ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিলিকন ভ্যালি, যুক্তরাষ্ট্র

বছরের বিশ্বসেরা প্রযুক্তি শহর

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

বছরের বিশ্বসেরা প্রযুক্তি শহর

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিস্কোতে অবস্থিত সিলিকন ভ্যালি। ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই জায়গা সানফ্রান্সিস্কো এবং স্যান হোসের সমুদ্র আর পাহাড়ে ঘেরা একটি স্থান। তবে এটি নিছকই একটি স্থান নয়, বরং পৃথিবীর তথ্য প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্লোবাল সেন্টার বলা চলে। এমনকি বর্তমানে সিলিকন ভ্যালিকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জন্মস্থান হিসেবে পরিগণিত করা হয়। আধুনিক বিশ্বের প্রাণকেন্দ্রও বলা চলে একে। এখানে রয়েছে সহস্রাধিক স্মার্টআপ প্রতিষ্ঠান, রয়েছে ফেসবুক, এ্যাপল, গুগল, সিসকো সিস্টেমস, এ্যাডোবি, ইবে, ইন্টেল, এইচপিসহ নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। এগুলোর জন্মও ঘটেছে সিলিকন ভ্যালিতে। টেকনোলজিতে পেশাজীবীদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই শহরটি। প্রতিনিয়ত নতুন আবিষ্কারে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে তাদের হাত ধরে। সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিবিদরা ২৪ ঘণ্টা শুধু প্রযুক্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ১৯৯৫ সালের পর সিলিকন ভ্যালি হয়ে ওঠে ইন্টারনেট অর্থনীতি এবং উচ্চ প্রযুক্তি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে। টরন্টো, কানাডা প্রযুক্তি ব্যবসায়ের ৪০ শতাংশ হয় কানাডার টরন্টো শহরে। আর তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রযুক্তি চিন্তায় বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর এটি। দেশটির মধ্যে আবার বৃহত্তম শহর এটি তেমনি উত্তর আমেরিকারও চতুর্থ বৃহত্তম শহর টরন্টো। এ জন্য একে উত্তরের সিলিকন ভ্যালিও বলা হয়। টরন্টোকে মূলত আধুনিক উদ্ভাবনের অন্যতম প্ল্যাটফর্মও বলা চলে। বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানেরও আইকন এটি। এই শহরে ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, গুগল ছাড়াও বেশ কিছু নামী-দামী প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। বিশ্বমানের গবেষণা কেন্দ্র থাকায় এটি যে কারও জন্য প্রযুক্তি বিষয়ে বিশ্বস্ত গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এটি শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে তা কিন্তু নয় বরং স্বচালিত যানবাহন থেকে শুরু করে জীবন বাঁচানোর অত্যাধুনিক ডিভাইসের ব্যবহারে রেখেছে উল্লেখযোগ্য অবদান। আইফোন এমন একটি এ্যাপ তৈরি করেছে যা তাৎক্ষণিকভাবে হৃদরোগ এবং স্নায়ুতন্ত্র বিশ্লেষণ করে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিতে সক্ষম। এ ছাড়াও বছরজুড়ে কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ কর্মক্ষেত্র তৈরি করে থাকে। টোকিও, জাপান প্রযুক্তি বিশ্বে জাপানের রাজধানী টোকিওর অবস্থান অনেক এগিয়ে। শহরটিতে নতুন কেউ পা দিয়েই টের পাবেন ভিন্নতা। এখানকার দ্রুততম ট্রেন সিস্টেম থেকে শুরু করে স্মার্টফোনের প্রযুক্তি, রোবোটিক্স এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বাধুনিক প্রয়োগ আপনাকে হতবাক করবে। তাদের রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি জীবন বীমা কোম্পানিতে মানুষের বদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্থান করে নিয়েছে। ২০২০ সালের অলিম্পিক খেলার আসরে নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করবে রোবোট। টেক গ্যাজেট, পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল ফোন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পণ্য ও দ্রæতগতির যানবাহন তৈরিতে এই শহরটির জুড়ি নেই। ভবিষ্যতের উন্নত প্রযুক্তি শহরকে নেতৃত্ব দেবে এই টোকিও। প্যানাসনিক, নিক্কন, সনিসহ বেশ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এখানে। সিঙ্গাপুর সিটি, সিঙ্গাপুর এশিয়ার মধ্যে প্রযুক্তিতে শীর্ষ শহরের তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে সিঙ্গাপুর সিটি। সমগ্র বিশ্বে তার অবস্থান তৃতীয়। মাত্র ৪০ বর্গকিলোমিটারের ছোট এই দেশের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ। শহরের মেরিনা বে স্যান্ড এবং গার্ডেন বাই দ্য বে স্থাপনা দুটি তারই উদাহরণ। অধিকাংশ দোকান ও শপিং সেন্টার ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত। গবেষণা মতে, বেশিরভাগ প্রোগ্রামার এবং উদ্যোগী পুঁজিপতির বাড়ি রয়েছে এই শহরে। তবে এই শহরটি ক্রমাগত নতুন অবকাঠামো এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শহর হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতের সবচেয়ে উচ্চ প্রযুক্তির শহর হতে চলেছে। এমআইটিএর সঙ্গে অংশীদারিত্বে দেশটিতে স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট চালু হতে যাচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী গাড়িতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার পরিলক্ষিত হবে। সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের প্রযুক্তির রাজধানী হিসেবে খ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী শহর সিউল। হাই টেক প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর এটি। এটি এমন একটি শহর, যেখানে অধিকাংশ মানুষ কাজ করে হাই টেক কোম্পানিতে। শহরটির অলিগলি, পার্ক, রাস্তাসহ ১০ হাজার ৪৩০টি স্থানে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াইফাই ব্যবস্থা। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল আয়ের অধিকাংশ আসে এই শহর থেকেই। সিউলে এলজি, স্যামসাং, হুন্দাই-কিয়াসহ ১০০-এর বেশি বিশ্বমানের কোম্পানির প্রধান কার্যালয় রয়েছে। এখানকার ৯০ ভাগ কোরিয়ান দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড লাইন ব্যবহার করে। যার গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ মেগাবাইট। শহরের প্রতিটি জায়গায় নাগরিক ও পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ। এ ছাড়াও ২০২২ সালের মধ্যে সিউলকে প্রযুক্তিতে আরও অনেক বেশি এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা রয়েছে শহরটির নগরপিতার। এতে তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান, বাড়ানো হবে প্রযুক্তির উন্নয়ন। সিলিকন ভ্যালি, চায়না চায়নার সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিত সেনজেন হংকং লাগোয়া একটি শহর। এর আয়তন ২ হাজার বর্গকিলোমিটার। সোয়া ১ কোটি জনসংখ্যার এই শহরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- এতে রয়েছে বহু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। বিশ্বের প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা আইটি পণ্য কিনতে এখানে ভিড় করেন। ঝকঝকে সুউচ্চ ভবনে সাজানো গোছানো শহরে চলে জমকালো আলোর খেলা। পরিকল্পিত এই শহরে রয়েছে সবুজের সমারোহ। শুধু এই শহর বলেই নয় প্রযুক্তি খাতে গোটা চীনের অগ্রগতি যে কোন দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ বটে। গত বিশ বছর ধরে চীনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা ছিল না। তারা অন্যান্য দেশের প্রযুক্তি পণ্যগুলোর অনুলিপি করে অপেক্ষাকৃত সস্তায় বিভিন্ন দেশে রফতানি করছিল। এ জন্যই চীনের পণ্যগুলোকে একটু তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দেখছিল মানুষ। তবে তারা এখন মৌলিক গবেষণা এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর একটি বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে হুয়াওয়ে। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা আলিবাবা যুক্তরাষ্ট্রের এলফাবেট, ওয়ালমার্ট, আমাজন, ই-প্লেসহ বিভিন্ন অনলাইন বাজারের তুলনায় অনেক এগিয়ে। ব্যাঙ্গালুরু, ভারত ভারতের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে অভিহিত করা হয় ব্যাঙ্গালরুকে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেরও রাজধানী বলা হয় একে। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে এটি দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তির শহরও এই ব্যাঙ্গালুরু। ভারতের মোট আইটি রফতানির ৩৩ শতাংশ তৈরি হয় ব্যাঙ্গালুরু থেকে। এখানে অফিস খুলেছে মাইক্রোসফট, ইসরো, উইপ্রো, ইনফোসিস, গুগলসহ বেশ কিছু নামী-দামী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এই শহরে ২ হাজারটি বেশি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা রয়েছে। কৃষি ও উৎপাদন শিল্প থাকলেও এখানে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প রাজ্যের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। দেশের তৃতীয় জনবহুল শহর দাক্ষিণাত্য মালভূমির উচ্চভূমিতে এটি অবস্থিত। কোন এক সময় ব্যাঙ্গালুরু সবুজ চারণভূমি ও গাছ গাছালিতে ভরা। অথচ বর্তমানে এটি তথ্যপ্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি এটি বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানেরও প্রাণকেন্দ্র। যেমন- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট ব্যাঙ্গালুরু এখানে অবস্থিত। ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভারতের আইটি শিল্পের প্রায় অর্ধেক ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থিত। ১৯৮০ সালের দিকে বেঙ্গালুরু যাত্রা শুরু করে। সেই দশকে ব্যাঙ্গালরুতে কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট প্রথম বিদেশী কোম্পানি হিসেবে ব্যাঙ্গালুরুতে অফিস খোলে। বিশ্বের শীর্ষ আইটি সেবা কোম্পানির পাঁচটির চারটিই ভারতভিত্তিক। এই শহর ভারতের আইটি বিশেষজ্ঞ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রধান আকর্ষণ। বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানি অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্যাঙ্গালুরুতে কাজ করতে অনেক আগ্রহী। তারা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের তুলনায় এক- চতুর্থাংশ কম খরচে অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন আইটি কর্মীদের দ্বারা কাজ করাতে পারেন। ব্যাঙ্গালুরু, শুধুমাত্র আইটি শিল্পের ওপর প্রসিদ্ধ নয়। অন্যান্য প্রধান শিল্প যেমন- বিমান, ইলেকট্রনিক্স, জৈবপ্রযুক্তি এবং মেশিন তৈরির কারখানাও রয়েছে এখানে। সর্বোপরি ব্যাঙ্গালরু“ ভারতের আউটসোর্সিংয়ের কেন্দ্রবিন্দু এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আউটসোর্সিং গন্তব্যগুলোর একটি। নতুন আইটি কোম্পানি এ শহরে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখনো কখনো এই স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো সামান্য মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন পশ্চিমা কোম্পানি দ্বারা অর্থায়িত হয়। স¤প্রতি অনেক ভারতীয় আইটি বিশেষজ্ঞ বিদেশী অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যাঙ্গালুরুতে নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করছে। আইটি ডট কম ডেস্ক
×