ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশাল ৩ ও ৬ আসন মহাজোটকে দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

বরিশাল ৩ ও ৬ আসন মহাজোটকে দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ঘেরা সংসদীয় আসনের বরিশাল ৩ ও ৬ আসন দুটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ইতোমধ্যে এ দুটি আসন থেকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পেতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবি, আসন দুটি মহাজোটকে ছেড়ে দেয়ার কারণে বিগত দশ বছর তারা নির্বাচনী এলাকায় বিরোধী দলের মতো বসবাস করেছেন। সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, আড়িয়াল খাঁ নদীর বিচ্ছিন্ন বরিশালের বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা। এ দুই উপজেলাকে ঘিরেই বরিশাল-৩ আসন আর জাতীয় সংসদের ১২১ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪১৪ জন ভোটারের এ আসনে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের পিতৃভূমি। এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান থাকা সত্ত্বেও বিগত দুটি নির্বাচনে এখানে বড় মাপের কোন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে না থাকায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটি মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি এবং ২০১৪ সালে ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল-৩ আসনটি নিজেদের ঘরে উঠিয়ে নিতে দুই বারের মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান বেশ শক্তিশালী করেছেন তরুণ নেতা আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ মিজানুর রহমান। বছরের পর বছর ধরে তিনি এলাকায় নানা উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও বেশ সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একত্রিতকরণের মাধ্যমে তিনি (মিজানুর রহমান) শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ইতোমধ্যে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর জমা দিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্ত নির্বাচন হলে এ আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ টিপু সুলতান। যদিও এরই মধ্যে এ আসনে টিপু সুলতানের নাম অনেকটাই আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ার্কার্স পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু যুব মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোঃ আতিকুর রহমানও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাচ্ছেন। রাশেদ খান মেননের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আতিকুর রহমান দলীয় সমর্থন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলেও ঘোষণা করেছেন। এলাকায় নানা উন্নয়ন কর্মকা-, রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ মাধ্যমেও তিনি গড়ে তুলেছেন আলাদা ভাবমূর্তি। এছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এখানে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু, জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা মুন্সী ও মুলাদী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল্লাহ হারুন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন রাশেদ খান মেননের বোন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, অপর ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাবেক সাংসদ মোশাররফ হোসেন মঙ্গু ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস ছত্তার খান। মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টি এবং বিএনপিতে তীব্র কোন্দল থাকায় এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী মিজানুর রহমান মিজান দলীয় মনোনয়ন পেলে এবারই সর্বপ্রথম বরিশাল-৩ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে ওঠার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। এবার এখানে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ঘোষণা করা না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগের এককপ্রার্থী দেয়ার দাবিতে ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দলীয় নেতৃবৃন্দ। এ আসনে বর্তমানে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৫৯ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ৭৮৬ ও নারী ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭৩ জন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার বলে দেয় এখানে দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি কতটা মজবুত। তারপরেও জাতীয় নির্বাচনে জোটের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সবসময় আসনটি ছেড়ে দিচ্ছে জাতীয় পার্টির কাছে। বর্তমানে বরিশাল-৬ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা আমিন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব) আব্দুল হাফিজ মল্লিক ও সাবেক সংসদ প্রয়াত মাসুদ রেজার স্ত্রী জেলা পরিষদের সদস্য আইরীন রেজা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী যেই হোক আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ঘোষণা করতে হবে। নতুবা স্বতন্ত্র প্রার্থীর আবির্ভাব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
×