম আওয়ামী মন্ত্রিসভা উপহার দিতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যদিও একটু ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মন্ত্রিসভা গঠনে চমকপ্রদ কিছু ঘটবে। এ নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে কিছুটা জল্পনা-কল্পনাও ছিল। তবে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নাম যখন একে একে টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে, সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে। কারও হিসাব মেলেনি। দেশের মানুষ বুঝতে পারে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে তার মূলধারায় নিয়ে গেছেন, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এ রকম বিশুদ্ধতম আওয়ামী মন্ত্রিসভা একমাত্র বঙ্গবন্ধুই গঠন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ৩০ ডিসেম্বর (২০১৮) অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তবে নৌকার এ ধরনের বিজয় নতুন কোন ঘটনা নয়। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৫৪, ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালের নৌকার বিজয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে মাত্র। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিশাল বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগের নৌকা নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়নি। যার ফলে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে হয়। এরপর ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয়, সেটি ছিল নিরঙ্কুশ আওয়ামী লীগ সরকার। সেই সরকারের অধীনে প্রণীত হয় ১৯৭২ সালের সংবিধান। ৭২ সালের সংবিধানের আলোকে ১৯৭৩ সালে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সে নির্বাচনেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলের অস্তিত্বই ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর একই বছর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে জেলের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকা- ছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন বলে ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের নির্মম শিকার তাঁরা হননি। বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের ওপর চরম দুর্যোগ নেমে আসে। জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনে আওয়ামী লীগ ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগে দেখা দেয় নেতৃত্বের কোন্দল। ১৯৮১ সালের দিকে নেতৃত্বের কোন্দলে আওয়ামী লীগ এক মহাসঙ্কটের সম্মুখীন হয়। সেই দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে প্রতিকূল পথ অতিক্রম করে আজকের সাফল্যে এসেছে। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করে বটে- তবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হয়, আওয়ামী লীগের সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পার্লামেন্টে ছিল না। যার ফলে জাসদের আসম আবদুর রবকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হয়। এরপর ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। বিজয় নিশ্চিত করবার লক্ষ্যে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট এবং মহাজোট। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী ১৪ দলীয় জোট তথা মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে মন্ত্রিসভায় ১৪ দলীয় জোট এবং মহাজোটের কিছু নেতাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ কৌশলগতভাবে ১৪ দলীয় জোট এবং মহাজোটকে সঙ্গে রাখে। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর ১৪ দলীয় জোটের কিছু নেতাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হয়। মহাজোটের বড় দল হিসেবে জাতীয় পার্টির কতিপয় নেতাকে যেমন মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হয়, একই সঙ্গে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকাও পালন করে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ কৌশলগতভাবে ১৪ দলীয় জোট এবং মহাজোটকে সঙ্গে নিয়েই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। জাতীয় পার্টি তার নিজস্ব দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচন করে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রাধান্য দেয়ার ফলে এবারের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ তথা নৌকার পক্ষে এক অভূতপূর্ব গণজোয়ার সৃষ্টি হয়, যেমন গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৫৪ সালে, ১৯৭০ সালে এবং ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে। গণজোয়ারের মুখে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের মতো বিধ্বস্ত হয়ে যায়। বিএনপি জোট তথা ঐক্যফ্রন্ট যদি নিজেদের ভুল উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়, তাদের রাজনৈতিক পরিণতি মুসলিম লীগের মতো হয়ে যাবার সমূহ আশঙ্কা রয়ে গেছে। বিএনপি জোট তথা ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে চলে আসবে, এমনটি হয়ত অনেকেই ভাবতে পারেনি। কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে যদি গণজোয়ার সৃষ্টি হয়, নির্বাচনী ফলাফলের জরিপ অনেক ক্ষেত্রেই মেলে না। এবারের নির্বাচনে তেমনটি ঘটে গেছে। নির্বাচনী জোয়ার এবার পুরোটাই ছিল আওয়ামী লীগের পক্ষে। জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকায় দলটি চরম লাভবান হয়েছে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও এবার দলটি গৃহপালিত বিরোধী দল না হয়ে সংসদে প্রকৃত অর্থেই একটি বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জাতীয় পার্টির এই সিদ্ধান্তকে দেশের মানুষ একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছে। জাতীয় পার্টির এই সিদ্ধান্তটি সবচেয়ে নির্ভার করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে না গেলে নির্ভেজাল বিশুদ্ধতম আওয়ামী মন্ত্রিসভা গঠনের কাজটি বোধ করি সহজ হতো না। মন্ত্রিসভায় বামজোটের কোন নেতাকে এ মুহূর্তে স্থান দেয়া হয়নি। শুধু বামজোট নয়, কোন জোট থেকেই মন্ত্রিসভায় কাউকে নেয়া হয়নি, তাতে মূলধারার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খুশি হওয়ার কথা। বাম ঘরানার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী ঘরানার নেতাকর্মীদের মতাদর্শগত একটা পার্থক্য আছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমি সৃষ্টির ক্ষেত্রে জাসদের একটি বড় ভূমিকা ছিল, এমন অভিযোগ মূল ধারার আওয়ামী নেতাকর্মীরা প্রায়ই উত্থাপন করে থাকেন। জাসদ বা ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের হাতে এক সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঞ্ছিত, নির্যাতিত হয়েছেন, এ কথাও অসত্য নয়। যে সমস্ত বামপন্থী নেতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এক সময় কটূক্তি করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এসব ঘটনায় মূলধারার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিদারুণ মর্মপীড়া অনুভব করতেন। এবার বিশুদ্ধ আওয়ামী মন্ত্রিসভা গঠনের ফলে তাঁদের সে মর্মপীড়া কেটে যাবার কথা। যাঁরা এতদিন অভিযোগের সুরে বলতেন বর্তমানের আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়, তাঁরা আর এখন সে অভিযোগ তুলতে পারবেন না। কাজেই সম্প্রতি গঠিত বিশুদ্ধ আওয়ামী মন্ত্রিসভার দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করা যায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বর্তমান আওয়ামী লীগকে মূলধারায় ফিরিয়ে নেয়ার কাজে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হোক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী কোন মানুষের কাছে তা কাম্য হতে পারে না। কারণ, আদর্শগতভাবে জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। এই দুটি দলের যাঁরা প্রতিষ্ঠাতা, জেনারেল জিয়া এবং এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তাঁরা পদদলিত করেছেন, ৭২ সালের সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন। এই দুই জেনারেল বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে ধর্মনির্ভর রাষ্ট্র, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র থেকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করে ফেলেছিলেন। গণতন্ত্রকে সামরিকতন্ত্র, বাঙালী জাতীয়তাবাদকে বাদ দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কায়েম করেছিলেন। জেনারেল জিয়া জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এ কথা ঠিক। কিন্তু সামরিক আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে তিনি জয় বাংলা এবং জয় বঙ্গবন্ধু বর্জন করেছিলেন। জয় বাংলা শুধু স্লোগান নয়, জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান দর্শন। যে মুক্তিযোদ্ধা জয় বাংলা বর্জন করতে পারেন, তাঁকে আর মুক্তিযোদ্ধা বলা সমীচীন হবে না। বিএনপির মধ্যে যে সমস্ত খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাঁরা সবাই জেনারেল জিয়া অনুসারী। জেনারেল জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মূলত নিজের জীবন রক্ষার জন্য। পরিস্থিতি তাঁকে বাধ্য করেছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তাঁর প্রকৃত চেহারার বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বিএনপির মধ্যে যাঁরা সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাঁদের সবার ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। জেনারেল জিয়া যেভাবেই হোক, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু জেনারেল এরশাদ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে জেনারেল এরশাদের কোন রকম মাথাব্যথা নেই। তিনি ক্ষমতায় থাকতে পছন্দ করেন। ক্ষমতায় থাকতে হলে যে পথে চলতে হয়, তিনি সেই পথে চলে অভ্যস্ত। তিনি যতদিন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে করে গেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা নামক যে সমস্ত আদর্শ আমাদের মূল সংবিধানে আছে, এর কোনটাতেই জেনারেল এরশাদ বিশ্বাসী নন। এসব আলোচনা থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রতীয়মান হয়, জেনারেল জিয়ার বিএনপি এবং জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টি কোনক্রমেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের দল নয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে সমগ্র জাতির দাবি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাঁরা থাকবেন তাঁদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী দল হতে হবে, অপরদিকে বিরোধী দলে যাঁরা থাকবেন, তাঁদেরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুসারী হতে হবে। এটি এখন জাতীয় দাবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এই জাতীয় দাবি পূরণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এটাই জাতির প্রত্যাশা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দেশের মানুষ বিএনপি এবং জামায়াত জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এটি দৃশ্যমান। এই প্রত্যাখ্যান পুরোপুরি আদর্শিক। বিএনপি অনেকটা মুসলিম লীগের আদর্শে গড়ে ওঠা দল। পাকিস্তান অর্জনে মুসলিম লীগের অবদান অস্বীকার করবার উপায় নেই। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানকে যেমন বর্জন করেছে, মুসলিম লীগকেও বাঙালী জনগোষ্ঠী প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি যেহেতু মুসলিম লীগের আদর্শের অনুসারী, বাংলাদেশের মানুষ আজ বিএনপিকে সেভাবেই মূল্যায়ন করতে বসেছে। কাজেই ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুসলিম লীগ যেমন হারিয়ে গেছে, বিএনপিও সেই রকম একদিন হারিয়ে যাবে। এবারের সংসদ নির্বাচনে সেই আলামত দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগিতা না পেলে জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টিও সংসদ নির্বাচনে এতটা ভাল করতে পারত না। সবদিক বিবেচনা করে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর দিকেই দৃষ্টি দেয়া বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে ১৪ দলের শরিক বাম দলগুলো আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের খুব কাছাকাছি এসে গেছে। বাম দলের নেতাকর্মীদের তাঁদের দল গোছানোর কাজে আরও বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। সূর্যের কাছ থেকে আলো ধার নিয়ে চন্দ্র পৃথিবীকে আলোকিত করছে, তাতে চন্দ্রের মহিমা যেমন ক্ষুণœ হচ্ছে না, তেমনি আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে বামদলগুলো সংসদে যদি দ্বিতীয় বৃহত্তর দল তথা বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, জাতির জন্য তা হবে কল্যাণকর। লেখক : সাবেক ভিসি, রাজশাহী বিদ্যালয়
×