ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলিন্ডার গ্যাস দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

সিলিন্ডার গ্যাস দুর্ঘটনা

মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে জ্বালানি সম্পদ গ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক ব্যবস্থায় গ্যাস শুধু রান্নার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, কল-কারখানা, ক্ষুদ্র ও ভারি যানবাহন চালনায় এই বিশেষ জ্বালানি মাধ্যমটি সারাদেশে সম্প্রসারিত। এর বহুল ব্যবহার যেমন প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাচ্ছে, পাশাপাশি অনেক অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনাও জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। লাইনের গ্যাসের স্বল্পতার কারণে সিলিন্ডার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। কিন্তু পাশাপাশি এই গ্যাসের যথাযথ ব্যবহারের ওপর তেমন কোন সচেতনতা তৈরি হতে না পারার কারণে সমূহ দুর্ঘটনাকে এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ সম্পর্কে বিস্ফোরক অধিদফতর এবং ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে এমন মতও দেয়, ত্রুটিমুক্ত সিলিন্ডারে কোনভাবেই আগুন লাগার কথা নয়। গ্যাস বিস্ফোরণের পর পরই সিলিন্ডারকেই প্রথমে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু উপযুক্ত এমন কোন আলামত মেলেনি যাতে গ্যাস সিলিন্ডারকেই দায়ী করা যেতে পারে। ফলে ধারণা করা হয় সিলিন্ডারের রেগুলেটর এবং পাইপের অসাবধান ব্যবহার থেকে গ্যাসের আগুন লেগে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, গ্যাসের বাল্বের লিকেজ থেকেও আগুন লেগে যায় যা কেবল ব্যক্তিক সাবধানতাই নয়, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোরও দায়বদ্ধতা বিবেচনায় আনা সঙ্গত। কারণ প্রতিষ্ঠান থেকে একটি সতর্কমূলক বার্তার মাধ্যমে এই সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহারের ওপর কিছু নিয়মনীতি গ্রাহকের কাছে স্পষ্ট করা অত্যন্ত জরুরী। সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করলে এই সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেড়ে যায, ফলে এই এলপিজি হয়ে ওঠে রান্নাঘরের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি। উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রায় জ্বালানির ক্ষেত্রেও এসেছে সময়োপযোগী আধুনিক সংযোজন। ফলে শুধু শহরেই এই এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে না, গ্রামগঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এর চাহিদা প্রতিনিয়তই সম্প্রসারিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আধুনিক জ্বালানি বিষয়ে লোকের কোন ধারণা থাকে না বলে এই রকম অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার মোকাবেলা করতে হয়। যদিও জ্বালানি বিভাগ কর্তৃক অনুমোদন পেয়েই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে আইনী ক্ষমতা পায়। সেভাবে গ্রাহকদের কাছে এই বিশেষ জ্বালানি প্রক্রিয়াটি নিয়ে আসা হয়। সঙ্গে এর নিরাপদ ব্যবহারের ব্যাপারে তেমন কোন শর্ত দেয়া থাকে না যা অতি প্রাসঙ্গিক। সিংহভাগ গ্রাহক রেগুলেটর, বাল্ব কিংবা পাইপের ব্যাপারে তেমন কিছু জানেও না। ফলে দুর্ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যাপারেও একেবারে অজ্ঞ। গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মাথায় রেখে গ্রাহক সেবাকে নিশ্চিত এবং আরও নিরাপদ করে তুলতে হবে। দুর্ঘটনাকবলিত গ্যাস সিলিন্ডার, রেগুলেটর, হোস পাইপের ওপর বিভিন্ন সময় তদন্ত করে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের কোন চিহ্ন খুঁজে না পাওয়া। তা হলে ধরে নেয়া যায় গ্যাস সংক্রান্ত আরও অন্য মাধ্যমগুলোকে পরীক্ষার আওতায় এনে তদন্ত করা দরকার। কোথাও কোন গ্যাস লিকের কারণ ঘটতে পারে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। সঙ্গে নিরাপদ ব্যবহারের উপযোগী করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সতর্কতামূলক বার্তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া। এভাবে যে কোন দুর্ঘটনাকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা যায়। সিলিন্ডার, রেগুলটার, বাল্ব এবং পাইপ প্রতি বছরই একবার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সঙ্গত। ত্রুটিপূর্ণ হলে পাল্টানোর ব্যবস্থাও জরুরী। অনুমোদন কর্তৃপক্ষ খেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তার চেয়েও ব্যবহারকারীদেরই অনেক বেশি সাবধান আর সচেতন হয়ে এই জ্বালানি ব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে হবে।
×